বরিশাল প্রাণী সম্পদ বিভাগের রয়েছে পর্যাপ্ত সক্ষমতা: আইএলএসটি চায় বরিশালবাসী বরিশাল প্রাণী সম্পদ বিভাগের রয়েছে পর্যাপ্ত সক্ষমতা: আইএলএসটি চায় বরিশালবাসী - ajkerparibartan.com
বরিশাল প্রাণী সম্পদ বিভাগের রয়েছে পর্যাপ্ত সক্ষমতা: আইএলএসটি চায় বরিশালবাসী

3:46 pm , October 10, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী’ (আইএলএসটি) বরিশালেই হতে হবে। এটি অন্যত্র সরিয়ে নিলে অফুরন্ত ক্ষতি হবে বরিশালবাসীর। এমনটাই দাবি বরিশালের সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের। নগরীর আমানতগঞ্জের সড়কে চলতে গেলেই আইএলএসটি এর সাইনবোর্ডটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ পথে চলাচলকারী প্রতিটি মানুষের চোখেমুখে স্বপ্ন তৈরি হয়েছিলো প্রাণী সম্পদ বিভাগের এই সাইনবোর্ডটিকে ঘিরে।
অনেকটা কৌতুহল থেকেই প্রাণী সম্পদ বিভাগের হাঁস-মুরগি খামারের ভিতরটা ঘুরে দেখে বিস্মিত হতে হলো। বিশাল বড় এলাকা। প্রায় ২০ একর জমিতে ভাঙাচুরা দালানঘর ও ফাঁকা প্রান্তরের দুপাশে দুটো কচুরিপানা পরিপূর্ণ বিশাল মাঠ। হাঁস নেই, পাঁচটি ঘরে মুরগীর ডাকাডাকি আছে। তবে ঘরগুলো সবই জরাজীর্ণ। বেশকিছু ঘর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কেয়ারটেকার জানালেন, এগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হলে এই বিভাগের সেরা খামার হবে এটি। তিনি জানালেন, বর্তমানে এই খামারে প্রতিদিন গড়ে ৭/৮ শত ডিম বিক্রি হচ্ছে।
খামারের প্রবেশ পথেই প্রশাসনিক ভবন। উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বসেন এখানে। তিনি নেই প্রজেক্ট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এবং টেকনেশিয়ান আলী আকবর কাজলসহ এই তিন জন মাত্র লোকের উপস্থিতি চোখে পড়লো সোমবার দুপুরে। ভিতরে প্রবেশ করে হাতের বামে কচুরিপানা পরিপূর্ণ বিশাল মাঠটি দেখিয়ে কাজল বললেন, এটা পুরোটাই প্রাণী সম্পদ বিভাগের সম্পত্তি। এরপর তিনি নিয়ে গেলেন হাতের ডানের বিশাল আরেকটি মাঠে। সেটিও কচুরিপানা পরিপূর্ণ। ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী’ (আইএলএসটি) নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান এটি। অনেকগুলো পিলারও গাঁথা হয়েছে রাখা এখানের ফাঁকা স্থানে। এই পিলারগুলো কাজের জন্য আনা হয়েছিল বলে জানান কাজল। তিনি গত ১৮ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন জানিয়ে বলেন, এখানেই আইএলএসটি এর প্রজেক্টের কাজ শুরুর কথা ছিলো। কেন বা কি কারণে এখন আর সেটি এখানে হবে না বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রায় ৫ একর জমিতে আইএলএসটি প্রজেক্ট নির্ধারণ হয়েছিলো। এটি নির্মাণের জন্য ১০/১২ জন ঠিকাদারও নিযুক্ত হয়েছিলো বলে জানা গেল। তারপরও অজ্ঞাত কারণে এই প্রজেক্ট অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানালেন প্রাণী সম্পদ বিভাগের বরিশালের কর্মকর্তা নুরুল আলম। তিনি জানান, বরিশাল থেকে এই প্রজেক্ট যদি অন্যত্র চলে যায় এর দায়ভার সম্পূর্ণ বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। কেননা, এটি তাদের অসহযোগিতার কারণেই ঘটেছে বলে জানান প্রাণী সম্পদ বিভাগের বরিশালের কর্মকর্তা।
আশেপাশের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা, বিএনপি যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জাহান, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর রনি সহ ছুটে এলেন অনেকেই। জানা গেল অনেক অজানা তথ্য।
বিগত বছরগুলোতে হাঁস-মুরগি পালনের প্রতি ততটা যতœশীল না হলেও বর্তমান সরকারের শাসনামলের প্রথম থেকেই এ বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। করোনাকালীন সংকট ও বরিশালে সংসদ সদস্য এবং মেয়রের মধ্যের দ্বন্দ্বে আটকে যায় বরিশালের বেশিরভাগ উন্নয়ন। আর এখানে অভিযোগের আঙ্গুল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এর দিকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারী নিজস্ব তহবিলে ২০২০ সালের শেষ দিকে প্রায় ১৯১ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশাল, সিলেট ও লারমনিরহাটে ৩টি ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়ন্স এন্ড টেকনোলজি-আইএলএসটি’ স্থাপনের প্রকল্প-সারপত্র দিয়ে ডিপিপি চুড়ান্ত অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নির্বাহী কমিটি-একনেক। প্রকল্পের আওতায় বরিশাল মহানগরীর আমানতগঞ্জে সরকারী হাঁস-মুরগীর খামারের অভ্যন্তরে সরকারী খাশ ৫ একর জমি ‘আইএলএসটি’র জন্য বরাদ্ধ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ২০২১-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে ঐ বছরের শেষেভাগে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি কাজও শুরু করে। যে কারণে তাদের মালামাল এখনো পরে আছে নির্ধারিত স্থানে।
