4:10 pm , August 25, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে বাসা ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। মালিকরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন ভাড়াটিয়া। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে ভাড়া বাড়ানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তারা। বাড়ি ভাড়া আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় ভাড়াটেরা থাকেন আতঙ্কে। নানা কারণে বাড়ি বদলাতে বাধ্য হন নগরবাসী, বিশেষত মধ্যবিত্তরা। গত ১০ বছরে বরিশাল নগরীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ২৯ বছর আগে আইন হলেও বিধিমালা হয়নি। নেই আইনের প্রয়োগ। ভাড়াটেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা খোড়া অজুহাত দেখিয়ে বাড়ির মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়া বৃদ্ধি করেছেন। বরিশাল নগরীর নাজিরমহল্লা, হাসপাতাল রোড, ঝাউতলা, কাউনিয়া ক্লাব রোড, কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড, ভাটিখানা, ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড, বাংলা বাজার, এন হোসেন এভিনিউ, বর্মন রোড, দপ্তর খানা, আমানতগঞ্জ, সাগরদী, জুমির খান সড়ক, ফকিরবাড়ী রোড, কালিবাড়ী রোড, মল্লিক রোড, শ্রী নাথ চ্যাটার্জী লেন, শীতলা খোলা, নতুন বাজার, কাটপট্টি, লাইন রোড, আগরপুর রোড, সদর রোডের অনামী লেন, জর্ডন রোড, কাউনিয়া হাউজিং, কাউনিয়া জানুকি সিংহ রোড, কাউনিয়া মনসা বাড়ী, বগুড়া রোড, অক্সফোর্ড মিশন সড়ক, দপ্তর খানা, বাজার রোড, হাটখোলা, আমতলা, ঈশ্বর বসু রোড, গোড়াচাঁদ দাস রোড, কলেজ রো, কলেজ এভিনিউ এলাকার ভাড়াটের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, এলাকাভেদে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বাসা ভাড়া বাড়িয়েছেন বাড়ির মালিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল নগরীতে ১০ বছর আগে পাকা ভবনে দুই কক্ষের একটি বাসার ভাড়া ছিল চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। বর্তমানে এ ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৮-১০ হাজার টাকা। নগরীর নাজির মহল্লা এলাকায় দুই কক্ষের একটি বাসা ভাড়া ছিল ৪ হাজার টাকা। যা এখন প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে বসবাসকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বরিশালে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে বাসা ভাড়া। নগরীর কাউনিয়া এলাকার এক শিক্ষক দম্পতি জানান, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাসা ভাড়া ছিল ৮ হাজার টাকা, আগস্ট থেকে বাসার মালিক আরও ২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করেছে। এখন ভাড়া ১০ হাজার টাকা। শীতলা খোলা এলাকায় বসবাসকারী এক ব্যবসায়ী জানান, গত বছর যে বাসায় থাকতাম ভাড়া ছিল ৭ হাজার ৫শ’ টাকা। চলতি বছর থেকে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয় ১০ হাজার টাকা। ফলে বাধ্য হয়ে বাসা বদলাতে হয়। কালিবাড়ী এলাকায় বসবাসকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাড়াটিয়া বলেন প্রতি বছর বাড়ির মালিক ৫শ’ টাকা করে ভাড়া বাড়ান। ফলে ১০ বছর আগে ৪ হাজার টাকার বাসা ভাড়া এখন ১০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। শুধু মাসিক ভাড়া নয়, অগ্রিম হিসেবেও কয়েক মাসের ভাড়া নিচ্ছেন বাড়ির মালিকরা। একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, সব মিলিয়ে মাসিক ভাড়া ২০ হাজার টাকা। আর অগ্রিম দিতে হয়েছে একমাসের ভাড়া। অন্য দিকে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বাড়িওয়ালারা নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গৃহঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ইত্যাদি যুক্তি দেখান। নগরীর নাজির মহল্লা এলাকার এক বাড়িওয়ালা বলেন, সব কিছুর দাম বাড়লে বাড়ি ভাড়া বাড়বে না কেন। কিছু বাড়িওয়ালা অন্যায়ভাবে ভাড়া বাড়াচ্ছেন এটা ঠিক না। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বাড়ি ভাড়া বাড়ান হচ্ছে। তবে সরকারকর্তৃক বাড়ি ভাড়া নির্ধারিত থাকলে সে হারেই ভাড়া নিতেন বলে তিনি জানান। এদিকে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। কয়েক বছর আগেও দুই-আড়াই হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে ৪/৫ জন শিক্ষার্থী মিলে মেস করে থাকতে পারত। যার জনপ্রতি মাসে দিতে হতো ৫০০ টাকা। এখন মেসে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে এক-দেড় হাজার টাকা। এব্যাপারে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্যের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অধ্যাদেশটি প্রথম জারি করা হয় ১৯৬৩ সালে। বর্তমানে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি ১৯৯১ সালের। কিন্তু সরকার এখনও এই আইনের বিধি করেনি। আইনে বলা হয়েছে, কোনো ভাড়াটের কাছে জামানত বা কোনো টাকা দাবি করতে পারবেন না বাড়িওয়ালা। এক মাসের বেশি অগ্রিম ভাড়া নেয়া যাবে না। প্রতি মাসে ভাড়া নেয়ার রসিদ দিতে হবে, নইলে বাড়িওয়ালা অর্থদ-ে দ-িত হবেন। দুই বছর পর্যন্ত ভাড়া বাড়ান যাবে না। ভাড়াটেদের স্বার্থরক্ষায় এমন আরও অনেক কথাই উল্লেখ আছে এ আইনে। এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী উল্লেখ করে ভাড়াটিয়ারা বলছেন, নগরীতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সব ধরনের নৈরাজ্য বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা সময়ের দাবি। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের মধ্যে আলোচনা করে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে বলেও দাবি তাদের।