3:42 pm , September 13, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি খারাপ অবস্থা বলে জানিয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, একদিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য ডেঙ্গু আক্রান্তদের দেরি করে হাসপাতালে নিয়ে আসাকে দায়ী করছেন তিনি। পরিচালক বলেন, জ¦রে আক্রান্ত হলে ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বাইরে বিভিন্নজনের পরামর্শ নেয়। যখন অর্গান আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যায়ে আসে তখন হাসপাতালে আসে। এ জন্য মৃত্যু বাড়ছে। পরিচালকের পরামর্শ জ¦রে আক্রান্ত হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরীক্ষা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এলে তো চিকিৎসকের পক্ষে একজন রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা যায় না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকার বিষয়টি ভয়াবহ না বললেও খুব খারাপ অবস্থা বলে স্বীকার করেছেন পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে বিভাগের দুইটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৬ জেলা সদরসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত আরো ৪১৮ জন ভর্তি হয়েছে। গত ৪৮ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৯৮৬ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১ হাজার ১৬০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জনসহ বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা পৌছেছে ৬৫ জনে। মঙ্গলবার মারা যাওয়া রোগীরা হলেন- বরিশাল নগরীর কাউনিয়ার কাঞ্চন আলী (৬০), বরগুনার আমতলী উপজেলার নুরুল আমিন (৫৫), বরিশালের বাকেরগঞ্জের আনোয়ারা বেগম (৭০), বরিশাল নগরীর সাগরদীর বাসন্তি (৫৫), বানারীপাড়া উপজেলার রুশিয়া (৫৭),মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মনোয়ারা (৫৫) ও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বারেক হাওলাদার (৮০)। এর মধ্যে ৬ জন বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও একজন গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৭৯ জন বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন। এছাড়া বরিশাল জেলার অন্যান্য হাসপাতালে ৪৭ জন, পটুয়াখালীতে ৫৯ জন, ভোলায় ৪৬ জন, পিরোজপুরে ৬৫, বরগুনায় ৬৭ ও ঝালকাঠিতে ৯ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ১৮ হাজার ১৮৫ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ হাজার ৯৬০ জন। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪১ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জন, বরিশাল জেলার অন্যান্য হাসপাতালে ২ জন, বরগুনায় হাসপাতালে ৫ জন, পটুয়াখালীতে ২ জন, পিরোজপুরের হাসপাতালে ৫ জন এবং ভোলায় হাসপাতালে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসই বরিশাল অঞ্চলে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার লাভ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। তবে এর পরেও এ অঞ্চল জুড়ে মশক নিধান সহ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে তেমন কোন নিবিড় কার্যক্রম লক্ষ্যণীয় নয়। প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের নগরীতে মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে নগরবাসী সন্তুষ্ট নয়। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১২টি ফগার মেশিনের ১১টি সচল বলে কতৃপক্ষ দাবী করলেও তার ব্যবহার নগরবাসী প্রত্যক্ষ করতে পারছেন না। সাথে কয়েকটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে কিছু হ্যান্ড স্প্রে দেয়া হলেও গত দুই মাস কোন ওষুধের সরবরাহ নেই বলে অভিযোগ বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বশীলদের। ফলে এ নগরবাসী এখনো মশার জ¦ালায় অতিষ্ঠ। উপরন্তু খাল, ড্রেন ও ঝোপঝাড় গুলো পরিস্কার করার লোকবলের সংকট না থাকলেও আন্তরিকতার ঘাটতিতে নগরী জুড়ে মশার দাপট অব্যাহত রয়েছে। প্রায় একই চিত্র এ অঞ্চলের সবগুলো শহর ও গ্রামঞ্চলেও।