যুব সংঘের এস.এম ইকবাল যুব সংঘের এস.এম ইকবাল - ajkerparibartan.com
যুব সংঘের এস.এম ইকবাল

4:09 pm , October 20, 2023

মুকুল দাস ॥ সাংবাদিক আইনজীবি এসএম ইকবাল আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। গতকাল বিকেল পাঁচটায় তিনি অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন। দ্বিতীয় গন্তব্যে। যেখান থেকে কেউ আর আর কোনদিন ফিরে আসেনা। কলেজ জীবন থেকেই আমি ইকবাল ভাইকে চিনতাম। বি.এম. কলেজে তিনি আমার চেয়ে দু’বছরের সিনিয়র ছিলেন। ইকবাল ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ আমাকে প্রথম জানায় বাচিক শিল্পী আজমল হোসেন লাবু। উনসত্তর সালে ইকবাল ভাইয়ের নেতৃত্বে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। নাম সদররোড যুবসংঘ। কালীবাড়ি রোডের মুখে জগাদত্তের মিষ্টির দোকানের পেছনে ছিল যুব সংঘের কার্যালয়। প্রজিৎ কুমার সেন আসত কালীবাড়ি রোডের চন্ডীসাদন থেকে। আমি যেতাম দপ্তরখানার মনীন্দ্র ভবন থেকে। এ ছাড়াও আরও অনেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে যুব সংঘে হাজির হত। পরে ইকবাল ভাইয়ের পরামর্শে আঞ্চলিকতা পরিহার করে সদর রোডের বদলে বরিশাল যুব সংঘ নামকরণ করা হয়। তখন যুব সংঘের সঙ্গেঁ যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে ডা: এস.সি রায়, নুরুল ইসলাম, বলহরি সাহা, এসএম ইকবাল, মিন্টু বসু, হেলাল উদ্দীন, এনায়েত হোসাইন মিলন, মুকুল দাস, ওয়াহিদ জামাল কচি, নজরুল ইসলাম চুন্নু, ফরিদ খান, শাজাহান, সামসুল আলম, মহিউদ্দীন আলম সহ আরো অনেকজন। যুব সংঘের শটক্রমের মধ্যে ছিল নাটক মঞ্চায়ন, পটুয়া কামরুল হাসানের অক্ষর বৃক্ষ আন্দোলন, রাস্তায় আলপনা দেয়াল পত্রিকা এবং লিটন ম্যাগ প্রকাশনা। যুব সংঘের নাটকগুলো রচনা করতেন নিজস্ব নাট্যকারগণ। এদের মধ্যে নুরুল ইসলাম ও বলহরি সাহার নাম উল্লেখযোগ্য। যুব সংঘের নাটকগুলোর মধ্যে “ছোট একটু বাসা” বাসর থেকে আসরে’ ছাড়াও নুর মহলে অভিনীত ডি.এল. রয়ের ‘সাজাহান’ নাটকটি এখনও মাইলস্টোন হিসেবে পরিগণিত হয়। ইকবাল ভাই নাটক করতেন না, তবে নেপথ্য থেকে পথ্য যোগাতেন। তবে যুব সংঘের একটি নাটকে ছোট একটি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। সে সময়ে যুব সংঘের প্রথম বরিশালে পথ নাটক মঞ্চায়িত হয়। যার নাম “আলোর পথযাত্রী” একাত্তরে ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্ত বরিশাল শহর থেকে ‘বাংলাদেশ’ নামের অর্ধ সাপ্তাহিক প্রকাশ নিঃসন্দেহে যুব সংঘের সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট। এই পত্রিকাটির সম্পাদক মন্ডলীতে ছিলেন এসএম ইকবাল, মিন্টু বসু ও হেলাল উদ্দীন। প্রকাশনার দয়িত্বে ছিলেন এনায়েত হোসাইন, মিলন, মুকুল দাস, ও হারেচ আহমেদ খান। মুক্তিযুদ্ধ কালে যুব সংঘের কর্মীরা ধর্মরক্ষ্মিনী সভাগ্রহকে বেছে নিয়েছিল হাত বোমা, মলোটভ ককটেল তৈরীর কারখানা হিসেবে। এখানে চিত্ত হালদার, হেলাল উদ্দীন, ইকবাল ভাই, এনায়েত হোসাইন মিলন, মিন্টু বসু সহ অনেকে অংশ নিয়েছেন। যুব সংঘের লিটন ম্যাগ কথার সম্পাদক ছিলেন ইকবাল ভাই। এই সংকলনে একুশের ভোর নামে আমার একটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। এছাড়াও ইকবাল ভাই জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘বনলতা সেন’ সম্পাদনা করেন। ‘সাপ্তাহিক বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকার কলাম লেখক হিসেবেও ইকবাল ভাইয়ের পরিচিতি ছিল। একবার বরিশাল বেতারে ঐতিহাসিক ৭মার্চের একটি অনুষ্ঠানে ইকবাল ভাইকে আলোচক হিসেবে নিয়েছিলাম। আমার সঞ্চালনায় ইকবাল ভাই খুব প্রাগম্যাটিক আলোচনা করেছেন। বলহরি সাহা স্মৃতি সংসদের নাট্যজন সম্মাননায় এবং ‘দৈনিক কালের কন্ঠের’ গুনী শিক্ষক সম্মাননায় ইকবাল ভাই আমার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কিন্তু ইকবাল ভাইর সম্পর্কে আমি আলোচনা করার সুযোগ কোথাও পাইনি। তবে গত ২০১৪ সালের ২৮ নভেম্বর মাছরাঙা টেলিভিশন ‘রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানে আমার একটি এক ঘন্টার সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেখানে আমি ইকবাল ভাইর যুব সংঘ ও বাংলাদেশ অর্ধসাপ্তাহিকের সম্পাদকতার কথা বলেছিলাম। ইকবাল ভাই বরিশাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। পরে ইকবাল ভাইয়ের প্রধান পরিচয় হয়ে দাড়ায় বাগ্মী হিসেবে। তার বাগ্মীতার সকলের মুগ্ধতা কেড়ে নেয়। ইকবাল ভাই প্রচুর পড়াশুনা করতেন। কোন পত্রিকায় আমার কোন লেখা ছাপা হলে ইকবাল ভাই পড়ে আমাকে তার অভিব্যক্তি জানাতেন। যেটা জানাতে অনেকেই কার্পন্য বোধ করেন। ইতোমধ্যে তিনি কিংবদন্তীর কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্মৃতি পদক এবং বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি পদকে ভূষিত হয়েছেন। অতি সম্প্রতি সাহিত্য বাজার গুনীজন সম্মাননা পেয়েছেন। কিন্তু অসুস্থ এবং চলাচলে অক্ষম থাকার জন্য সাহিত্য বাজার গোষ্ঠী তার অনামী লেনের বাসায় গিয়ে উত্তরীয় সম্মাননা ক্রেস্ট, সনদপত্র ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানান। ইকবাল ভাইয়ের মৃত্যুতে সাংবাদিক জগত ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অপূরনীয় ক্ষতি হল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT