আগৈলঝাড়ায় অভাবের তাড়নায় মাছ বিক্রি করছেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ চন্দনা আগৈলঝাড়ায় অভাবের তাড়নায় মাছ বিক্রি করছেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ চন্দনা - ajkerparibartan.com
আগৈলঝাড়ায় অভাবের তাড়নায় মাছ বিক্রি করছেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ চন্দনা

4:23 pm , August 17, 2023

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অভাব অনটনের কারনে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ চন্দনা হালদার  বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাছ বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ভোররাতে ওই গৃহবধূ বাড়ি  থেকে পায়ে হেটে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আরও আট থেকে দশ কিলোমিটার দূরত্বে উপজেলার গৈলা বাজারের পাইকারি মাছ বাজারে গিয়ে মাছ ক্রয় করে এলাকায় এনে বিক্রি করেন।
তিনি উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের হাওলা গ্রামের দিনমজুর বিজয় হালদারের স্ত্রী । তিনি ৮ মাসের অন্ত:সত্ত্বা।
গৃহবধূ চন্দনা হালদার জানান, তিনজনের সংসারে স্বামী বিজয় হালদার একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে বিভিন্ন সময় সাইকেলের পিছনে ঝুঁড়ি বেঁধে ঘুরে ঘুরে মাছ বিক্রি করতেন। বিজয় হালদার গত ৫ বছর আগে প্যারালাইষ্ট হয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী রয়েছেন। একমাত্র উপার্যনক্ষম স্বামীর চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে তার পরিবার তখন সংসারের হাল ধরতে চন্দনা মাছ বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। মাছ ক্রয় করে হাওলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে রোদ-বৃষ্টি, ঝড়ে খোলা আকাশের নিচে বসে মাছ বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া প্রতিদিন সকল মাছ বিক্রি না হলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাছ বিক্রি করতে হয় তাকে।
প্রতিদিন মাছ বিক্রি করে দুই তিনশ টাকা আয় হলেও যাতায়াতের জন্য ভ্যান ভাড়া দিতে হচ্ছে ৭০/৮০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকা দিয়েই চলে তার সংসার। এছাড়া যেদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকে সেদিন মাছ ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারলে স্বামী সন্তানকে নিয়ে উপোস থাকতে হয় চন্দনাকে। একমাত্র বসবাসের অনুপযোগী ঘরটি ছাড়া তেমন কোন জায়গা জমিও নেই তাদের। এপর্যন্ত সরকারী বা বেসরকারী কোন সহযোগিতা পাননি তারা।
দিনমজুর বিজয় হালদার জানান, ৯ বছর পূর্বে নওগা জেলার মহাদেবপুর উপজেলার দুলালপাড়া গ্রামের কালিপদ মন্ডলের মেয়ে চন্দনা হালদার ঢাকায় একটি গার্মেন্টেস এ চাকরিরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে ধরে চন্দনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর দুই বছর পর পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
দাম্পত্য জীবন তাদের সুখেরই ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে স্বামী বিজয় হালদার অসুস্থ হয়ে পড়ায় চন্দনার জীবনে তখন হতাশার ছাপ নেমে আসে।
স্থানীয় নরোত্তম কীর্ত্তনীয়া জানান, বিজয় হালদার অসুস্থ হওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী চন্দনা স্বামী ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে ঝুঁকিপূর্ণ মাছ বিক্রির ব্যবসা বেছে নেয়। বর্তমানে চন্দনার হাওলা বাড়ি থেকে ওই চারমাঠ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ কর্দমাক্ত কাঁচা সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গৈলা বাজারে মাছ ক্রয়ের জন্য যাতায়াত করে চন্দনা। এতে করে চন্দনা যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় লীলা বিশ্বাস জানান, একজন নারী হয়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও চন্দনা স্বামী ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে ঝুঁকিপূর্ণ মাছ বিক্রির ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারসহ সমাজের বিত্তবান সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
গৈলা মাছ বাজারের পাইকারী আড়তদার মহাদেব মন্ডল জানান, আমার ব্যবসায়ী জীবনে কখনও দেখিনি সংসারের হাল ধরতে একজন আটমাসের গর্ভবতী নারী ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতার (ডাকের) মাধ্যমে মাছ ক্রয় করে আট দশ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ন সড়ক পাড়ি দিয়ে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
রতœপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা সরদার জানান, আমার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের যে কোন ধরনের সহযোগিতা রয়েছে তা চন্দনার পরিবারকে দেয়া হবে। আমার পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির জন্য প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল ও একটি মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড এর  ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, মাছ ব্যবসায়ী চন্দনা হালদারের পরিবারকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ইতিমধ্যে সমাজকল্যান পরিষদের মাধ্যমে তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT