4:10 pm , September 2, 2023

খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে বাজার থেকে
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভালো নেই বরিশাল নগরীতে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। পেশা বদলিয়েও সংসারের বোঝা বহন করতে না পেরে হতাশ জীবনযাপন করছেন অনেকে। নগরীতে বসবাসকারী রিকশাচালক, দোকানের কর্মী, শ্রমিক, গৃহকর্মীসহ নিম্ন আয়ের বেশকয়েকজন মানুষের সাথে কথা বলে তাদের মানবেতর জীবনযাপনের দূর্বিষহ চিত্র জানা গেছে। পাশাপাশি মধ্যবিত্ত আয়ের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, অবস্থা এমন হয়েছে, না পারছি নিজেরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে না পারছি কারো কাছে হাত পাততে। নগরীর কাউনিয়া আকন বাড়ী এলাকায় বসে গতকাল শনিবার সকালে বেশ কয়েকজনের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। দুপুরের রান্নার জন্য তরকারি, তেল ও চাল কিনতে সকাল ১০টার দিকে বাজারে আসেন ৫০ উর্ধ্ব এক মহিলা। প্রথমেই চাল আর তেল কিনতে গিয়ে তাকে হতাশ হতে হয়। তিনি যে দোকান থেকে বাকিতে মালামাল কিনেন সেই দোকানী জানিয়ে দিয়েছেন আগের টাকা না দিলে নতুন করে আর বাকি দিবেনা। হতাশাচিত্তে এরপর তিনি ভ্যানে শাকসবজি বিক্রি করা কয়েকজন বিক্রেতার সাথে পটল, করলা, আর পেপের দর জিজ্ঞেস করে না কিনেই সেখান থেকে যান মাছ বিক্রেতাদের কাছে। বড় আর জাটকা ইলিশের দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে সবশেষ তিনি শূণ্য হাতে হাটা শুরু করেন নিজ গন্তব্যের দিকে। এরপর দেখা মেলে আরো একটু বয়স্ক মহিলার। তিনি এক মুদি দোকানে গিয়ে এক কেজি চালের দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানী ৬০ টাকা বলেন। সেখান থেকে হাটা শুরু করে অন্য দুটি দোকানে গিয়ে জানতে পারেন নিম্নে চালের কেজি ৫০ টাকা। কিন্তু এত দামে চাল কেনার টাকা না থাকায় তিনি শুধু ২০ টাকার মসুর ডাল কিনেই ফিরে যান। আগে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত থাকা ওই মহিলা বলেন, ‘দাম বেশী থাকায় চাল কিনতে পারি নাই। এখন প্রতিবেশি কারও কাছ থেকে একটু চাল ধার করে রান্না করতে হবে।’ আগে গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালাতে পারলেও এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় তাকে কেউ কাজেও রাখতে চাননা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন মনির হোসেন (ছদ্ন নাম)। পরিবার নিয়ে একটি টিনশেডে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া থাকেন। দুই সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে তার বসবাস। যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আগে মাসে ২ দিন মুরগি কিনতাম, এখন সেটা একদিনে এনেছি।’ এদিকে নগরীর পুরান বাজারে বসা কথা হয় আরেক বেসরকারী চাকরিজীবীর সাথে। তিনি বলেন, ‘বাসার সামনেই সবজি কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু ১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বের এই বাজারে আসলে কেজিতে ৫-১০ টাকা সাশ্রয় হয়। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ সমন্বয় করতে এই বাজার থেকেই কিছুদিন ধরে নিয়মিত বাজার করছি।’ আরেক ক্রেতা জানান, তার বাসা কাউনিয়া মনসা বাড়ি এলাকায়। মাছ কেনার উদ্দেশ্যে শুক্রবার বিকেলে নথুল্লাবাদ এলাকার বাজারে যান। সেখান থেকে কিছু কিনতে না পেরে যান নগরীর চৌমাথা এলাকায়। ঘন্টাখানেক অবস্থান করে সেখান থেকে কিছু কিনতে না পেরে তিনি খালি হাতেই বাসায় ফিরেন। অফিস বন্ধ থাকায় আজ (শনিবার) তিনি প্রথমে কাউনিয়া আকন বাড়ির ভ্রাম্যমান মাছ বিত্রেতাদের কাছে যান। সেখান থেকেও কিছু কিনতে না পেরে এখন এসেছেন পুরান বাজানে। এখান থেকে কিছু কেনা না গেলে সবশেষ যাবেন পোর্ট রোড বাজারে। তিনি জানান শুক্রবার যে জাটকা মাছ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা আজ বেড়ে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, ‘৮ বছর ধরে ব্যবসা করি। বর্তমানে বিক্রি কমে গেছে। মুরগির দাম ১৬০ টাকা কেজি হলেও এটা রান্না করতে তো তেল সহ মসলা লাগে। এই জন্য অনেকেই এখন মুরগি কিনছে না। প্রতিদিন ৪-৫ হাজার টাকার মুরগি বিক্রি হলেও এখন সেটা ২-৩ হাজারে নেমে এসেছে। মুরগি বিক্রেতার পাশাপাশি কথা হয় বেশ কয়েকজন মাছ বিক্রেতার সাথে। তারা জানান, বিভিন্ন কারনে বাজারে যেমন মাছের ঘাটতি তেমনি প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। তার উপর দ্রব্যমূল্য বাড়ার জন্য বিক্রিও কমে গেছে। তাই আমাদের লাভও কম হচ্ছে। ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে চাপে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। প্রতিদিন খাবার কমিয়ে দিয়ে, একটু সস্তার বাজার খুঁজে কেনাকাটা করে কোনোরকমে পরিবার সামলাচ্ছে এই মানুষেরা।