3:50 pm , September 1, 2023

৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে গত মাসেই প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। আর সরকারী হাসপাতালগুলোতে এপর্যন্ত যে ৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২৯ জনই মারা গেছেন গতমাসে। এরমধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ২৭ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দ্বীপজেলা ভোলাতে ৭ জন, পিরোজপুর ও বরগুনাতে ৩ জন করে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়ছে। ডেঙ্গুতে মৃত ৪০ জনের মধ্যে অন্তত ২৫ জনই নারী। ইতোমধ্যে শুধু সরকারী হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যাটা ১৪ হাজারের কাছে পৌঁছেছে। এবার শহরের মত গ্রামাঞ্চলেও বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তিকৃত ও মৃতদের একটি বড় অংশই শহরের বাইরের বলে জানা গেছে। গত আগষ্টের পুরো মাসজুড়ে বরিশাল বিভাগের সর্বত্রই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সরকারী হাসপাতালগুলোর মেঝেতেও অনেক রোগীর ঠাঁই মেলেনি। এমনকি আগষ্টের শেষ সপ্তাহ জুড়ে আক্রান্তের সংখ্যায় কমতি ছিলনা। তবে গত মাসের মধ্যভাগে একদিনে সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যা চারশ এর উপরে উঠলেও এখন তা তিনশ এর সামান্য নীচে। কিন্তু এযাবতকালের সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মশাবাহী ডেঙ্গুতে আক্রান্তের পরেও বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে তেমন কোন প্রতিকার লক্ষণীয় নয়। তবে জেলা প্রশাসন ডেঙ্গু নিয়ে জন সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণসহ কিছু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বরিশাল মহানগরীতে মশক নিধনে তেমন কোন কর্মকান্ড লক্ষণীয় নয়। প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীতে মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। এ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ১২টি ফগার মেশিনের সাথে কিছু হ্যান্ড স্প্রেয়ার দিয়ে মাঝে মধ্যে মশক নিয়ন্ত্রনের মহড়া দেয়া হলেও নগরবাসী এখনো মশার জ¦ালায় অতিষ্ঠ। নগরীর ড্রেন ও ঝোপঝাড়গুলো পরিস্কার করার লোকবলের সংকট এবং আন্তরিকতার ঘাটতিতে নগরীজুড়ে মশার উৎপাত অব্যাহত রয়েছে। প্রায় একই চিত্র দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো শহর ও গ্রামাঞ্চলেও। অপরদিকে সরকারী হাসপাতালে গত ৪ মাসে প্রায় ১৪ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও বাস্তবে এর তিন গুনেরও বেশী মানুষ মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মৃত্যুর সংখ্যাও সরকারী হিসেবের চেয়ে আরো বেশী বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় সবাই প্রাথমিকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করছেন। এদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন, তারাই শুধু সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে, সময়মত চিকিৎসায় ৯৯ভাগ মানুষই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহনের বিকল্প নেই। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, ডায়রিয়া ও করোনার মত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায়ও বরিশাল শীর্ষে। জেলার ১০টি উপজেলায় শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। যারমধ্যে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন। এখানে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। পটুয়াখালীতেও প্রায় ৪ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোন মৃত্যু নেই। ভোলাতে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১৬শ, মারা গেছেন ৭ জন। পিরোজপুরে ভর্তিকৃত প্রায় আড়াই হাজার রোগীর মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। বরগুনাতেও ভর্তিকৃত প্রায় দেড় হাজার রোগীর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝালাকাঠী জেলায় প্রায় ৪শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কোন মৃত্যু নেই। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট এ জেলাটির বেশীরভাগ ডেঙ্গু রোগীই বরিশালে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য আসছে। এদিকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলার দুটি মেডিকেল কলেজ হাপাতাল ছাড়াও ৬টি জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা হাসপাতালে ৮২১ জন ডেঙ্গুু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। যারমধ্যে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালেই ১৬০ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগের সরকারী হাসপাতালগুলোতে আরো ১৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় ১৪ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৯ জনই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। এ তথ্য বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের।