4:09 pm , September 5, 2023

শেবামেকে ছাত্রী র্যাগিং
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে দুই ছাত্রীকে র্যাগিং এর ঘটনা তদন্তে আরো সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা লিখিতভাবে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবরে আবেদন করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বৃদ্ধি করেছেন অধ্যক্ষ। তবে তদন্ত কমিটির তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, কমিটিকেতিনদিন কার্যদিবস সময় বেধে দেওয়া হলেও গত আট দিনেও শেষ হয়নি তদন্ত। এমনকি কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও কলেজ অধ্যক্ষ বলছেন, তদন্তে স্বচ্ছতার জন্য তদন্ত কমিটি আরো সময় চেয়েছে। রবিবার তারা লিখিতভাবে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। তবে তদন্ত শেষ না হলেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্র এবং ছাত্রী হোস্টেলগুলোর সুপারদের দায়িত্ব পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে নতুন শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে হোস্টেল কমিটিতে এখনো কোন শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার। গত ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাতভর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে হোস্টেল সেক্রেটারি ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা এবং সহ-সেক্রেটারি এমবিবিএস ৫ম ব্যাচের নীলিমা হোসেন জুঁইয়ের নেতৃত্বে র্যাগিং এর শিকার হন দুই ছাত্রী। নির্যাতনের এক পর্যায় অচেতন হয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। এরপর তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সুস্থ হয়ে আবার হলে ফেরেন তিনি। ২৬ আগস্ট শনিবার শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের নিকট অভিযোগ নিয়ে যান র্যাগিং এর শিকার অপর ছাত্রী ও তার মা। খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদের ওপর হামলা করেন হোস্টেল সুপার সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সাহা, ডা. মাসুম বিল্লাহ, র্যাগিং এর নেতৃত্ব দেওয়া দুই ছাত্রীর স্বামী ডা. আতিক ও আজিম হোসেন। এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ফায়জুল বাশার। পাশাপাশি র্যাগিং এর অভিযোগ তদন্তে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার সাহাকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন অধ্যক্ষের কার্যালয়ে দাখিল করতে বলা হয়। কিন্তু কমিটি গঠনের ১১ দিন অতিবাহিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। এমনকি ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদও এখনো সম্পন্ন হয়নি বলে দাবি করেছেন ছাত্রী হোস্টেলের নির্ভরযোগ্য সূত্র। আর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলেন, শুরু থেকেই তদন্ত কমিটি নিয়ে বিতর্কে জড়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কার্যক্রমে ধীরগতি সেই বিতর্ককে আরো টেনে ধরছে। র্যাগিং এর ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিলেন ছাত্রী হোস্টেলের সুপার ডা. প্রবীর কুমার সাহা। এখন তদন্ত কমিটিকে তিনিই বিপথে চালানোর চেষ্টা করছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, র্যাগিং এর যে ঘটনা ঘটেছে তা একেবারেই স্পষ্ট। অথচ এটা নিয়ে তদন্ত কমিটি সময়ক্ষেপন করছে। সময় ক্ষেপনের পেছনে ভিন্ন কোন কারণ থাকতে পারে। হোস্টেলগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে হলেও বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যদিও মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবস সময় দেওয়া ছিল। তবে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়নি। তদন্ত কমিটি অধিকতর তদন্ত এবং স্বচ্ছতার জন্য আমার কাছে লিখিতভাবে আরো কিছুদিন সময় চেয়েছে। তাদেরকে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্তে কেন সময় লাগছে বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই। এটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে তদন্ত কমিটি গঠনের সময় শর্তে উল্লেখ ছিল যে, কমিটি চাইলে তদন্তের স্বার্থে সময় বাড়িয়ে নিতে পারবে। তদন্তে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।