3:41 pm , September 15, 2023
গত ৫ দিনেই ১৮ জনের মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা জনমনে স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। মাসের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরো ৫ হাজার সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে সরকারী হাসপাতালগুলোতেই ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। যার মধ্যে গত ৫ দিনেই ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালের পূর্ববর্তি ৭২ ঘন্টায়ই মারা গেছেন ১১ জন। গত ৫দিনে সরকরী হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশী ডেঙ্গু রোগী। এমনকি গত কয়েক মাসে বরিশাল বিভাগের সরকারী হাসপাতাল গুলোতেই ৭১ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর কথা জানালেও আগষ্ট ও সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনেই পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এ তথ্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতাল সহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতলগুলোতে ১ হাজার ১৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে বরিশাল বিভাগের সরকারী হাসপাতালগুলোতে এ পর্যন্ত যে প্রায় ১৯ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হবার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে ডায়রিয়ার ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই মে মাস থেকে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ডেঙ্গু’র আক্রমন শুরু হয়। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগাম থেকে মশা বাহিত রোগীরা এখানে এসে জ¦র সহ নানা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। তখন বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো বাইরে থেকে আগত রোগীরা ডেঙ্গু নিয়ে এসেছেন বলে স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু দিন গড়াবার সাথে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে এ মশাবাহিত রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তার পরেও বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ বিভাগের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর তেমন কোন হেলদোল নেই। খোদ বরিশাল মহানগরীতেই এখন মশক নিধন বলতে তেমন কোন কর্যক্রম নেই। গত দুই মাস ধরে নগর ভবনের ভান্ডারে মশা মারার কোন ওষুধ নেই বলে একাধিক সূত্রে বলা হলেও তা নিয়ে নগর ভবনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গত দুদিন ধরে কনজার্ভেন্সী শাখার মশক নিধনের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তা ফোন ধরছেন না। তবে ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এ মহানগরীতে মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের ১২টি ফগার মেশিনের ১১টি সচল আছে বলে জনা গেছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন ওয়ার্ডে হ্যান্ড স্প্রে দিয়ে মশার ঔষধ দেয়া হলেও গত দুই মাস সে কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বেশীরভাগ ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে মেশিনগুলো নগর ভবনে ফেরত নেয়া হয়েছে।
এদিকে এবারই প্রথম সুদুর পল্লী অঞ্চলেরও বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। যার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী। এমনকি এ পর্যন্ত মৃত ৭১ জনের মধ্যে অন্তত ৪৫ জনই নারী।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে বরিশালই শীর্ষ ছিল। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে ভর্তিকৃত প্রায় ৭ হাজারের মধ্যে ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যারমধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মারা গেছেন ৪৬ জন। এছাড়া পটুয়াখলীতে আক্রান্ত ৪ হাজার ১১১ জনের মধ্যে ৫ জন, ভোলাতে ভর্তিকৃত ২ হাজার ১৫২ জনের মধ্যে ৭ জন, পিরোজপুরে ৩ হাজার ১৩০ জনের মধ্যে ৬ জন, বরগুনাতে ভর্তিকৃত ২ হাজার ১২৫ জনের মধ্যে ৫ জন ও ঝালকাঠির সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ৪৫৯ জন ভর্তি হলেও কোন মৃত্যু নেই। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এ জেলার সিংহভাগ ডেঙ্গু রোগীই বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিগত দুটি বছর বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলে ব্যাপক ডায়রিয়ার বিস্তৃতি ঘটলেও ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে একটি ভাল অবস্থানে ছিল। কিন্তু এবার গত বছরের ধারাবাহিকতায় ডায়রিয়ার বিস্তৃতি অব্যাহত থাকার মধ্যেই স্মরনকালের ভয়াবহ ডেঙ্গু মশার আক্রমন জনমনের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে।
পরিস্থিতি উন্নয়নে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা সহ স্থানীয় সরকার প্রশাসনের মশক নিধনে নিবিড় কার্যক্রম গ্রহনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অধিকতর সচেতন হবার সাথে সামাজিক সচেতনতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
অপরদিকে একাধিক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, সরকারী হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তার হিসেব স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে থাকলেও এর অন্তত তিনগুন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ও হচ্ছেন। যার কোন পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই। সুতরাং পরিস্থিতি মোটেই স্বস্তিকর নয়। তাদের মতে, পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মশা নিয়ন্ত্রনে আরো কঠোর পদক্ষেপের কোন বিকল্প নেই। কারন একমাত্র মশক নিয়ন্ত্রনই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা হ্রাস করতে পারে বলেও মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন।