দানবাক্সের টাকায় বৃদ্ধাশ্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাখাওয়াত দানবাক্সের টাকায় বৃদ্ধাশ্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাখাওয়াত - ajkerparibartan.com
দানবাক্সের টাকায় বৃদ্ধাশ্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাখাওয়াত

4:01 pm , August 28, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বড়লোক ও প্রতিষ্ঠিত ছেলেমেয়েদের বোঝা হয়ে ওঠা বৃদ্ধ পিতা-মাতাদের নিয়ে বরিশাল মহানগরীর কাউনিয়া এলাকায় গড়ে তোলা ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কল্যান সংস্থা নামে বৃদ্ধাশ্রমটি এখন উদ্যোক্তা সাখাওয়াত হোসেনের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ৪০ জন বয়স্ক বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ভাড়া বাড়িতে রেখে লালন-পালন করতে সাখাওয়াত ক্রমশ মানষিকভাবে ভেঙে পড়লেও এখনো হাল ছাড়েননি। সরকার ও সমাজের কোন বিত্তবানের কাছ থেকে কোন ধরনের সহায়তা না পেয়ে ধীরে ধীরে  নিরাশ হয়ে পড়ছেন। সকাল-সন্ধ্যা বরিশাল মহানগরীর পথে পথে হেটে এ পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য অনুদান তুলে অসহায় ও দুঃস্থদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন সাখাওয়াত। শুধুমাত্র সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে বছরে কুড়ি হাজার টাকার অনুদান জুটছে এ বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রেটির জন্য। খাদ্যপণ্য সহ সব কিছুর মূল্যস্ফীতির ফলে এ আশ্রমটির নিবাসীদের দুর্ভোগ আরো  বেড়েছে।নগরীর কাউনিয়া এলাকায় ৩টি ভাড়া বাড়ীতে অসহায় বয়স্কদের ৩ বেলা আহার ও চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে সাখাওয়াত নিঃস্ব হয়ে গেলেও হাল ছাড়ছেন না। কিন্তু আজকের পরে কাল কিভাবে এসব অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেবেন, তার উত্তর জানা নেই সাখাওয়াতের। সাথে এসব অসহায় বয়স্ক নিবাসীদের একটু সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসা নিয়েও লাগাতার বিড়ম্বনা চলছে। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসীন্দা সাখাওয়াত ৪ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। মা হারা সাখাওয়াতের বৃদ্ধ পিতাও তার সাথে এ বৃদ্ধ আশ্রমে আছেন। পথে প্রান্তরে অসহায় মানুষদের মানবেতর জীবন দেখেই ২০১৫ সালে নিজ উদ্যোগে এ আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন সাখাওয়াত। সেই থেকে পথে পথে হেটে অনুদান সংগ্রহ করে আশ্রমের নিবাসীদের মুখে তিন বেলা আহার তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে সে। দুই সন্তানের জনক সাখাওয়াতের স্ত্রী ঢাকার মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে চাকরি করে সন্তানদের নিয়ে সেখানেই বাস করছেন। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্তানদের তাচ্ছিল্যে থাকা বৃদ্ধদের বরিশালে সাখাওয়াতের বয়স্ক কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এমনকি সাখাওয়াত নিজেও পথে প্রান্তরে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধদের তুলে আনেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকেও বয়স্কদের এখানে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকেও মাঝেমধ্যে এ কেন্দ্রে অসহায়দের পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম কোন সহায়তা মিলছে না। আর এসব অসহায় বয়স্কদের দেখভালে ১০ জন স্টাফ সহ নিবাসী নারী ও পুরুষের জন্য ৩টি ভবন ভাড়া নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রটি চলছে। প্রতিমাসে বয়স্কদের খাবার, ওষুধ এবং ভবন ভাড়া সহ প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয় এর উপরে প্রতিনিয়ত অসহায়-দুস্থদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দানবাক্সের টাকায় আর চলছে না। এমনকি আগের চেয়ে দানও কমে এসেছে। ফলে আর্থিক সংকটে বৃদ্ধদের চিকিৎসা ব্যয় মেটাবে, নাকি তাদের তিনবেলা খাবার দেবে, তা নিয়ে উভয় সংকটে সাখাওয়াত। এমনকি এখন প্রায় দিনই দুবেলা খাবার দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর এ আর্থিক সংকটের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সন্তানদের দ্বারা বিতাড়িত বৃদ্ধরা আসতে চাইলেও তাদেরকে গ্রহন করতে পারছেন না সাখাওয়াত। সন্তানদের কাছ থেকে বিতাড়িত বয়স্ক মা-বাবাদের তার বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে একটু স্বস্তি দিতে চাইলেও আর্থিক সংকটে বর্তমান নিবাসীদের রক্ষনাবেক্ষনই সম্ভব হচ্ছে না। সাখাওয়াত ও তার আশ্রয় কেন্দ্রের নিবাসীরা সমাজের বিত্তবান সহ সরকারের কাছে বয়স্ক কেন্দ্রটির প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয়ার মানবিক আবেদন জানিয়েছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT