4:04 pm , September 8, 2023
কেবলমাত্র শত বর্ষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিদিন প্রতিঘাট থেকে দুটি লঞ্চ রোটেশনে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান সাইদুর রহমান রিন্টু
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চ মালিকদের রোটেশন প্রথার কারনে ভোগান্তিতে যাত্রীরা। অভিযোগ উঠেছে প্রতিদিন দুইটি করে লঞ্চ চলাচল করায় কেবিনের টিকিট পাচ্ছে না যাত্রীরা। দালালদের কাছ থেকে বাড়তি দামে টিকিট ক্রয় করতে হচ্ছে।
বরিশাল নৌ-বন্দরের পরিদর্শক মো. কবির হোসেন জানান, গত ১৯ আগষ্ট থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে দুইটি করে লঞ্চ চলাচল করছে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুইটি করে লঞ্চ চলাচল করবে বলে মালিক সমিতি জানিয়েছেন। বর্তমানে যাত্রী ভালো রয়েছে। দুইটি করে লঞ্চ চলাচল করায় কেবিন সংকট রয়েছে। দুইটি লঞ্চে বিআইডব্লিউটির জন্য বরাদ্দ কেবিন দেওয়া হচ্ছে না। কেবিনের চাহিদা বেশি থাকায় যাত্রীরা দালালদের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে কেবিন নেয়। তার মন্তব্য তিনটি করে লঞ্চ চলাচল করলে এ সমস্যা থাকবে না। লঞ্চ মালিকদেরও লোকসানে পড়তে হবে না।
তিনি জানান, শুক্রবার বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে এ্যাডভেঞ্চার-৯ ও মানামী। এছাড়াও ঝালকাঠি থেকে ছেড়ে আসা ফারহান লঞ্চ ঘাটে ফিরেছে। একইভাবে ঢাকা থেকেও দুইটি লঞ্চ ছেড়ে এসেছে। ঝালকাঠি রুটের একটি লঞ্চ ছেড়ে আসবে। ওই লঞ্চ বরিশাল নৌ-বন্দরে ঘাট দিবে।
পদ্মা সেতু চালুর আগে বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করতো। পদ্মা সেতুর চালুর পর লঞ্চ সংখ্যা কমতে শুরু করে। বর্তমানে দুইটিতে এসে পৌছেছে।
লঞ্চ মালিকদের দাবি দুই ঈদসহ বিশেষ উৎসবে প্রত্যাশিত যাত্রী পেলেও বছরের অন্য সময় লোকসান দিতে দিতে লঞ্চ মালিকরা ক্লান্ত। অব্যাহত লোকসানের মুখে এই রুটের কীর্তনখোলা গ্রুপের দুটি, অ্যাডভেঞ্চার গ্রুপের একটি, পারাবত কোম্পানির দুটি, সুরভী গ্রুপের একটি, সুন্দরবন গ্রুপের দুটি এবং এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চ ইতোমধ্যে সার্ভিস বন্ধ রেখেছে। বাকি ১০টি লঞ্চ দুই প্রান্ত থেকে প্রতিদিন চলাচল করলেও যাত্রী সংকটে তারা লোকসান কাটাতে পারছিল না। এ অবস্থায় গত মাসে ঢাকা সদরঘাটে লঞ্চ মালিকরা সভা করেন। সভায় তারা বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে রোটেশন প্রথা চালুর বিষয়ে ঐকমত্য হন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরিশাল-ঢাকা নৌপথের রোটেশন প্রথা চালু হয়। নতুন সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন রাতে ঢাকা থেকে ২টি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়া হচ্ছে এবং একইভাবে দুটি লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি চারদিন পর একটি লঞ্চ রুটে যাত্রী বহনের সুযোগ পাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লঞ্চ কর্মকর্তা জানান, এক সাথে তিন চারটি লঞ্চ চললে লোকসানে পড়তে হয়। তাই মালিকরা দুইটি করে চালানোর সিদ্বান্ত নিয়েছে। এতে বর্তমানে লোকসান হয় না। কেবিন সংকট হয় স্বীকার করে তিনি বলেন, শেষ সময়ে যারা আসে তারা কেবিন পায় না। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এভাবে চলবে। এরপর মালিকরা সিদ্বান্ত নেবে কতটি লঞ্চ বাড়ানো হবে।
এদিকে নৌ-বন্দরে ঘুরে দেখা গেছে, দুইটি লঞ্চের ডেক যাত্রীতে পরিপূর্ন। পন্টুনেও প্রচুর যাত্রী রয়েছে। যাত্রীদের দাবি প্রতিদিন তিন/চারটি করে লঞ্চ চালানো হোক।
যাত্রীদের মন্তব্য লঞ্চ মালিকদের এই রোটেশন প্রথাকে জিম্মি করার কৌশল। তাদের মতে রোটেশন করে যাত্রীদের অসহায় করে দিচ্ছে। তাদের দাবি লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে দিলে যাত্রী হয়রানি বন্ধ হতো।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, নতুন সূচি লঞ্চ মালিকদের টিকে থাকার লড়াই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে যেমন উন্নয়ন হয়েছে সড়ক পথের, তেমনি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় আমাদের ব্যবসা পথে বসে গেছে। এভাবে চললে একসময় হয়তো এই ব্যবসা টিকে থাকবে না। নৌপথে ফের যাত্রী আকর্ষণ করতে সরকার নির্ধারিত ৪০৯ টাকার ডেকযাত্রী ভাড়া ৩০০ টাকা, এক হাজার ৭০০ টাকার সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ টাকা এবং তিন হাজার ৪০০ টাকার ডবল কেবিন ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিষয়েও লঞ্চ মালিকরা ঐকমত্য হন। সাইদুর রহমান রিন্টু আরো বলেন, কেবলমাত্র শত বর্ষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে লঞ্চ ব্যবসা শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে প্রতিদিন প্রতিঘাট থেকে দুটি লঞ্চ রোটেশনে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।