3:47 pm , September 16, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভাদ্রের বড় অমাবশ্যার ভরা কাটাল কেটে যাবার ফলে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষকের কপালে দু.চিন্তার ভাজ কিছুটা মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৮.৭০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হয়েছেন কৃষি যোদ্ধাগন। ভাটি এলাকা বিধায় আরো অন্তত ১০ দিন আমন রোপনের সুযোগ পাবেন বরিশাল অঞ্চলের চাষীগন। ফলে চলতি মৌসুম আমন আবাদ লক্ষ্য অতিক্রমের সম্ভাবনার আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে ২২ লাখ ৮ হাজার টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখনো মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে প্রায় ৫৬ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের আমন আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৮ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। তবে বছরের শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরে আগষ্টেই শ্রাবনের অমাবশ্যায় ভর করে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ ভাগ বেশী। ফলে বিগত দুটি খরিপ-২ মৌসুমের মত এবারের ভাদ্রের বড় অমাবশ্যা নিয়ে মারাত্মক দু.চিন্তায় ছিলেন বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষকগন। পুরো ভাদ্র মাস শেষে আশি^নের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রোপা আমনের আবাদ চলে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। কিন্তু এবার শুক্রবার সকালে ভাদ্রে বড় অমাবশ্যা শেষ হবার আগে পরে অসময়ের অস্বাভাবিক তাপ প্রবাহ এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের জন্য বাড়তি বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করছে। গত কয়েকদিন ধরেই বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে রয়েছে। গত মাসের প্রথমভাগে শ্রাবনের অমাবশ্যায় একটি লঘু চাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক বর্ষণের সাথে ফুসে ওঠা সাগর ও উজানের ঢলের পানিতে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের আমন বীজতলা ও রোপা আমন ছাড়াও আধা পাকা আউশের প্রায় পুরোটাই প্লাবিত হয়েছিল। তবে সাগর দ্রুত শান্ত হয়ে উজানের পানি গ্রহন করায় নদ-নদী স্বাভাবিক ধারায় ফিরলেও প্রবল বর্ষণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পুরো সপ্তাহ পেরিয়ে যায়। ফলে জুলাই মাসে যেখানে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৫৮% কম, সেখানে আগস্টে তা ৮০% বেশী ছিল। গত মাসে বরিশালে স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৭৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে ২৮৫ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও মাসের প্রথম ১৫ দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমান ১শ মিলির কিছু বেশী। তবে ১৪ সেপ্টেম্বর সূর্যোদয় থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর সূযোদয় পর্যন্ত ভাদ্রের অমাবশ্যায় ভর করে কি ধরনের বৃষ্টি হয় তা নিয়ে কৃষকগন যথেষ্ট দু.চিন্তায় ছিলেন। বিগত ৩টি বছরই ভাদ্রের অমাবশ্যার প্রবল বর্ষণের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলের পানিতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের আমন ফসলী জমি সয়লাব হয়ে যায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির কবলে পড়েন কৃষকগন।
অতীতের ক্ষত মাথায় রেখেই শংকিত ছিলেন বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষকগন। প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা এখনো সম্পূর্ণভাবেই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। পুরো মৌসুম জুড়েই বৃষ্টির অভাবে খরিপ-১ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম, ১ লাখ ৬৮ হাজার হেক্টরে আউশের আবাদ হয়েছে। শণিবার পর্যন্ত ৯৮% কর্তন সম্ভব হলেও শ্রাবনের প্রথম সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে প্লাবিত হয়ে আউশের উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয়েছে। এ পর্যন্ত যে ১.৬৫ লাখ হেক্টরের আউশ কর্তন হয়েছে, তাতে সদস্য সমাপ্ত খরিপ-১ মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না।
তবে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন নিয়ে আপতত দু.চিন্তা কেটে যাওয়ায় কিছুটা শংকা মূক্ত কৃষকগন। তবে অতীতে নভেম্বরর প্রথম ভাগে দক্ষিনাঞ্চলে একাধিক বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় আঘত হানায় কৃষকরা সম্পূর্ণ নিচিন্ত হতে পারছেন না। ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল আউশের ‘সামান্য ক্ষতি’র কথা স্বীকার করলেও আমন নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের মতে, পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। যে কোন ক্ষতি পূণর্বাসণের প্রস্তুতি রয়েছে মাঠ পর্যায়ে।
বরিশাল অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই প্রতি বছর আউশ,অমন ও বোরা ধান ঘরে তুলছেন। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলা দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত। ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’, ‘আইলা’ ‘মহাসেন’, ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন গত অর্থ বছরের খরিপ-১,খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। গত বর্ষা মৌসুমেও বছর জুড়ে বৃষ্টির অভাবের পরে মৌসুম শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ব্যাপক ঝুকির কবলে পড়ে। তবে সব দূর্যোগ অতিক্রম করে এ অঞ্চলে প্রায় ২২ লাখ টন আমন চাল ঘরে তুলেছিলেন কৃষি যোদ্ধাগন।