হঠাৎ করেই শোনা যায়, এ প্রজেক্ট বরিশালে হবে না, অন্যত্র এজন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। প্রজেক্টটি পিরোজপুরে চলে যাওয়ার গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।
কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র প্রাণী সম্পদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার এ পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি করছে।
বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর প্রধান উপদেষ্টা শব্দসৈনিক সাংবাদিক অরূপ তালুকদার বলেন, এটা মোটেও কোনো সুবিবেচকের কাজ হতে পারে না। এটা অনেকটা হাতে আসা উপঢৌকন পায়ে ঠেলার মতো হয়েছে। বোকা ছাড়া আর কেউই এধরণের গবেষণা প্রতিষ্ঠান হতে বাধা দেবে না। আমারতো মনে হয় প্রজেক্ট ডিরেক্টর ও মন্ত্রণালয়ের কোথাও বুঝতে ভুল হয়েছে। তারা আরেকবার বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানাবো বলে জানান সিনিয়র সাংবাদিক ও নতুন সংবাদ পত্রিকার বিভাগীয় উপদেষ্টা অরূপ তালুকদার।
এতে করে বরিশালের উন্নয়ন ও সম্ভাবনাই শুধু নয়, হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎও নষ্ট হবে বলে মনে করেন নগর চিন্তাবিদদের একজন এবং বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর উপদেষ্টা কাজী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এন্ড টেকনোলজী’র নির্মান কাজ বন্ধ হয়েছে তা প্রায় দু বছর হয়েছে। শুনেছি এটি অন্যত্র স্থানন্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের ‘সুপারিশ’ সহ পরিকল্পনা কমিশনেও পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছিলাম। তবে প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটি অন্যত্র স্থানন্তর করলে ভূমি অধিগ্রহনের পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় সহ সার্বিক প্রকল্প ব্যায় অন্তত ১০ কোটি টাকা বাড়বে বলে।
কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমি মনে করি এটি স্থানান্তরিত না করে, এখানেই সমস্যার সমাধান করে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হোক। এটি বিভাগীয় শহর বরিশালের পাশাপাশি আশেপাশের জেলার জন্যও উপকারী হবে বলে জানান কাজী মিজান।
এদিকে বিএনপি নেতা জাহান বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সরকারী হাস মুরগীর খামার ছাড়াও নগরীর উপকন্ঠে ৫০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকারী ডেইরী ফার্মের অব্যবহৃত জমিতেও ইনস্টিটিউটটি গড়ে তোলা সম্ভব।
বরিশালের উন্নয়ন সংস্থা আভাস এর পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরিশালে একটি ইনস্টিটিউট হওয়ার কথা শুনে খুবই আশাবাদী হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এতোদিনে বিভাগীয় শহর হিসেবে কিছুটা হলে সম্মান পেল বরিশাল। এখানে প্রাণী গবেষণা হবে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী তৈরি হবে। প্রাণী সম্পদ নিয়ে পড়াশুনা করতে আর বরিশালের বাইরে যেতে হবেনা। অনেক স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল। তেমনি এটি আবার সরিয়ে নেয়া হচ্ছে শুনে মারাত্মক আহত হয়েছি। এতোটাই যে এটি সম্পর্কে আর কোনো কথাই বলতে চাইনা।
কাজল আরো বলেন, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবো এটি বরিশালের নির্ধারিত স্থানেই নির্মাণ করা হোক।
প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বরিশালে আইএলএসটি প্রকল্পের জন্য ৫ একর জমি বরাদ্দ হয়েছিল। সেখানে কাজ শুরু করার জন্য বেশ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ওখানে কাজ করতে অসম্মতি জানানোর কারণে মূলত কাজটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT