সুফল মিলছেনা হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সুফল মিলছেনা হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর - ajkerparibartan.com
সুফল মিলছেনা হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর

3:43 pm , September 26, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালÑপিরোজপুর-খুলনা সড়কটি জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা লাভসহ বেকুটিয়াতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশÑচীন ৮ম মৈত্রী সেতু চালু হলেও বিধ্বস্ত প্রায় ‘বাসন্ডা বেইলি ব্রীজ’ পুন:নির্মান সহ মাত্র সাড়ে ৪ কিলোমিটার ‘পিরোজপুর বাইপাস’র অভাবে পূর্ণাঙ্গ সুফল মিলছে না। এমনকি ৮০’র দশকে নির্মিত বাসন্ডা বেইল সেতুটির সরঞ্জাম সহ এর ডেকিং বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা/মোংলা-বেনাপোল ও ভোমড়া বন্দরের সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগের বিষয়টি এখনো সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। প্রায় ৬শ কোটি টাকার চীনা অনুদান সহ প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেগম ফজিলাতুন্নেসা  মুজিব বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতুটি গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। কিন্তু দেশের ৩টি উপকূলীয় বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগের এ সেতু পারাপারকারী বিপুল সংখ্যক যানবাহনের চাপে পিরোজপুর শহরের বেশীরভাগ এলাকা প্রতিনিয়ত চরম অচলাবস্থার মুখে পড়ছে। অপারদিকে ওই মহাসড়কের  বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর অংশের বাসন্ডা নদীর ওপর প্রায় ৩০ বছরের পুরনো বেইলি সেতুটি ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বার বার জোড়াতালি দিয়েও সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল অনেক সময়ই নির্বিঘœ রাখা সম্ভব হচ্ছেনা। এমনকি গত তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে ধারন ক্ষমতার বেশী ওজনের যানবাহন পারাপারের ফলে সেতুটির বেইলি সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশী ঝুকিপূর্ণ সেতুটির ডেকিং বা পাটাতন অংশ। এমনকি অনেক সময়ই এসব বেইলি সরঞ্জাম সহ ডেকিং ম্যাটেরিয়াল পাওয়া যাচ্ছেনা। অথচ দেশের ৩টি উপকূলীয় বিভাগ সহ সবগুলো সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি দুটি প্রধান স্থল বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ সহজতর করছে এ মহাসড়কটি। এমনকি গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়েই চীন সরকার মূল সেতুটি নির্মানে সমুদয় অর্থ অনুদান হিসেব প্রদান করে। মাস কয়েক আগেই বরিশালÑঝালকাঠীÑপিরোজপুর-খুলনা মহাসড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হয়েছে।
বাসন্ডা সেতু নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বরিশাল সড়ক জোন ও সড়ক সার্কেল সহ ঝালকাঠী সড়ক বিভাগ থেকে সড়ক অধিদপ্তর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে অনেক লেখালেখির পরে সম্প্রতি এর সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সমীক্ষা সম্পন্নের পরে সেতুটির নকশা প্রনয়ন সহ ডিপিপি তৈরী করে তা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৗশলী একে এম আজাদ। পাশাপাশি অনেক বিলম্বে হলেও বাসন্ডা সেতুটি নির্মানে তাগিদ দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আমীর হোসেন আমু সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
তবে বিদ্যমান বাসন্ডা বেইলি সেতুর পাশে বিআইডব্লিউটিএ’র নীতিমালার আলোকে নতুন করে যে সেতু নির্মিত হবে তার উচ্চতা ন্যূনতম ৪০ ফুট রাখতে হবে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে বর্তমানের ৪শ ফুট বেইলি সেতুর স্থলে প্রস্তাবিত বক্স গার্ডার টাইপের সেতুটির দৈর্ঘ্য ন্যূনতম ৬শ ফুটে উন্নীত হবে বলে মনে করছেন সেতু বিশেষজ্ঞরা। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ ও সংযোগ সড়ক সহ সেতুটি নির্মান প্রকল্প ব্যয়ও ৫শ কোটির কাছে পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল মহল।
এ  ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রকল্পের আওতায় বাসন্ডা বক্স গার্ডার টাইপ সেতুটি নির্মান প্রকল্প-প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হতে পারে বলেও জানা গেছে। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হবার পরে প্রস্তাবিত সেতুটির ডিজাইন ও ডিপিপি প্রস্তুত করে তা অনুমোদন, দরপত্র আহবান সহ কাজ শেষ করতে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে বলেও মনে করছেন সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। একইভাবে রাজাপুর থেকে বেকুটিয়ায় মৈত্রী সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ দিনের পুরনো ছোট ও মাঝারী আরো ৫টি বেইলি সেতু এ মহাসড়কে প্রায়শই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তবে ইতোমধ্যে পিরোজপুর সড়ক বিভাগের অধীন ২টি সেতু আরসিসি’তে পরিবর্তনের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। অপরটিরও কাজ শুরু হয়েছে। ঝালকাঠী সড়ক বিভাগের আওতায় ছোট ছোট বেইলি সেতু পরিবর্তনের উদ্যোগে নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটির মূল ডিপিপি’তে ‘পিরোজপুর বাইপাস’ নির্মানের বিষয়টি অন্তর্র্ভূক্তির লক্ষ্যে শুরুতে বিভিন্ন মহল দাবী জানালেও তা আমলে নেয়নি সড়ক অধিদপ্তর সহ মন্ত্রণালয়। তবে গত ৭ বছরে এ লক্ষে একটি সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে মাত্র। যেখানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিরাজপুর বাইপাস নির্মান অত্যাবশ্যক বলে দুটি এলাইমেন্টও নির্ধারন করেছে। কিন্তু সে আলোকেও আর কোন পদক্ষেপ নেই। অথচ সেতুটির পশ্চিম প্রান্তে নির্মিত সংযোগ সড়কটি পিরোজপুর শহরের বাইরে বলেশ^র সেতুর সংযোগ সড়কে সংযুক্ত করলেই এ সমস্যার সমাধান মিলবে বলে জানিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
এমনকি রাজাপুর থেকে পিরোজপুর পর্যন্ত সড়কটির বেশীরভাগই এখনো মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত।  চট্টগ্রাম-বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর ও প্রধান দুটি স্থল বন্দরের সাথে উপকূলীয় ৩টি বিভাগের সংক্ষিপ্ত ও সহজ সড়ক যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একে এম আজাদ জানান, আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে ভোলা-বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হয়েছে। বাসন্ডা সেতু নির্মানের লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT