সাংবাদিক এস এম ইকবাল এক অনন্য মানবতাবাদি মানুষ সাংবাদিক এস এম ইকবাল এক অনন্য মানবতাবাদি মানুষ - ajkerparibartan.com
সাংবাদিক এস এম ইকবাল এক অনন্য মানবতাবাদি মানুষ

3:49 pm , September 11, 2023

বসাস ও সাহিত্য বাজার এর শ্রদ্ধা
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সাহিত্য সংসদ (বসাস) ও সাহিত্য বাজার পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বরিশালের চারজন গুনী ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা হবে। অসংখ্য গুনীজন বরিশালে মাটিতে জন্মেছেন।
এসএম ইকবাল সম্পর্কে যতই জানা যায়, ততই বিস্ময় বাড়ে। যৌবন বয়সে আশেপাশের প্রতিবেশী বা সাংবাদিকদের বিপদে-আপদে তাকে কখনো ডাকতে হয়নি, নিজেই ছুটে এসে যুক্ত হতেন প্রয়োজনীয় সেবায়। দু.সময়ে পাশে থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতেন তিনি। এমন একজন পরোপকারী আইনজীবী, সাংবাদিক ও সম্পাদক এস এম ইকবাল আজ নিজেই অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে আছেন দীর্ঘদিন। প্রশাসন আর দু-চারজন শুভাকাঙ্খী ছাড়া এখন আর তেমন কেউ খোঁজ করেন না তার। বেশিরভাগ সময় তার চলে যায় একা একা বই পড়ে কিংবা সংবাদ দেখে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল ও আজকাল পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন আজো। অথচ একটা দিন গেছে, যখন তার এই ঘরে অসংখ্য মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো। প্রশাসন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের ভিড় ছিলো এখানে। কেননা এসএম ইকবাল শুধু সাংবাদিক ও সম্পাদকই ছিলেন না। ছিলেন তিনি একাধারে আইনজীবী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও সংগঠক হিসেবে পরিচিত সর্বমহলে। তিনি কখনোই নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, পদ-পদবি ও ক্ষমতার কথা ভাবেননি। সৎ ও নির্লোভ মানুষ হিসেবে বরিশালের সাংবাদিক জগত ও সুশীল সমাজে তার সুনাম আজো অটুট রয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ তার এক লেখনীতে বলেছেন, একসময়ে ইকবাল ভাই, মিন্টু বসু, নুরুল আলম ফরিদ, মাইনুল হাসান, নজরুল ইসলাম চুন্নু এই পঞ্চপান্ডব বিপ্লবী বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় মূখ্য দায়িত্ব পালন করেন। মূলত স্বাধীনতা পরে বিপ্লবী বাংলাদেশ বরিশাল বিভাগে প্রথম সংবাদপত্র হিসেবে বহু সাংবাদিকদের আশ্রয়স্থল ছিল। শুধু সাংবাদিকতায় নয় মুক্তিযুদ্ধের সময়ে’ যুবসংঘ’ গঠনে এস এম ইকবাল অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। তিনি শুধু সাংবাদিকতা বা মুক্তিযোদ্ধা নয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সকল আন্দোলন আলোচনায় এস এম ইকবাল একজন সেতুবন্ধন বলে জানান সুশান্ত ঘোষ। এস এম ইকবাল বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার পদত্যাগ করেছেন। স্থানীয় সকল ব্যবসায়িক, সামাজিক এমনকি দর্গাপূজার কমিটির সাথেও জড়িয়ে ছিলেন বলে জানান তার শুভানুধ্যায়ীগণ। সকলের প্রিয় ইকবাল ভাই ৭৯ বছরে পা রেখেছেন। সাংবাদিকতায় নিবেদিত প্রাণ এই মানুষটি এই পেশার উন্নয়নে কাজ করেছেন, কখনও জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তেমনি শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার প্রচেষ্টায় তার এলাকায় স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিক এস এম ইকবালের ঘনিষ্ঠজন সৈয়দ দুলাল, নজরুল ইসলাম চুন্নু, মুরাদ আহমেদ, সুশান্ত ঘোষ, আকতার ফারুক শাহীন, কাজী মিরাজ মাহমুদ প্রমুখের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই সৈয়দ মোহাম্মদ ইকবাল যেন একটু আলাদা। মানুষের প্রয়োজনে ছুটে যেতেন খুদে ইকবাল। অসহায়, সুবিধা বঞ্চিত, দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করতে কিশোর বয়সে নিজেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করেন ইকবাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরিশালে কোনো সংবাদপত্র আসতো না। যুদ্ধের খবর জানতে তখন একমাত্র ভরসা ছিল রেডিও। তখন এসএম ইকবাল একটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তার উদ্যোগে মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম পত্রিকা, যার নাম ‘বাংলাদেশ’। একই সময় সাংবাদিকতাও শুরু করেন ইকবাল। সেই থেকে সাংবাদিকতা পেশায় তিনি সক্রিয় রয়েছেন। সাংবাদিকতা পেশায় প্রতিবাদী কণ্ঠের কারণে বিভিন্ন সময় অনেকেরই রোষানলে পড়তে হয়েছে তাকে। তবে নিজ কর্তব্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ পেশা ছেড়ে যেতে পারেননি তিনি। তারা আরও জানান, দুই ছেলে সন্তানের জনক এসএম ইকবাল। তার ছেলেরা চাকরি সূত্রে ঢাকায় বসবাস করেন। ছেলেদের সঙ্গে থাকেন তাদের মা। এস এম ইকবাল বরিশালে একাই থকেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে তাকে রাখতে বহু চেষ্টা ও অনুরোধ করেছেন। তবে তাতে রাজি হননি তিনি। তিনি ছেলেদের বলেছেন, আরাম-আয়েশের প্রয়োজন নেই। বরিশালকে ভালোবাসি। বরিশাল ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে আমার বসবাস করা সম্ভব নয়। দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ বলেন, আমাদের প্রেরণা এবং নৈতিকতার যেটুকু শিক্ষা তার সবটুকুই এস এম ইকবাল এর অবদান। এখন তিনি অসুস্থ, হাঁটাচলায় খুব সমস্যা। তারপরও তাকে ডাকলে যেভাবেই হোক তিনি ছুটে আসেন। এটাই হচ্ছেন এস এম ইকবাল। এটাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এস এম ইকবাল ১৯৪৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বানারীপাড়া উপজেলার লবনসড়া গ্রামের এক ধর্মপ্রাণ সৈয়দ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ শামসুল হুদা এবং মায়ের নাম ফরিদা বেগম। প্রারম্ভিক শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণিতে বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৬৪ সালে বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ পাস করেন এস এম ইকবাল। স্বাধীনতার পরে সংস্কৃত সাহিত্যে কাব্যতীর্থ এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণ করেন তিনি। যুব বয়সে তিনি বরিশালে যুব সংঘ গঠন করে সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সমরাস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে এ যুব সংঘের সদস্যরা নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ভাবন করেন। বরিশাল শহরের সদর রোডের একটি ঘরে যুব সংঘের কর্মকা- চলতো। পরে কালিবাড়ি রোড ধর্মরক্ষিণী ভবনে গোপনে এ যুব সংঘের সদস্যরা বোমা বানানোর কাজ শুরু করেন। যুব সংঘ মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলাযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখে। এ সময়ে বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম পত্রিকা, যার নাম ‘বাংলাদেশ’। এস এম ইকবাল এ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রকাশিত দলিলের ৬ষ্ঠ খ-ে এর উল্লেখ রয়েছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধকালীন লুণ্ঠিত সম্পদের হিসাব সংরক্ষণের দায়িত্ব পায় যুব সংঘ। যার সরাসরি নেতৃত্বে ছিলেন এস এম ইকবাল। সাহিত্য সচেতন এস এম ইকবাল ১৯৭২ সালে কলকাতার সাহিত্য গবেষক দিলীপ কুমার দাসের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেন জীবনানন্দ দাশ এর ‘রূপসী বাংলা’। তখন জীবনানন্দ দাশের রচনাবলী খুব বেশি সংখ্যক মানুষের সংগ্রহে ছিল না। সেই থেকে শুরু, তারপর থেমে থাকেননি। একে একে সম্পাদনা করতে থাকেন জীবনানন্দ দাশ এর ‘বনলতা সেন’, ‘সুরঞ্জনা’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ‘সুকান্তের ঘুম নেই’ ইত্যাদি গ্রন্থ। এছাড়া মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে ‘ছোটদের নজরুল’, ‘ছোটদের রবীন্দ্রনাথ’, ‘ছোটদের শরৎচন্দ্র’সহ প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ। ১৯৭৩ সালে জনসমর্থনে নির্বাচিত হন বরিশাল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার। ১৯৭৪ সালে দু’বার দায়িত্ব পালন করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে। ১৯৮৫ সালে বানারীপাড়া উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পদাধিকার বলে বানারীপাড়া উপজেলার ২৭টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। এই শিক্ষানুরাগী মানুষটি বাইশারীতে একটি স্কুল ও একটি কলেজ নির্মাণ করেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT