4:13 pm , August 23, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছে এক ঋনগ্রস্থ যুবক। মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টায় যুবকের ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভ প্রচার করে। এ ঘটনায় যুবকের পরিবার কোতয়ালী মডেল থানায় বুধবার সাধারন ডায়েরী (জিডি) করেছেন।
ওই যুবক হলেন- বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামে কারী এমদাদুল্লাহর ছেলে রাজা আসাদুল্লাহ (৩৮)। রাজা পেশায় একজন পোল্ট্রি খামারী। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীতে ঝাঁপ দেয়ার ঘটনায় যুবকের স্ত্রী জিডি করেছেন। যে সময়ে লাইভ করেছে, সেই সময় লঞ্চ চাঁদপুর এলাকায় ছিলো। প্রকৃত ঘটনা কি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে চরমোনাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাকিল রাঢ়ী জানান, নদীতে ঝাঁপ দেয়নি। শুনেছি তার ভাই রহমাতুল্লাহ ভাইয়ের ঢাকার বাসায় রয়েছে। পাওনাদারের কাছ থেকে রক্ষা পেতে নদীতে ঝাপ দেয়ার নাটক করেছে। আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ জানান, নিখোঁজ রাজা আসাদুল্লাহ তার ফুফাতো ভাই। রাজা সুদে, বিভিন্ন এনজিও থেকে বিপুল অংকের টাকা ঋন নিয়েছে। ৫/৬ দিন পূর্বে একবার এসেছিলো। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। শুনেছি মঙ্গলবার রাতে রাজা লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে। আমরাও খোঁজ করছি। আসাদউল্লাহর স্ত্রী সালমা আক্তার বলেন, প্রায় ১১ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয় রাজা। এরপর মাঝেমধ্যে রাতের বেলা কল দিয়ে কথা বলতো। তবে পাওনাদারদের ভয়ে মোবাইল ফোন বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকতো। হঠাৎ মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে আমার ভাগ্নি আখি আমাকে জানায় তার মামা রাজা ফেসবুক লাইভে এসে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। এরপর স্বজনরা অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই কোতোয়ালি মডেল থানায় নিখোঁজ জিডি করেছি। আসাদুল্লাহর এই আইডি থেকে করা ১১ মিনিটি ৫১ সেকেন্ডের ওই লাইভে দেখা যায়, কোন একটি যাত্রীবাহি লঞ্চের নীচতলার পেছনের অংশে ফ্যান্টারে মোবাইল নিয়ে অবস্থান করছিলেন রাজা। যদিও তার মুখ দেখা যায়নি, তবে সে লাইভে এসে শুরুতে বলতে থাকেন- যতক্ষন শ্বাস থাকবে ততখন হাত জাগাইয়া ধইরা রাখবো, আমার যারা আত্মীয় স্বজন রয়েছেন তারা আর অপেক্ষা করবেন না, যে আমি কোনদিন ফিরে আসবো, কোনদিন ফোন দিবো। এরপর দীর্ঘসময় ভিডিওটি চলতে থাকলেও তিনি আর কোন কথা বলেননি। শেষের দিকে এসে কালেমা পাঠসহ বিভিন্ন দোআ পড়তে থাকেন। আর বলেন মৃত্যুর কারণ হিসেবে আমি একটি লিখিত পোষ্ট দিয়ে রাখছি। এর কিচুক্ষন পরই সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়। রাজার ফেসবুক আইডির এরআগের পোষ্টটিতে হাতে লেখা একটি চিঠির ছবি পাওয়া যায়। যেখানে লেখা রয়েছে রাজা এগ্রো নামে আমার একটি কৃষি প্রজেক্ট রয়েছে তার। আর তার নিজ এলাকার মোঃ মঞ্জুর মোর্শেদ খান নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক দফায় ১ কোটি টাকার বেশি ব্যবসার উদ্দেশ্যে আনেন এবং মোটা অংকের লাভ দিয়ে আসছিলেন। ২০২২ সালে রাজার ফার্মের ২১ হাজার মুরগী মারা গেলে প্রজেক্ট থেকে আয়ে ভাটা পড়ে। তবে বিভিন্ন উপায়ে প্রজেক্ট ধরে রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে টাকা এনে মোর্শেদ খানের মাসিক ও বাৎসরিক লাভের টাকা দিয়েছেন এবং প্রজেক্টে খরচ করেন রাজা। হত ১২ আগষ্ট মোর্শেদ খানের টাকা পরিশোধের একটা বৈঠক হয়। এরপর সবার পাওনা টাকা দেয়ার জন্য রাজা প্রতি শতাংশ জমি দুই লাখ টাকা দরে বিক্রি করতে চাইলে নানান অযুহাত তোলে এবং রাজার জমি দখলের লোভে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় মোর্শেদ খান। রাজা হাতে লেখা পত্রটির শেষে উল্লেখ করেন, আমি ৩ বছরে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি অনেক সম্পদ নষ্ট করে এবং প্রতি মাসে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি অনেক কষ্ট করে। তারপরও আমার জমিতে সাইনবোর্ড মেনে নিতে পারলেন না। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম যা লাইভে প্রমান আছে।