3:29 pm , September 4, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মশার যন্ত্রনা ও দু:সহ গরমে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ ঘাটতি বৃদ্ধির ফলে বরিশাল অঞ্চলের দিনের কর্মব্যস্ত মানুষের রাতের শ্রান্তির ঘুমও এখন হারাম হতে চলেছে। হাসপাতালগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘœ ঘটায় ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া সহ সব ধরনের রোগীদের জীবন এখন অনেকটাই ওষ্ঠাগত। এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন। ফলে শয্যা দূরের কথা বেশীরভাগ রোগীর মেঝেতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এর উপরে রাতের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের ফলে প্রায় প্রতিটি সরকারী হাসপতালেই অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
রোববার রাত ১০টা থেকে মহানগরী সহ বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো গ্রীড সাব-স্টেশন ও ৩৩/১১ কেভী সাব-স্টেশনগুলোতে চাহিদার ৩০ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছাটাই শুরু হয়। অথচ শুধু বরিশাল অঞ্চল থেকেই বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিনই রাতভর লোডশেডিং এ জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসছে। বরিশাল অঞ্চলে সান্ধ্য পীক আওয়ারে মোট প্রায় ৫শ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেড়শ মেগাওয়াটেরও বেশী লোডশেডিং করে পাওয়ার সেল এর সেন্ট্রাল লোড ডেসপাস সেন্টার ও পশ্চিম জোনের আঞ্চলিক লোড ডেসপাস সেন্টার। বিষয়টি নিয়ে পিডিবি, পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী-ওজোপাডিকো এবং সঞ্চালন কোম্পানী- পিজিসিবি’র ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করা হলেও সুস্পষ্ট কোন উত্তর মেলেনি। তবে সারাদেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতির ফলেই বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট বলে’ মন্তব্য করেছেন সবাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আমদানী নির্ভর ডিজেল সংকটের কারণেই বিপুল সংখ্যক উৎপাদন ইউনিট শুধুমাত্র সান্ধ্য পীক আওয়ার ছাড়া চালান হচ্ছে না। একারণে রাত ১০টার পরেই উৎপাদন ঘাটতির সাথে লোডশেডিং এর পরিমানও ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফলে রাত যত বাড়ে দক্ষিণের একের পর এক জনপদ অন্ধকারে ঢেকে যায়। পুরো দক্ষিনের জনপদে নিরাপাত্তার সংকটও বাড়ছে। শিল্প উৎপাদেন মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। বেশীরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানেই রাতের শিফটে শ্রমিকদের বেতন গুনতে হলেও বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন বন্ধ থাকছে। এমনকি রাতের এ লোডশেডিং প্রায়শই দিনের বেলাতেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে দিন-রাতের ভয়াবহ লোডশেডিং এ সরকারি-বেসরকারী অফিস ছাড়াও সাধারন মানুষের বাসাবাড়ীতে পানি সরবরাহ পর্যন্ত বিঘিœত হচ্ছে। গত কয়েক দিনের ৩৫-৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাথে এ বিদ্যুৎ ঘাটতি সমাজের সর্বস্তরেই সংকট সৃষ্টি করছে। বরিশাল সামিট পাওয়ারের ১১০ মেগাওয়াট, ভোলাতে পিডিবির ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড পাওয়ার স্টেশন থেকে ১৯০ মেগাওয়াট ছাড়াও একটি বেসরকারী পাওয়ার স্টেশনের ২২৫ মেগাওয়াট এবং পটুয়াখালীতে ইউনাইটড পাওয়ারের ১৫৫ মেগাওয়াট এবং পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থেকে ১,৩২০ মেগাওয়াট ও তালতলী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থেকে আরো ৩৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়াও ভোলাতে অপর একটি বেসরকারী উৎপাদন কেন্দ্রের প্রায় ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দ্বীপ জেলাটি ছাড়াও পটুয়াখালীর কিছু এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হলেও এ অঞ্চলে চাহিদার প্রায় ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছেনা বিদ্যুৎ বিভাগের ‘সেন্ট্রাল লোড ডেসপাস সেন্টার-সিএলডিসি’ থেকে।