নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি কার ? নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি কার ? - ajkerparibartan.com
নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি কার ?

4:08 pm , September 2, 2023

 

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নগরীর ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানটি কার এ প্রশ্ন এখন নগরবাসীর মনে। প্রাতঃ ও বৈকালিন ভ্রমণকারী সহ নগরবাসী একটু শ্রান্তি খুঁজতে ঐতিহ্যবাহী এ উদ্যানে গিয়ে এখন চরম অস্বস্তির শিকার হচ্ছেন। অসংখ্য পথ খাবারের দোকান উদ্যানটিকে ঘিরে ধরার সাথে সাম্প্রতিককালে মাঠের অভ্যন্তর ভাগও দখলে নিয়েছে। এসব দোকানের নানা বর্জ্য মাঠের মধ্যে এবং পাশের ডিসি লেকে ফেলায় প্রায়ই লেকটির পানি দূষিত হয়ে দূর্গন্ধ ছড়ায়। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে পুরো উদ্যানের নানা অবকাঠামো বিনষ্ট হচ্ছে। এ উদ্যানটির দেখভালের কেউ আছে বলেও দৃশ্যমান নয়। বৃটিশ যুগে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মিঃ বেল প্রায় পৌনে ৯ একর সরকারী খাস জমির উপর এ উদ্যানটি গড়ে তুলে ছিলেন। তখন তার নাম অনুসারেই উদ্যানটির নামকরন করা হয় ‘বেল পার্ক’। তবে গণপূর্ত বিভাগ এ পার্কটির মালিকানা সহ তার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব লাভ করে। যদিও বছর কয়েক আগে উদ্যানটির দুই দিকে জেলা প্রশাসন থেকে নকশা খচিত বিশাল প্রস্তর খন্ডে ভূমির মালিক ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশাল সফরকালে একটি সুন্দর নান্দনিক উদ্যান গড়ে তোলার লক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’র ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৪ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র মজিবর রহমান সারোয়ারের উদ্যোগে সরকারী প্রায় ৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে উদ্যানটির চারপাশে ওয়াকওয়ে, বসার জন্য বেঞ্চ, ছাতা সহ শৌচাগার ও বিশ্রমাগার নির্মান ছাড়াও পুরো উদ্যানটি জুড়ে দৃষ্টি নন্দন লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি এখানে শোভা বর্ধনের মত কিছু গাছও রোপন করা হয়। সেই থেকে উদ্যানটির পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব গ্রহন করে সিটি কর্পোরেশন। প্রতিদিনই এ উদ্যানে সকাল-বিকেল অসংখ্য লোক হাটতে ও শ্রান্তি বিনোদনে আসতেন। ২০১১ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন গনপূর্ত মন্ত্রনালয় থেকে তহবিল সংগ্রহ করে দ্বিতীয় ওয়াকওয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করেন। পাশাপাশি উদ্যানটির পূর্বপাশের নালাটি সংস্কার করে সেখানে শাপলার আবাদ করা ছাড়াও সংলগ্ন বান্দ রোডে পাকা ফুটপাথ নির্মান সহ গাছ লাগান হয়। যা এখনো নগরবাসীর চোখ জুড়ায়। দ্বিতীয় দফায় সংস্কারের পরে উদ্যানে প্রাতঃ ও বৈকালিন ভ্রমণকারীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেলেও গত কয়েক বছর ধরে ভ্রমণকারীর চেয়ে আড্ডাবাজদের ভীড় আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। সাথে উদ্যানটির পুরো উত্তর পাশ জুড়ে নানা ধরনের পথ খাবারের দোকান আড্ডাবাজদের জন্য বাড়তি সুবিধা সৃষ্টি করছে।
পাশাপাশি পুরো বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে গত কয়েক বছর ধরে গণপূর্ত বিভাগ ও নগর ভবনের ন্যূনতম কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। বছর চারেক আগে উদ্যানটির পূর্ব পাশের দেয়ালের ওপর থেকে একটি বিশাল এসএস পাইপ ভেঙ্গে একাংশ মাটিতে পড়ে আছে। দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড়ের গ্রীলের বেশীরভাগই দেয়াল থেকে খসে পড়ে আছে। গত কয়েক বছর ধরে উদ্যানটির উত্তর প্রান্তে বৃক্ষমেলা আয়োজন করতে গিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু ফেলায় মাঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই ওয়াকওয়ে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় দেখার কেউ নেই। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উদ্যানে জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তার পরে আর উদ্যানটির কোন মেরামত, রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কার হয়নি। শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন শ্রমিক ওয়াকওয়ে ঝাড়ু দেয়া ছাড়া কাউকে এখানে দেখা যায়না।
এমনকি উদ্যানের অভ্যন্তরেও এখন আগের সুস্থ সামাজিক পরিবেশ অনেকটাই বিপন্ন। উদ্যানটির ওয়াকওয়েতে নারী-পুরুষ এখন আর নির্বিঘ্নে, নির্ভরতার সাথে হাটতে আস্থা রাখতে পারছেন না। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক বখাটে ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের অনৈতিক বিচরনে গোটা উদ্যানটির পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অনেক ছেলে মেয়েদের প্রেমের লীলাভূমিতে পরিনত হয়েছে এ উদ্যান। পড়ার টেবিল ছেড়ে গভীর রাত পর্যন্ত কতিপয় ছাত্র-ছাত্রীর অনৈতিক বিচরনে উদ্যানের সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন হলেও তা দেখার কেউ নেই।
উদ্যানটির পশ্চিম পাড়ে ‘ভিআইপি এলাকা’ খ্যাত রাজা বাহাদুর রোডের পাশের শতবর্ষী রেইন্ট্রি ও কৃষ্ণচূড়া সহ অনেক গাছই ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দূর্যোগে। ওই সড়ক ও বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মধ্যবর্তী লেকটির পানি দূষিত হয়ে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বঙ্গবন্ধু উদ্যানেই প্রতিবছর ‘বৃক্ষ মেলায় বিভাগ ও জেলার শীর্ষ কর্মকর্তা সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও পরিবেশের জন্য বৃক্ষ রোপনের অপরিহার্যতা নিয়ে অনেক ভাল কথা বলেন। কিন্তু সেই মেলার পরে অনেকেই নিজেদের উপদেশের কথা মনে রাখেন না। গত কয়েক বছরে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও সংলগ্ন সড়ক থেকে অনেক গাছ বিলুপ্ত হলেও কেউ নতুন করে একটি বৃক্ষ রোপন করেননি। এমনকি বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অভ্যন্তরে অনেক গাছও ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে শনিবার দিনভর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে তাদের সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT