3:59 pm , August 28, 2023

সাইদুল ইসলাম, বানারীপাড়া ॥ বানারীপাড়ায় পুলিশের রাত্রিকালীন টহল ডিউটিতে ব্যবহৃত ইজিবাইক চালককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার ভোর রাতে উপজেলার চৌয়ারীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে বানারীপাড়া থানার ওসি এসএম মাসুদ আলম চৌধুরী জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর তিনজনকে আটক করা হয়েছে। নিহত ইজিবাইক চালক হলেন ছালাম বেপারী (৬০)। সে উপজেলার চাখার ইউনিয়নের বলহার গ্রামের মৃত আ. কাদের বেপারীর ছেলে। বানারীপাড়া থানার ওসি এসএম মাসুদ আলম চৌধুরী বলেন, থানার টহল ডিউটি দলের সাথে দায়িত্ব পালন করেছে ছালাম বেপারী। রাত তিনটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সে বাড়ি ফেরার পথে চৌয়ারীপাড়া এলাকায় তাকে কয়েকজন আটক করে। তারা ইজিবাইক ভাংচুর করাসহ চালক ছালামকে চোর সন্দেহে পিটিয়েছে কয়েকজন। খবর পেয়ে পুলিশ অপর দুইটি টহল দল গিয়ে ছালামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে ছালাম মারা গেছে। ওসি আরো জানান, ছালামের লাশ ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলো- চৌয়ারীপাড়া এলাকার আব্দুর রব, ইমরান ও আল আমিন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ওসি জানান, রাত ৩ টার দিকে বানারীপাড়া-বরিশাল সড়কের চৌয়ারীপাড়া এলাকা অতিক্রম করছিলো ছালাম। এ সময় স্থানীয় আলমগীর ও আ. রব সহ ১০/১৫ জনের একদল লোক ইজিবাইকের সামনে গাছ ফেলে গতিরোধ করার চেষ্টা করে। তখন ছালাম ডাকাত ভেবে ভয় পেয়ে ইজিবাইকে গতি বাড়িয়ে দেয়। এ সময় গতিরোধকারীরা ছালামের ইজিবাইকের গ্লাসে আঘাত করে। এতে ইজিবাইকের কাঁচ ভেঙ্গে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায়। তখন গতিরোধকারীরা ছালামকে কিল-ঘুষি দেয়াসহ লাঠি দিয়ে বেধরকভাবে পিটিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী জানিয়েছে, এ সময় ছালাম প্রান ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জানিয়ে বলেছিলো ওরে তোরা আমারে মারিস না, আমি চোর না, আমি পুলিশ ডিউটি করে এসেছি। কিন্তু তারা কেউ অনুরোধ রাখেনি, মারধর অব্যাহত রেখেছে। এ সময় ছালাম সকলের কাছে একটু পানি চেয়েও পায়নি। তখন থানায় খবর নেয়ারও অনুরোধ করে বলেছিলো আমাকে মেরো না, আমার বুকে ব্যথা। এক পর্যায়ে তিনি ঢলে পড়েন।
স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, এর আগে ওই এলাকায় চোর এসেছিলো। স্থানীয়রা টের পেয়ে ধাওয়া দেয়। তখন চোর একটি ভ্যান ফেলে চোর পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর কয়েকজন রাস্তায় ছিলো। ওই ইজিবাইক নিয়ে যাচ্ছিলো ছালাম। তারা তাকে থামানোর চেষ্টা করে। ইজিবাইক না থামানোর কারনে চালক ছালামকে চোর ভেবে পিটিয়েছে।
উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, চোর ভেবে ভুল করে মারধর করেছে। যারা মারধর করেছে, তারাই থানা ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। যদি ইচ্ছে করে করতো তাহলে তো তারা থানা ও হাসপাতালে যেতো না বলে মন্তব্য করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
বানারীপাড়া থানার এসআই মাসুদ বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছে। ওই মামলার আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।