বরিশাল কৃষি অঞ্চলে হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদ হতাশাজনক বরিশাল কৃষি অঞ্চলে হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদ হতাশাজনক - ajkerparibartan.com
বরিশাল কৃষি অঞ্চলে হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদ হতাশাজনক

4:05 pm , August 20, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে ২২ লক্ষাধিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে মাঠে সকাল-সন্ধ্যা কৃষকের নিরলস কর্ম ব্যস্ততা। পুরো মৌসুম জুড়ে স্বাভাবিক বৃষ্টির অভাবের পরে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রাবনের পূর্ণিমায় ভর করে প্রবল বর্ষন ও ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে বরিশাল অঞ্চলের প্রায় সব কৃষি জমি প্লাবিত হওয়ায় কয়েকটি জেলার আমন বীজতলা ও বিপুল পরিমান পাকা আউশ ধানের ক্ষতি হলেও কৃষকরা বসে থাকেননি। গত জুলই মাসেই বরিশালে বৃস্টিপাতের পরিমান ছিল স্বভাবিকের ৫৪% কম। অথচ চলতি মাসে কোন ধরনের ঘূর্ণিঝড় ছাড়াই ২০ আগষ্ট সকাল পর্যন্ত বরিশালে ৫৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ চলতি আগষ্টে ৩৫০ থেকে ৩৯০ মিরিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া বিভাগ। গত ৬ আগষ্ট রাত থেকে ৭ আগষ্ট সকাল পর্যন্ত সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতেই ৩৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। তবে সাগর শান্ত হওয়ায় কৃষি জমিগুলো দ্রুত প্লাবন মূক্ত হওয়ায় আমন বীজতলার তেমন ক্ষতি হয়নি বলে দাবী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র অতিরিক্ত পরিচালকের। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান এ নির্বাহীর মতে ভাটির অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা বিধায় বরিশাল অঞ্চলে আমনের আবাদ সব সময়ই কিছুটা বিলম্বিত হয়ে থাকে। তবে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৩% জমিতে রোপা আমনের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক প্লাবন ও প্রবল বর্ষণে দুটি জেলার কিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ঐসব জেলায় কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিলম্বিত আবাদযোগ্য আমন বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব বীজ এখনো উৎপাদনের যথেষ্ট সময় রয়েছে বলেও জানান তিনি। বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই প্রতি বছর বরিশাল অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন আউশ, অমন ও বোরা ধান ঘরে তুলছেন। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলা দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় ১৫ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগন গত অর্থ বছরের খরিপ-১, খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। গত বর্ষা মৌসুমেও বছর জুড়ে বৃষ্টির অভাবের পরে মৌসুম শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ব্যাপক ঝুকির কবলে পড়ে। তবে সব দূর্যোগ অতিক্রম করে এ অঞ্চলে প্রায় ২২ লাখ টন আমন চাল ঘরে তুলেছিলেন কৃষিযোদ্ধাগন। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে প্রায় ৫৬ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের আমন আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৮ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। এরমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে ২২ লাখ ৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে কৃষকদের কর্ম ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মত। তবে এত বিপুল পরিমান জমিতে আমন আবাদ হলেও এ অঞ্চলে এখনো হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের ধান আবাদে খুব অগ্রগতি লাভ করেনি। চলতি মৌসুমেও বরিশাল অঞ্চলে ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে আমন আবাদের লক্ষ্য স্থির করা হলেও তারমধ্যে হাইব্রীড জাতের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টরের মত। আর উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন আবাদ হচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ হেক্টরে। এমনকি কম উৎপাদনশীল স্থানীয় জাতের আমনের আবাদ হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ হেক্টরে। এখনো সারা দেশে কম উৎপাদনশীল সনাতন জাতের যে আমন ধানের আবাদ হচ্ছে, তার প্রায় ৭৫ ভাগই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। ফলে এ অঞ্চলের বিশাল কৃষি জমিতে আমন আবাদ হলেও উৎপাদন এখনো কাঙ্খিত মাত্রায় নয়।
তবে এ লক্ষ্যে ডিএই এখনো ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রীড জাতের ধানের বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌছে দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে ডিএই’র মাঠ কর্মীসহ তাদের তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবের অভিযোগ করেন মাঠ পর্যায়ের কৃষকগন। সাধারন কৃষকদের অভিযোগ, ‘বেশীরভাগ ব্লক সুপারভাইজার এলাকায় আসেন না, এমনকি উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগনও বিষয়টি তদারকি করেন না’ বলেও অভিযোগ কৃষকদের।
তবে ডিএই’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের মতে, জনবলের ব্যাপক ঘাটতির মধ্যেও ব্লক সুপারভাইজারদের মাঠে পাঠানো হচ্ছে। তাদের কাজের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করার দাবী করেন তিনি। ‘প্রাকৃতিক কারণেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন বীজ রোপন অনেক জমিতে সম্ভব হয় না’ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে আরো বেশী জমিতে এসব জাতের আমন বীজ আবাদের’। এমনকি ‘হাইব্রীড ও উফশী জাতের বীজের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে বরিশাল অঞ্চলে আমনের উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে’ এমন দাবীর সাথেও দ্বিমত পোষন করেননি তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT