থ্রী এস পেস্ট্রি শপ একটি পাউরুটি দাম ১১৩ টাকা থ্রী এস পেস্ট্রি শপ একটি পাউরুটি দাম ১১৩ টাকা - ajkerparibartan.com
থ্রী এস পেস্ট্রি শপ একটি পাউরুটি দাম ১১৩ টাকা

4:14 pm , August 23, 2023

একই ওজনের অন্যান্য কোম্পানীর রুটি ৮৫/৯০
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বিভিন্ন মনোহরী দোকান ও বেকারীতে যখন ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি পাউরুটি ৮০, ৮৫ বা ৯৫ টাকা তখন একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান একই ওজনের পাউরুটি বিক্রি করছে ১১৩ টাকায়। দামের এই পার্থক্য নিয়ে গ্রাহকদের অনেকেই অভিযোগ তুলছেন। কেউ কেউ যদিও মানের বিচার করছেন, তারপরও দাম সকলের সমান হলেই ভালো বলে মনে করেন গ্রাহকদের বেশিরভাগ অংশ। অনুসন্ধানে জানাগেছে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছে থ্রী এস পেস্ট্রি শপও। তাদের দাবী তাদের দোকানের পণ্য কিনলে সবকিছুর সাথে একটি উন্নতমানের ব্যাগ দেয়া হয়। এই ব্যাগের টাকার হিসেবও রুটি বা অন্যান্য পণ্যের সাথে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র। একমাত্র দামী কেক না কিনলে অন্যান্য পণ্যের সাথে একটি নেটের জালি দেয়া হয় শুধু। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠান সমিতিভুক্ত নয় এবং এদের বিএসটিআইয়ের অনুমোদনও নেই বলে দাবী বেকারী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের। তবে ১১০ টাকায় পাউরুটি বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ জসিম সবাইকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, আমার প্রতিষ্ঠানের পাউরুটির মান আর এই শহরের অন্যদের তৈরি পাউরুটির মানে অনেক ব্যবধান রয়েছে। আমি যেসব উপকরণ ব্যবহার করছি তা যদি তারা ব্যবহার করে পাউরুটি তৈরি করতেন তবে তারা দাম আরো বেশি নিতেন। বর্তমান বাজারের উর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে আমাকে দাম আরো বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে বুধবার বরিশালের কয়েকটি পাউরুটি তৈরি কারখানা ও বেকারির দোকান ইত্যাদি, শাহাবুদ্দিন, আল আমিন, চাঁন এবং থ্রী এস পেস্ট্রি শপ ঘুরে জানা গেছে এসব তথ্য। ৮০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটি শাহাবুদ্দিন বেকারী, আল আমিন ও ইত্যাদি ফুড বিক্রি করছেন ৯৫ টাকা দরে। ফ্রেশ পাউরুটি ৮৫ টাকা এবং থ্রী এস পেস্ট্রি শপে একই পাউরুটি ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দামের এই হেরফের অন্যান্য বিস্কুট, কেক বা ছোট রুটিতেও। থ্রী এস পেস্ট্রি শপে তিন ধরনের পাউরুটি রয়েছে। যা ৫০, ৭০ ও ১১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সাইজের ছোট, মাঝারি ও বড় পাউরুটি অন্যরা বিক্রি করছেন ৪৫, ৬৫ ও ৯৫ টাকায়। দামের এই তারতম্য এবং সমিতিভুক্ত না হওয়া নিয়ে থ্রী এস পেস্ট্রি শপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সমিতির সভাপতি ও ফ্রেশ বেকারির মালিক কাজী মামুন।
তিনি বলেন, বেকারী মালিক সমিতিভুক্ত ৪০টির মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। এজন্য সমিতির নির্ধারিত মূল্য তালিকা রয়েছে। যেখান ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি পাউরুটির পাইকারি মূল্য ৮০ টাকা খুচরা মূল্য ৮৫ টাকা। এর উপরে যারা বিক্রি করে তারা কেউই সমিতি ভুক্ত নয়। এমনকি তাদের বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পর্যন্ত নেই বলে জানান তিনি।
মামুন আরো বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ব্যবসা করছি। অথচ এরা এসেই কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে। আমি এজন্য জেলা প্রশাসনের মিটিং এ বারবার প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে অনুরোধ জানিয়ে আসছি।
বরিশালের মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ও বেকারি ঘুরে যদিও হাতেগোনা কয়েকটি পাউরুটি তৈরি কারখানার নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে লোকমুখে প্রচলিত বেকারি হিসেবে চকবাজার রোডের চাঁন বেকারী অন্যতম। অনেক পুরাতন এই বেকারীর কারখানা এখনো সনাতন পদ্ধতিতে রুটি, বিস্কুট, কেকসহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করছে। তাদের দোকানেও ৮০০ গ্রাম ওজনের পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আগে এটি ছিলো ৭৫ টাকা। বরিশালের জেলা পরিষদ মার্কেটের বিপরীতে অবস্থিত হাজী ফকির চাঁন বেকারীর ম্যানেজার তোতা মিয়া বলেন, জিনিসপত্রের যেভাবে দাম বাড়ছে তার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে রুটির দামও বাড়াতে হবে। আমরা ময়দার দাম বাড়ার পর ৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০০ গ্রাম একটি রুটি ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। এরপর ইতিমধ্যে চিনি, তেল ও ডিমের দাম বেড়েছে। আমরা এখনো দাম সমন্বয় করিনি তাই একই দাম রয়ে গেছে। তাছাড়া পুরাতন বা সনাতন পদ্ধতি ও আধুনিক পদ্ধতির একটা পার্থক্য আছে। যারা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তাদের উৎপাদন খরচ বেশি বলে জানান তোতা মিয়া।
বরিশালের থ্রী এস পেস্ট্রি শপের স্বত্বাধিকারী মোঃ জসিম মৃধা । তিনি ও তার ছোটো ভাই আলাউদ্দিন দুজনেই সৌদি আরবের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে শেফ হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে বরিশালে ফিরে এসে তারা থ্রী এস পেস্ট্রি শপ চালু করেন নতুন বাজার সংলগ্ন বনমালী গাঙ্গুলি এর সামনে। সেখান থেকে আজ বরিশালে চারটি, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীতে ১টি করে মোট ৬টি দোকান এবং তিনটি কারখানায় প্রায় ১০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান এখন এই থ্রী এস পেস্ট্রি শপকে ঘিরে । মোঃ জসিম তার গুদাম, কারখানা এবং পাউরুটি তৈরির উপকরণ দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন বরিশালের অন্যসব কারখানার প্রতি। তাদের কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, খাদ্যের সব উপকরণ তীর ও ফ্রেশ থেকে আসে। দামি বাটার ও গুড়োদুধসহ অন্যান্য উপকরণ। পাউরুটি তৈরি হয় অত্যাধুনিক মেশিনে।  দু-একটি ছোটখাটো ভুল ছাড়া থ্রী এস পেস্ট্রি শপের আর কোনো সমস্যা খুঁজে পাননি বলে জানান বরিশাল ভোক্তা অধিকারের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারীও। তিনি জানালেন, দামের তারতম্যের সাথে মানেরও যথেষ্ট তারতম্য  রয়েছে। ১১৩ টাকা দামের পণ্যটির সাথে ৮০ বা ৯০  টাকার পণ্যটির মানের অনেক পার্থক্য আমরা পেয়েছি।
অপূর্ব অধিকারী আরো বলেন, নগরীর মধ্যে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন কাউকে পাওয়া যায়নি তবে নগরীর বাইরে প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিএসটিআই  সম্পর্কে ধারণা ছিল না। আমরা তাদের বিএসটিআইয়ের নাম ঠিকানা দিয়ে এসেছি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT