শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে - ajkerparibartan.com
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে

4:16 pm , August 29, 2023

জাহাঙ্গীর কবির নানক
আগস্ট মাস বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে এক বীষের বীণায় রক্তস্নাত অশ্রুঝরা প্রাবণধারার মাস। এ মাসেই বাঙালির মহাকালের মহানায়ক ও মহান দার্শনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নারকীয়ভাবে হত্যা করেছিলো মানুষরূপী নরপিশাচরা। আগস্টের শোকাতুর আর্তনাদের স্মৃতিকথায় আমাদের হারানোর বেদনাকে আমরা গভীরভাবে অনুভব করি। বাংলার আকাশে যতবারই বিজয়ের লাল সূর্যের লালিমা দৃশ্যমান হয়েছে ততবারই আঁধারের ঘনঘটা এসে বাংলার আলোর আভাকে নিভিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। ঠিক যেমন ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি তার লালিত স্বপ্ন সাধ স্বাধীনতাকে আলিঙ্গন করেছিল, ঠিক তার পরক্ষণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে আবারও বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ঘাতকরা চিরতরে অস্তমিত করবার পায়তারা করেছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব ততদিনে মিশে গিয়েছিলো বাংলার পর্বত, বায়ু, গিরি, জলে । বঙ্গবন্ধু নিজের আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমগ্র বাংলার পথে প্রান্তরে ।বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেও তাঁর আদর্শের টিকিটি পর্যন্ত টলাতে পাড়েনি সেই স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্র।
১৫ আগস্টের হত্যাকা- ছিলো ইতিহাসের কালো যুগে ঘটা সবচেয়ে জঘন্য রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। যুগে যুগে আমরা দেখেছি মহান দার্শনিক, মহান রাজনীতিকদের হত্যা করে তাদের কণ্ঠ রোধ করবার অপতৎপরতা চলেছে সমগ্র বিশ্বে। কিন্তু এভাবে স্বপরিবারে শিশুপুত্রসহ হত্যা সকল রাজনৈতিক হত্যার বর্বরতার সীমারেখার পাত ভেঙে ফেলেছে । এই নারকীয় হত্যাকান্ড কোন সেনা বিদ্রোহ ছিলনা। সুদীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের আচল বেঁধে এই আগস্ট ট্র্যাজেডিকে মঞ্চস্থ করা হয়েছিল দেশি-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যক্ষ মদদে । আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এদেশীয় কিছু খুনীদের ভাড়া করে হত্যাকান্ড চালিয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের উপর। সেই আইএসআই ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিলেন সেসময়ের তৎকালীন উপসেনা প্রধান খুনি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার ছক কষতে ১৯৭৪ থেকে হত্যার পূর্ব পর্যন্ত প্রায়ই মেজর জিয়ার সাথে ব্যক্তিগত বৈঠকে বসেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এর স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরী।সাংবাদিক লরেঞ্জ লিফশুলজ ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর “দৈনিক ইত্তেফাকে” প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সিআইএর তত্ত্বাবধানে ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ে প্রধান ভূমিকা পালন করেন জিয়া। জিয়ার সহযোগিতা ছাড়া ওই হত্যাকা- ঘটতই না। জিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কর্নেল রশীদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন এবং রশীদকে সব সময় আশ্বস্ত করেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে আছেন ।কাজেই জেনারেল জিয়া যে পর্দার আড়াল থেকে এই নারকীয় ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের নেপথ্যপ্রণেতা আজ তা দিবালোকের মতো সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তারা হত্যা করেছিল বাংলার মহিয়সি নারী শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিবকে । হত্যা করে বিশিষ্ট ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, নব বিবাহিতা স্ত্রী সুলতানা কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও তার বিধবা স্ত্রী রোজী জামাল, ১০ বছরের শিশু পুত্র শেখ রাসেল, কর্নেল জামীল সহ অনেককে । তারা হত্যা করে কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ সহ পরিবারের অনান্য সদস্যদের । তারা হত্যা করে ৭১ এ মুজিব বাহিনী প্রধান ও যুব লীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মনি ও তার অন্তসত্তা স্ত্রী আরজু মনিকে।
