3:42 pm , October 8, 2023
বরিশালের নদীরক্ষা বাধ এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত
মুরাদ আহমেদ ॥ নদী রক্ষা বাঁধ দেয়ার ফলে বরিশালের চরবাড়িয়া এলাকাটি এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। মাত্র ক’ বছর আগেও নদী ভাংগনে বিপর্যস্থ থাকা এই জনপদে এখন আনন্দের বন্য বইছে। প্রতিদিন পর্যটকের পদভারে মুখরিত এখানকার জনপদে স্থানীয়দের মধ্যে বেড়েছে কর্মসংস্থান।
মাত্র সাড়ে চার বছর আগেও বরিশাল নগরীর সাড়ে ৬ কিলোমিটার পুর্বে অবস্থিত গোটা চরবাড়িয়া এলাকাটি ছিলো কীর্ত্তনখোলার ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত। নদী ভাঙ্গনে চাপা পড়ে মারা গেছে অন্তত তিন জন। গৃহহারা হয়েছে কয়েকশ পরিবার। অথচ একটি নদী রক্ষা বাধ পালটে দিয়েছে গোটা এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি। সৃস্টি হয়েছে পর্যটন স্পট। এখানকার যে জমির দাম দিতো না কেউ, সেখানে জমির শতাংশ এখন তিন থেকে ৬ লাখ টাকা। ঘরে ঘরে সৃস্টি হয়েছে কর্ম সংস্থান। একথা জানিয়ে স্থানীয় মেম্বর জাহিদুল আলম শহীদ জানান বরিশাল সদরের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীমের একান্ত প্রচেস্টায় অশ্রু মুছে এই এলাকার মানুষ এখান হাসতে শিখেছে। এই হাসি স্থায়ী করতে আমরা আবারো জাহিদ ফারুক শামীমকে এমপি হিসেবেদেখতে চাই। আমরা চাই তার নেতৃত্বে অবহেলিত সদর উপজেলায় আরো উন্নয়নের ছোয়া লাগুক। এই এলাকার নদী ভাঙ্গনের শিকার টুটুল গাজি জানান,’ যেখানটায় দাঁড়িয়ে নদীর ভাঙ্গনে আমি নিজেই ডুবে গিয়েছিলাম ২৫ জন সঙ্গিসহ, সেখানে আজ পর্যটনের রঙ্গিন বাতি জ্বলছে, এটা দেখে আমি অবাক’। স্থানীয় একটি হোটেলের ম্যানেজার হারুন অর রশীদ জানান হোটেল মালিকের বাড়িঘর সব ভেঙ্গে নদী নিয়ে গেছে। পরে আরো একটি ঘর তুললে সেটাও নদীতে ভেঙ্গে যায়। আড় এখন বাধ হওয়াতে অন্তত্য ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখানে হোটেল করা হয়েছে। প্রতিদিন অগনিত মানুষ আসছে। চর আবদানী থেকে শুরু করে রাড়ি মহল, চরবাড়িয়া হয়ে উত্তর লামচড়ি পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার ভাঙ্গন কবলিত নদীর পাড়ে সাড়ে ৩ শ কোটি টাকা ব্যায়ে নদী রক্ষা বাধ করায় আজকের এ পরিবর্তন দৃশমান হয়েছে। বাধ এলাকায় রাতারাতি গড়ে উঠেছে হোটেলসহ অন্তত শতাধিক স্থাপনা। চোখ জুড়ানো দৃস্টি নন্দন সাজ করা হয়েছে সর্বত্র। আর এমন খবর প্রচারিত হবার সাথে সাথে দূর দুরান্ত থেকে শত শত পর্যটক এখানে আসতে শুরু করে। বিকেল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত পর্যটকদের অবস্থানে সরগম থেকেছে এই জনপদ। নদী, আকাশ, জোয়ার ভাটা আর প্রকৃতির মিলন দেখতে এখানে এসে মুগ্ধ পর্যটকরা। দিনে দিনে বাড়ছে পর্যটকদের আনন্দ উপভোগের চাহিদা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এমন বাধ নির্মান শুরু হয়েছে পার্শবর্তী চরকাউয়া, হোসনাবাদসহ আরো ভাঙ্গন এলাকায়। বলা হয়েছে প্রতিটি নদী ও শহর রক্ষা বাধ এলাকায়ই সুযোগ করে দেয়া হবে এমন পর্যটন স্পট গড়ার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন জানান, বাঁধ এলাকায় এখন দৃশ্যমান হবে হাসির ফোয়ারা।
বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় এমন দুঃখ লাঘব স্বস্থির পরিবেশ সৃস্টি করা গেছে দাবি করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রি কর্ণেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম বলেন বিগত ২৫ বছর থেকে এখানকার সাংসদরা কোন উন্নয়ন করতে পারেননি যা এবারে করা হয়েছে। কীর্ত্তনখোলার ভাঙ্গন কবলিত চরবাড়িয়া এলাকা যেখানে নদী ভাঙ্গনে একাধিক প্রানহানী হয়েছিলো সেখানে আজ খুশির জোয়ার। আতঙ্কিত এই জনপদ এখন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাধ করে ভাঙ্গন বন্ধ করা হয়েছে। আজ এখানকার জীবন পেয়েছে জীবিকার সন্ধান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, চরকাউয়া, চরমোনাই ও লামচরিতে ৮ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাধের কাজ শুরু হচ্ছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে এসব স্থানের ফিরবে প্রানের স্পন্দন। শায়েস্তাবাদের ভাঙ্ড়ন বন্ধের কাজ শেষ হলে সদর উপজেলা হবে ভাঙ্গন মুক্ত। বরিশালে নদী ভাংগনের প্রতিটি স্থানে এমন খুশির জোয়ার বইবে এমনটাই আশা করছে বরিশালবাসী