3:39 pm , September 13, 2023

মো: আফজাল হোসেন, ভোলা ॥ দীর্যদিন পর কিছ্টুা হলেও ভোলার মেঘনা এবং সাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে করে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। তবে ইলিশ ধরার সাথে সাথে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পুলিশের চাঁদাবাজী। আর এসব ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছে সাধারন জেলেসহ আড়তদাররা। মাছ নেয়া ছাড়াও জেলেদের জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে চাঁদা। শুধু পুলিশ ও প্রশাসনই নয়, রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি। সমাধান চেয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আড়তদার এবং বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন।
দ্বীপ জেলা ভোলার চারদিক মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী বেষ্টিত। এখানে কয়েক লাখ জেলে রয়েছেন যারা মেঘনা ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ইলিশের মৌসুম অনেক আগে শুরু হলেও কাঙ্খিত ইলিশের দেখা পাচ্ছিলেন না জেলেরা। মৌসুমের শেষে এসে ইলিশের দেখা মিলছে। তাই ব্যস্ত মেঘনা পাড়ের মাছঘাটগুলো। ভোলার সর্বদক্ষিন চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট। আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি মাছঘাট রয়েছে। ফজরের পর থেকেই এসব ঘাটে ইলিশ বিক্রির হাক-ডাক শুরু হয়ে যায়। বেলা ১২টার পর থেকেই কমে আসে ইলিশ বিক্রি। তখন চলে প্যাকেজিং এর কাজ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝড় আর উত্তাল মেঘনার সাথে যুদ্ধ করে ইলিশ ধরার পর ওইসব ইলিশ চিলের মতো ছোঁ মেরে নিয়ে যায় এবং জিম্মি করে আদায় করে চাঁদা আদায় করে একটি চক্রও।
চরফ্যাশন সামরাজ মাছঘাটের আড়তদার মিলন মাস্টার বলেন, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার নিঝুম দ্বীপ (বন্দরটিলা) নৌ-পুলিশ মাছ ধরার ট্রলারসহ নাছির মাঝি ও তার জেলেদের আটক করে চাঁদা দাবী করে। কথা বলতে চাইলে বলেন, ‘কথা বলা যাবে না। বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন’। পুনরায় চেষ্টার বিকাশে টাকা পাঠাতে বলে। পরে ১৪ হাজার টাকা দেই। অপর এক আড়তদার আব্দুর করিম বলেন, পুলিশে জালসহ নৌকা ধরেই বলে টাকা দেন। পরে বিকাশে ২হাজার করে ৪হাজার চায়। আমি ২হাজার টাকা দেই। মো: আলাউদ্দিন গাজী বলেন, ট্রলারের মাঝি ফোন দিয়ে বলেন, ‘ভাই টাকা পাঠান, কোস্টগার্ড ধরছে। তখন ১৭হাজার টাকা দেয়ার পরেও রক্ষা পায়নি। চর পিয়াল ট্রলার ও মাঝিসহ জেলেদের ফেলে চলে যায়। অপর একটি ট্রলার তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। কাশাল মাঝি বলেন, লাখ লাখ টাকা প্রতিদিন চাঁদাবাজি করছে পুলিশ। তাদেরকে প্রতিরোধ করার কোন উপায় পাচ্ছিনা। অপরদিকে নৌ পুলিশের সাথে কথা বলে জানাগেছে, চরফ্যাশন ঢালচরে রাজনৈতিক পরিচয়ে ট্রলার থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে জানালে তারা দ্রুত চর কুকরী-মুকরীর নৌ-পুলিশকে জানায়। পরবর্তীতে চাপে পড়ে ১২ আগস্ট সকালে সেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয় চাঁদাবাজরা।
১২সেপ্টেম্বর ভোলার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে আড়তদার এবং বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন চরফ্যাশন শাখার পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মো: আলাউদ্দিন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। যেখানে কিছু বিকাশ নাম্বার দেয়া হয়েছে যেসব নাম্বারে জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ উপকূলীয় মৎস্য ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন চরফ্যাশন শাখার সভাপতি এবং আড়ত মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: আলাউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, আমরা ডাকাত না পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ট। বেপারোয়া চাঁদাবাজী করছে পুলিশ। প্রতিকার চেয়ে আমরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমাদের সামনেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে মনপুরা থানার ওসির সাথে মোবাইলে কথাও বলেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় তুলে ধরা হচ্ছে।
ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ইলিশ মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের উৎপাত শুরু হয়। এগুলো আমরা সমাধান করার চেষ্টা করি। একই সাথে পুলিশের বিরুদ্ধে আর্থিক সংক্রান্ত কোন অভিযোগ প্রমানিত হলে ছাড় দেয়া হবেনা।