১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি উদ্ভ্রান্ত চাতক পাখির মতো। সেদিন যেন বাংলার আকাশের হাহাকার আর আর্তনাদের প্রতিধ্বনি মিলিয়ে গিয়েছিল মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র ভেদ করে। সেই আগস্ট ট্র্যাজেডির খলনায়কদের মুখোশ উন্মোচন হলেও অনেকেই এখনও পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। আজ সময় এসেছে জাতির কাছে আড়ালের সেই মানবরূপী দানবদের লেবাস উন্মোচনের। আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়া সেই প্রেতাত্মাদের মুখ ও মুখোশ উন্মোচন হয়নি বলেই ১/১১ এর অঘটনের সময়ে মাননীয় নেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু মুজিব আসবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নুতন সাজে সেজেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনন্দে আত্মহারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। চোখে ঘুম নেই। এমন সময় শেষ রাতে মসজিদে আযানের ধ্বনি “আসসলাতু খাইরুন মিনান নাউন”। তখনই কামানের গোলা ও গুলির শব্দে ঢাকাবাসির ঘুম ভাঙলো। কিছুক্ষণের রেডিও মারফত জানা গেল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। আমি, আমার বন্ধু প্রঃ কাসেম ও ছালাম শহীদ (কানাডা প্রবাসী) ছুটে গেলাম সেরনিয়াবাদ সাহেবের বাসায়। সেখানে যেতেই গেটে একজন পুলিশ বলল এখানে সব শেষ করে দিয়েছে। আপনারা তারাতারি চলে যান আমরা ছুটে গেলাম আমু ভাইয়ের বাসায়। আলু বাজার তার খালার বাসায়। আমু ভাইকে নিয়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম। ততক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুনিদের অনুগত কিছু সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। তাদের আশঙ্কা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হতে পারে।
আমু ভাইকে আত্মগোপনে রেখে আমরা বেরিয়ে গেলাম । ঢাকা মেডিকেলে এসে বরিশালের ডাঃ আরিফ (এখন কানাডা প্রবাসী) আমরা ডাক্তারের এপ্রোন পড়ে ঢাকা মেডিকেলে আহতদের দেখতে যাই। প্রথমে হাসনাত ভাইয়ের স্ত্রী শাহানারা বেগমের সাথে দেখা হলো, ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা। তিনি বললেন সব শেষ হয়ে গেছে। তোমরা সরে পরো, বিপদ ঘটবে তোমাদের। ডাঃ আরিফ আমাদেরকে দ্রুত সরে যেতে বললেন। আমরা সরে গেলাম। ফিরে গেলাম আমু ভাইয়ের গোপনে থাকা জায়গায়। সেখান থেকে বিভিন্ন খবর আসছিল। এ খবরের মধ্যে কোন ভালো খবর ছিলনা। শুধু বিশ্বাস ঘাতকতার খবর তোরা জানালো আমরা হাই কমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। ২/৩ জন রক্ষী বাহিনী ডিস্টিক লিডারের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তারাও কিংকর্তব্য বিমুর । ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শহীদ এর সাথে শত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হল না পরের দিন সকালে আমু ভাই জাতীয় সংসদের হোস্টেলে কয়েকজন এমপির কাছে পাঠালেন সেখানে কি দেখেছিলাম তা বলা যাবেনা ( এখন ডালে চালে মিশে একাকার হয়ে গেছে) সব চেয়ে বড় কষ্ট পেয়েছিলাম বরিশালে ১৫ই আগস্ট সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের একটি অংশ আনন্দ মিছিল ও সব জায়গা থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ভাংচুর করে অসম্মানজনক ভাবে। তখন থেকেই কাদের ভাই, আম জাহাঙ্গীর ভাই, মমতাজ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করি সংগঠিত হওয়ার জন্য মধুর ক্যান্টিনে আনাগোনা চলতো।
২১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কাসেম, মোহন লুকু সহ কয়েকজন ঝটিকা মিছিল করি, “বঙ্গবন্ধুর রক্ত বৃথা যেতে দেব না” “এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে” “খুনি তুই যেই হও বাংলা তোর ছাড়তে হবে”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হলে, এসেম্বলি হলের ছাদের উপরে একটি কোণার রুমে বৈঠক হতো । কাদের ভাই আসতেন, ডঃ নিম ভৌমিকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। মানিকগঞ্জের মহিউদ্দিন ভাই ও তার পূরাণ ঢাকার ছোট ছাপাখানাকে ভূলে গেলে আত্মপ্রবঞ্চনা করা হবে। কারণ এখান থেকেই লিপলেট ছাপিয়ে আমরা সর্বত্র বিলি করতাম।
বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর যখন পুরো দেশে শোকের মাতম চলছিল তখন খুনি মোশতাক বঙ্গভবনে সংসদ সদস্যদের ডাকলেন। আমরা তখন এমপিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিঠি দিয়ে তাদের সতর্ক করেছি। এর পরিণাম ও পরিণতির কথা তাদেরকে বারবার স্মরণ করিয়েছি। আমরা বলেছিলাম – বঙ্গভবনে মোশতাকের ওই সংসদীয় সভায় উপস্থিত হওয়া যাবেনা। ‘ কিন্তু তারপরেও অনেকেই সেই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। শুরু হলো দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করবার এক নোংরা খেলা ।বিভ্রান্ত করা হয়েছিল বিশ্ববাসীকে। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার দুই তৃতীয়াংশ মন্ত্রী সেদিন খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। আমরা গুটিকতক মুজিব সৈনিক সেদিন প্রতিরোধ গড়েছিলাম কিন্তু নেতৃত্বের আত্মসমর্পণের কারনে সে প্রতিরোধ ধোপে টেকেনি।
অনেক নেতার বাড়িতে গিয়েছি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। সারা দেশের ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করেছে। সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে । পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বটতলা থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত কালো পতাকা শোক র?্যালি । নীলক্ষেতে পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বাধা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু মিছিল পৌছে । ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকান্ড । ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব এ নিয়ে নানা কথা রয়েছে(এখন বলা যাবে না) । ৭৬ এর জুলাই মাসে সল্প পরিসরে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে গোপন সভা হয়। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশে কোথায় কি হলো- বরিশালে হরতাল পালন করবো জাতির পিতার প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে বরিশালে যাই লিপলেট সহ সব কিছু নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। ছাত্রলীগ নেতা শহীদ খান(মৃত), শহীদ সেরনিয়াবাত, সুভাষ রায়(মৃত), হেমায়েত হাওলাদার, সামসুদ্দিন খাজা, শহীদ বিশ্বাস, গাওসে আলম লাল, আনিসুর রহমান দুলাল(বর্তমান বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর), নিয়াজ মোস্তফা, শিরাজ শিকদার সহ হরতাল পালন, লিপলেট বিলি সহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন । ৭৬ এর ১৫ই আগস্টের আগে ১০ই আগস্ট একটি গোপনে বৈঠক করার সময় বিএম কলেজ আঙ্গিনা থেকে প্রচুর পুলিশ ও সাদা পোশাকধারীরা আমাকে গ্রেপ্তার করে এবং অমানবিক নির্যাতন চালায়। ঐদিন ছিল শবে বরাতের রাত, সারারাত সদর কতোয়ালি থানায় ফ্যানের রিংয়ের সঙ্গে উল্টো ভাবে ঝুলিয়ে আমার উপর অত্যাচার চালায়। আমার চিৎকারে থানার পার্শবর্তী মানুষেরা শবে বরাতের নামাজও পড়তে পারে নাই ।
আমি যখন গ্রেপ্তার হই তখন আমি বরিশাল জেলা ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমার গ্রেপ্তারের পর অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন আমার বাবা বজলুর রহমান। বরিশালের এসপি-ডিসিকে বলেছিলেন, আমার ছেলেকে আমি বা ওর মা জীবনে একটি চড়ও দিইনি আর আপনারা পবিত্র শবে বরাতের রাতে শিয়াল কুকুরের মত পেটালেন, এটি ভাল করলেন না।
আমি যদি একটি মানুষের কথা না বলি তবে অন্যায় করা হবে । তিনি আমার সহধর্মিনী সৈয়দা আরজুমান বানু নার্গিস ।আমি জেলে থাকতে তার ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন । তিনি যে চিঠিগুলো জেলেখানায় প্রতিনিয়ত মেয়াসাফের মাধ্যমে পাঠাতেন তা ছিলো আমার প্রাণ শক্তি । শুধু তাই নয় আমার পরীক্ষার জন্য তার বান্ধবীর করা নোট ও শীতের কষ্ট নিবারণের জন্য কুসিকাটায় নিজ হাতে করা উলের মাফলার, হাফ সোয়েটার, ফুল সোয়েটার জেলখানায় পাঠিয়েছেন।
