নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নগরীতে হকারমুক্ত ফুটপাত এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিনোদন স্থানে আধুনিক শৌচাগার নির্মাণে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নগরীতে হকারমুক্ত ফুটপাত এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিনোদন স্থানে আধুনিক শৌচাগার নির্মাণে - ajkerparibartan.com
নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নগরীতে হকারমুক্ত ফুটপাত এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিনোদন স্থানে আধুনিক শৌচাগার নির্মাণে

3:46 pm , August 31, 2023

নারী বান্ধব নয় নগরী নারীদের ভোগান্তি চরমে
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ রুপাতলী থেকে নথুল্লাবাদ প্রতিদিন সকালে ইজিবাইক ও সিএনজিতে চড়ার প্রতিযোগিতা কর্মজীবী নারীদের। আর গৃহিনী কিংবা কর্মজীবী উভয়কেই পুরুষের ভীড় ঠেলে শুধু গাড়িতে নয়, পথচলায়ও ভোগান্তি পোহাতে হয় হাঁটে, মাঠে বাজারে সর্বত্র। এমনকি নগরীর বিনোদন স্থানগুলোতে নারীরা অস্বস্তিতে ভোগেন বলে জানান সামাজিক ও উন্নয়ন সংস্থার নারী নেত্রীরা। তাদের দাবী নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে নগরীতে হকারমুক্ত ফুটপাত এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বিনোদন স্থানে আধুনিক শৌচাগার নির্মাণের। পাশাপাশি যুগোপযোগী পদক্ষেপ চান তারা। কাগজে কলমে নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেখতে চান সবাই। যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে এসব বিষয়েরই সমাধান রয়েছে এবং তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রতিনিধি। বরিশালে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী হলেও নগরীতে তাদের চলাফেরা বা অন্যান্য  সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যে কারণে এই নগরীকে নারীবান্ধব বলে মনে করেন না স্থানীয় নারী নেত্রীরা। তাদের মতে, বরিশাল নগরী নারী বা শিশুবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত কোনো মেয়রই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা বা উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ নগরীকে শিশুবান্ধব ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি কখনো। তবে ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একমাত্র নারী মেয়র প্রার্থী বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তী তার নির্বাচনী ইশতেহারে নারীদের উন্নয়নে কর্মজীবী হোস্টেল, ডে কেয়ার সেন্টারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছিলেন। এরপর গত ২০২৩ এর নির্বাচনে প্রত্যেক মেয়র প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে একটু হলেও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছেন। নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত তার ৩৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিবেশ সৃষ্টির অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বরিশাল নগরকে গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কলোনিবাসীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন এবং বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন করা হবে। বরিশাল নগরীতে গ্যাস সংযোগ প্রদান, প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে বরিশালকে ডিজিটাল নগর হিসেবে গড়ে তোলার কথাও বলেছেন আবুল খায়ের। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রদানসহ সরকার প্রবর্তিত সব ধরনের ভাতা যথাযথভাবে বণ্টন করা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নগরের বিভিন্ন সড়কের নামকরণের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ইশতেহারে। তিনি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ নিশ্চিতের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ইশতেহারে বলেছেন, নগরে বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক নির্মাণ করা এবং বরিশালকে শিল্প-বাণিজ্য ও পর্যটন নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরপর নগরীর বিভিন্ন জনসভা ও সমাবেশে খোকন সেরনিয়াবাত তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার আশ্বাস দিচ্ছেন সবসময়।
বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। অর্থাৎ নারীদের সংখ্যা বেশি। তাই নারীদের গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করেন সনাক এর সাবেক সভাপতি শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, একটা সুন্দর বসবাস উপযোগী নগরীর প্রধান শর্তই হচ্ছে একজন সৎ ও দেশপ্রেমিক জনপ্রতিনিধি। যিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নগর পরিকল্পনা সাজাবেন। শাহ সাজেদা আরো বলেন, আমরা ও বরিশালের নারী নেত্রীরা মেয়র এর কাছে নারীবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ, নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য দূর করা, মাদার্স কর্নার প্রতিষ্ঠা, হাঁটাচলার উপযোগী ফুটপাতসহ বেশকিছু প্রস্তাবনা আগেও দিয়েছি। এখনও দিয়ে যাচ্ছি।
বেসরকারী সংস্থা আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে বরিশাল নগরীতে নারীদের গুরুত্ব দেয়া হলেও তা কখনো বাস্তবায়ন হয়না। অথচ বিগত চারটি সিটি নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়রের কোন সদিচ্ছা ছিলোনা বরিশালকে নারীবান্ধব করে গড়ে তোলার। এমনকি বার্ষিক বাজেটেও এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি। ফলে এখনও নগরীতে নারীরা চলাফেরায়, কর্মস্থলে সমান অধিকার প্রাপ্তিতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, বরিশাল নগরীতে নারী ভোটার পুরুষের তুলনায় বেশি হলেও তাদেরই অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। শ্রমজীবী নারীরা মজুরি বৈষম্যের শিকার। নগর কর্তৃপক্ষের উচিত শ্রমজীবী নারীদের অধিকার রক্ষায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা। কর্মজীবী মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের কোথায় রেখে কর্মস্থলে যাবেন তার কোন সুব্যবস্থা নেই। এছাড়াও সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চা খুবই জরুরী। সমালোচক না থাকলে সুন্দরের সৃষ্টি হয়না বলে মনে করেন কাজল।
বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা পার্কে নিয়মিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক আড্ডার আয়োজক বরিশাল সাহিত্য সংসদ (বসাস) এর কোষাধ্যক্ষ ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নারী নেত্রী রোমানা জিহাদ বলেন, নগরীতে স্বাচ্ছন্দ্যে নারীদের চলাচলেও নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী ছাত্রীরা ফুটপাত ধরে চলতে গিয়ে কিংবা গাড়িতে প্রতিনিয়ত ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন। অথচ নারীদের ভোট নিয়ে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরা এসব বিষয়ে কখনও মাথা ঘামান না। এখনও একজন নারী সহজে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে পারেন না। এই মুক্তিযোদ্ধা পার্কে অনেক নারী শিশু ভ্রমণে আসেন, আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকা- করছি। কিন্তু ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য বা বৃষ্টি হলে আমাদের নারীদের কোনো সুবিধা নেই এখানে। তিনি আরো বলেন, শুধু এখানেই নয়, নগরীর কোনো বিনোদন পার্কে নারীদের জন্য পৃথক কোনো সুব্যবস্থা নেই। এমনকি হাট বাজার বা মার্কেটেও না।
নারী নেত্রী বিএনপির বিভাগীয়  সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, বিএনপি সর্বক্ষেত্রে নারীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিগত সময়ে বিএনপির মেয়ররা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বরিশালকে নারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের বিদ্বেষমূলক আচরণের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও মজিবুর রহমান সরোয়ার ও আহসান হাবিব কামালের সময় বরিশালে নারীদের কোথাও কখনো হয়রানি হতে হয়নি। যা এখন পদে পদে ঘটছে।  অবশ্য এজন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধিটাও বড় কারণ বলে মনে করেন বিলকিস জাহান।
বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম বলেন, বিএনপি নেতারা নারীদের সমান সুযোগ দেয়ার কথা বললেও তারাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি বিরোধীতা করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। তার প্রমানতো উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আমি নিজেই।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত এর সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহ বলেন, খোকন সেরনিয়াবাত এর নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আমি বরিশালের প্রতিটি সড়কে, বস্তিতে, গৃহিণী ও কর্মজীবী নারীদের সাথে কথা বলে তাদের যেসব সমস্যা চিহ্নিত করেছি, তা সবকিছু আমার মনে আছে। আমি তা খোকন সেরনিয়াবাতকে জানিয়েছি এবং সেসব সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে তার নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হয়েছে।
লুনা আব্দুল্লাহ আরো বলেন, বরিশালবাসী নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। কেননা খোকন সেরনিয়াবাত কখনোই তার ওয়াদার বরখেলাপ করবেন না। নির্বাচনী প্রতিটি প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করবেন এবং শিশু ও নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে বরিশালে।
তিনি এসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগ এর উদাহরণ তুলে ধরেন এবং বলেন, এই দশ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের দশটি দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
উল্লেখ্য : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৪ সালে গঠনের পর দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে মোট দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগ নামে পরিচিত। উদ্যোগগুলো হলো; (এক) একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক), (দুই) আশ্রয়ণ প্রকল্প, (তিন) ডিজিটাল বাংলাদেশ, (চার) শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, (পাঁচ) নারীর ক্ষমতায়ন, (ছয়) ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, (সাত) কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, (আট) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, (নয়) বিনিয়োগ বিকাশ এবং (দশ) পরিবেশ সুরক্ষা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT