3:46 pm , September 12, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ জাল সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরি করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রথমে সাময়িক এবং পরবর্তীতে দুই বছরের বেশি সময় বরখাস্ত ছিলেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন। তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষার বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক এসএম ফারুক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। চলতি বছরের ২৬ জুন বিভাগীয় উপপরিচালক রদবদল হলে দীর্ঘ সময় পর অজ্ঞাত কারণে পুনরায় তাকে বৈধ ঘোষণা করে প্রধান শিক্ষক পদে বহাল করা হয়েছে। যাবতীয় তথ্যাদি ও শিক্ষা দপ্তরের নিয়মানুযায়ী তাকে বহাল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্তমান উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন। ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরির অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে ভোলা জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করে একটি লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন উপ পরিচালকের কাছে। অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, দক্ষিণ চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেনকে ম্যানেজিং কমিটি ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ প্রদান করেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতায় এসএসসি, আলিম এবং ১৯৯১ সালে আলিম পাশ করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ছায়েদ আলী অভিযোগ করেন , গোলাম হোসেনের আলিম সনদ জাল। শিক্ষক আলিম পরীক্ষা না দিয়ে জাল সনদ সংগ্রহ করেছেন অভিযোগ পেয়ে তার কাছে প্রকৃত সনদ চাওয়া হলে তিনি সনদের ফটোকপি দেন। মূল সনদ পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেনকে টেলিফোনে আলিম সনদ জমা দানের জন্য বলা হয়। কিন্তু তিনি বার বার সময় ক্ষেপন করে অবশেষে লিখিতভাবে ২০১৭ সালের ২১ মে পুনরায় সময় চান। সেই নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেও তিনি মূল সনদ জমা দেননি। ২০১৭ সালে ১৭ জুলাই তাকে পুনরায় মূল সনদ জমা দেয়ার জন্য পত্র দেয়া হয়। এই পত্রের জবাব কিংবা আলিম সনদপত্র শেষ পর্যন্ত জমা দেননি তিনি। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। ভোলার তৎকালীন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামানের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘শিক্ষক গোলাম হোসেন নিজেই স্বীকার করেছেন যে- তিনি আলিম বা এইচএসসি পাশ করেননি। তাকে ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব¡ প্রদান করেছে। তাই ওই সময় থেকে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম স্বাক্ষরিত (স্মারক নং ৪৩২ তারিখ- ২০/১২/১০) প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির একটি তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ইউনিট, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাভবন, ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। এই তালিকার একটি ফটোকপিও পাওয়া গেছে, যা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশে সংযুক্ত রয়েছে। গোলাম হোসেন প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পান এবং ৫ হাজার ৫শ টাকা বেতন স্কেল ও সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে গেজেটভুক্ত হন এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। অভিযোগে জানানো হয়েছে ‘প্রধান শিক্ষক পদে যোগ্যতা না থাকার পরও বেতন ভাতা ভোগ করে চলেছেন তিনি। শিক্ষকের এহেন দুর্নীতি ও অসধাচরণের জন্য বিভাগীয় বা অন্য কোন যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করা হয় পত্রে। এরপর মামলা রুজু হয় এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক এসএম ফারুক। এসময় বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব নিয়ে প্রকাশিত হয়। সেই আলোচিত ঘটনা আড়াল করে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেনকে পুনরায় স্বপদে বহাল করেছেন বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন। বরখাস্ত হয়ে বেতনভাতা বন্ধ থাকা চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেন তার চাকরি ফিরে পাওয়ার আনন্দ নিয়ে উৎফুল্ল কন্ঠে জানান, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই অভিযোগ তুলেছেন, নিজেরাই আবার তার সমাধান করেছেন। বিভাগীয় কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন গত ২৬ জুন বিভাগীয় মামলা ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তার সাময়িক বরখাস্ত আদেশ তুলে নিয়েছেন বলে জানান তিনি। গোলাম হোসেন আরো বলেন, এজন্য আমি কোনো চেষ্টা তদবির কিছুই করিনি। যা হয়েছে তা এমনিতেই হয়েছে। এদিকে সদ্য ঝালকাঠিতে বদলি হওয়া ভোলা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম তুহিন জানান, চরমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম হোসেনকে বরখাস্ত করার পর পুনরায় কি কারণে বা কীভাবে পুনর্বহাল করা হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে বরিশাল ডিডি অফিস বলতে পারবে। অভিযুক্ত গোলাম হোসেনের চাকরি ফিরিয়ে দিতে পারায় গর্বিত বর্তমান বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন। তিনি বলেন, গোলাম হোসেনের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। নিলুফার ইয়াসমিন আরো বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সব রকম প্রসিডিওর ফলো করে তাকে পুনরায় চাকরিতে বহাল করা হয়েছে। এখানে কোন রকম দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি কিংবা অন্য কোনো বিষয় নেই।