আগস্ট মাস এলেই যেন হন্তারকদের রক্তে হায়েনাদের মতো হিংস্রতা কাজ করে। আগস্ট এলেই যেন শিতল মস্তিস্কের ষড়যন্ত্রের জলছাপ দেশজুড়ে দানা বাঁধে। ৭৫’ এর ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য যেন স্বাধীনতা বিরোধীরা সবসময়ই আঁটসাঁট বেধে তৈরি থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর উদ্দেশ্যে ও আওয়ামী লীগকে ইতিহাসের পাতা থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে সেদিন রাবণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল দেশবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দেশীয় বিদেশী দোসর খালেদা তারেক – নিজামীরা । সেদিন আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত সন্ত্রাস, বোমাবাজি, জঙ্গী হামলার প্রতিবাদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সমাবেশে ভয়ংকর গ্রেনেড হামলা হয়। যে আর্জেস গ্রেনেড দিয়ে সব কিছু ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেই গ্রেনেড কারা ব্যবহার করে থাকে, এটা তারা কোথা থেকে পেলো এর তদন্ত করতে গিয়ে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। আমার গ্রেপ্তারের পর অদম্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন আমার বাবা বজলুর রহমান। বিএনপি’র শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে এমনই পৈশাচিক ও নারকীয় বর্বরতা ঘটেছে বহুবার। বানিয়ারচরে গির্জায়, খুলনায় কাদিয়ানিদের মসজিদে, সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজারের মতো ধর্মীয় স্থানে ঘটেছিল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। ২১ আগস্টের ভয়াল হামলায় অবিস্ফোরিত যে গ্রেনেডগুলো পাওয়া গিয়েছিল তার সবই ছিল ‘ আর্জেস গ্রেনেড’। গ্রেনেডের গায়ে লেখা ছিলো পাকিস্তান অর্ডিনেন্স ফ্যাক্টরিজ ।বুঝতে আর বাকি থাকেনা কাদের মদদ আর কোন আঁতাতে এই নারকীয় কর্মযজ্ঞ সাধিত হয়েছে। সেদিনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বুকের রক্ত ঝরেছে, অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষায় সেদিন আওয়ামী লীগের নেতারা মৃত্যুকেও পরোয়া করেনি। সেদিনের কথা স্মৃতিতে ভাসলে মনে আসে, হামলার পরে আমি ও মির্জা আজম সুধাসদনে গিয়েছিলাম। ঢুকে দেখি নেত্রী সোফায় বসা আর সোফার হাতলে বসে নেত্রীর গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন ছোট আপা (শেখ রেহানা) । তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- “বাইচা আছো।’ এরই মধ্যে নেত্রীর নিরাপত্তায় পুরো সুধাসদন কর্ডন করে রেখেছে আমাদের নেতাকর্মীরা। আমি আপাকে বললাম ওদের (বিএনপি-জামায়াত) আর ছাড়ব না । ক্ষমতায় থাকতে দেব না । অনির্দিষ্টকালের হরতাল দিয়ে সব কলাপস করে দিব। রক্তের বদলা নেবই। ওদের পতন না ঘটা পর্যন্ত হরতাল চলবে। যেখানে যার বাড়িঘর আছে, সমস্ত জ্বালিয়ে দেব । নেত্রী তখন বললেন, ‘আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য । আগে আমার মানুষকে বাঁচাও। হরতাল হলে তারা মুভমেন্ট করতে পারবে না। রাজনীতি পরে।’ তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন, ‘আমার জন্য আর কত মানুষ জীবন দিবে? ওদের বাঁচাও। আমার আর রেহানার সমস্ত গহনা বিক্রি করে হলেও ওদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো।’ নেত্রীর নির্দেশে আমাদের চিকিৎসকদের নিয়ে তিনটি চিকিৎসক টিম করে হাসপাতালে নামিয়ে দিতে বললেন। কারণ ড্যাবের ডাক্তাররা (বিএনপি পন্থি ডাক্তার সংগঠন) হাসপাতালগুলি থেকে সরে গেছে, আহতদের কোনো চিকিৎসা তারা দেবেন না। আমরা আমাদের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা সবাই যার যার জায়গা থেকে আহতদের চিকিৎসায় নেমে পড়লেন।
সেদিন রাতে আবার সুধাসদনে গেলাম। তখন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। নেত্রী বললেন- ‘কালকে তোমরা দুইজনে ওই এলাকাটা (সমাবেশস্থল) একটু সংরক্ষণ করো’। পরের দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখলাম, সেখানে পুলিশ রয়েছে। তারা আমাদেরকে আমাদের দলীয় অফিসে ঢুকতে দেবে না । আমরা চিৎকার করে বলতে লাগলাম- “মরাকে আর মারার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। গুলি করেন বুকে। তারপরও ঢুকবো।’ এক সময় ওয়াকিটকিতে কার সঙ্গে যেন কথা বলল পুলিশ। আমরা ধাক্কা দেয়ার পর তারা সরে গেল। আমরা যখন ঢুকলাম, তখনও রক্ত শুকায় নাই । চুপ চুপ রক্ত পড়ে আছে। যুবলীগ অফিসে ঢুকে দেখি আঙ্গুল পরে আছে। পা ফেলতে পারছি না। হাতের আঙুল, নখ, কাঁচা গোশত, হাজার হাজার জুতা পড়ে আছে। লাল ব্যানার ছিঁড়ে লাঠিতে বেঁধে ট্রাকসহ পুরো এলাকা আমরা ঘিরে রাখলাম। গ্রেনেডের চিহ্নিত জায়গাগুলোয় লাল পতাকা টানিয়ে দিলাম। ওইদিন রাতেই (২২ আগস্ট) সিটি করপোরেশনের গাড়ি সব আলামত ধুয়ে ফেলল। ট্রাকটা নিয়ে গেছে। কোনো আলামত তারা রাখেনি । সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে রেখেছে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন গ্রীক পুরাণের পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মনুষ্য রূপ। যিনি দগ্ধ ভস্ম ভেদ করে পুনরায় পরাজয়ের দোরগোড়া থেকে অদম্য ও অমর অক্ষয় রূপে বিজয়ীর বেশে প্রত্যাগমণ করতে পারতেন।দীর্ঘ জেল জীবন কাটিয়ে বাঙালির মুক্তির নায়ক বনে যাওয়া ছিল তারই অনুপম নিদর্শন। মা, মাটি ও মানুষের ভালোবাসা ছিল যার যাপিত জীবনের একমাত্র অবলম্বন ।মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেও তিনি অবিনশ্বর হয়ে জিইয়ে রয়েছেন । বাঙালির প্রতিটি সম্মুখ অগ্রযাত্রায়, পাখির কলাকাকলিতে, নদীর বহমান কলতানে আর বিজয়ের প্রতিটি উল্লসিত কন্ঠের মাঝেই বঙ্গবন্ধুর রক্ত ঋণ প্রবাহমান। বাংলার যে আকাশে আজ মুক্ত বিহঙ্গেরা ওড়ে সে আকাশের বিশালতা আর ব্যক্তির পরিমাপ ফুটে উঠেছিলো বঙ্গবন্ধুর ঐ কালো চশমার অন্তরে নিহিত আঁখি দুটির মাঝে।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। এই শোকের মাতমকে আমাদের শক্তির আতুড়ঘর করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে ২১ আগস্টের কুশীলবদের সম্পর্কে অবগত করতে হবে। আগস্ট ট্র্যাজেডির সকল আস্ফালন থেকে শিক্ষা নিয়েই আমাদের নতুন প্রজন্মকে পুনর্জাগরণের আলোয় উদ্ভাসিত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের অসাম্প্রদায?িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সাধের সোনার বাংলা আমাদের হাতড়িয়ে বেড়াবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সফল রাষ্ট্রনায়ক দেশরতœ শেখ হাসিনা সেই পথেরই দিশারি। পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো তিনি সমাপ্ত করতে হাল ধরেন দেশের। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে তিনি নানাবিধ উন্নয়নের পরিকল্পনা করেন কিন্তু ২০০১ একাত্তরের প্রেতাত্মা জামায়াত বিএনপি ক্ষমতায় এসে তার পরিকল্পনা ভেস্তে দেন । নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৮ ক্ষমতায় এসেই তিনি ভিশন ২০২১ ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান করেন। সারাদেশে তিনি উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু করেন। এনালগ বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয় ডিজিটাল বাংলাদেশে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প; রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন; রামপাল মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট: মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট: ঢাকা মেস র?্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (মেট্রোরেল); এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, মহেশখালী, কক্সবাজার; সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর: পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্প ও দোহাজারী থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, ভূমিহীন-গৃহহীনদের ২ শতক জমি সহ নতুন ঘর প্রদান, ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবাই সাফল্য, কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্য সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন,প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অর্জন, শিল্প ও বানিজ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন ৬৫০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ সহ আরো চলমান উন্নয়নমূলক কাজ অব্যাহত রেখেছেন ।
পিতা মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে প্রবাহিত, যে রক্ত কোনদিন পরাভব মানে না। সেই রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার হাতেই সফলতা অর্জিত হবে। আল্লাহর রহমতে দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT