4:17 pm , August 17, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল অঞ্চল থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের পরেও ৫শ মেগাওয়াট চাহিদার প্রায় ৪০ভাগ লোডশেডে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া প্রায় ৬৮ হাজার এইচএসসি পরিক্ষার্থী সহ সাধারনের জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যেও চরম বিপর্যয় অব্যাহত আছে। শুধু শিল্প ও ব্যবসা-বানিজ্যেই দৈনিক ঘাটতির পরিমান প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে দাবী ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের। বুধবার রাতভর লোডশেডিং এর পরে শেষরাতে প্রত্যাহার হলেও বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টা থেকে চাহিদার ৪০ভাগেরও বেশী ঘাটতি নিয়ে লোডশেডে ফিরে আসে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল। ফলে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনেই বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ১৩১টি কেন্দ্রে ৬৮ হাজার পরীক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। পরীক্ষা শুরুর আগেই সকাল পৌনে ৯টা থেকে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে চাহিদার ৪০ ভাগেরও বেশী বিদ্যুৎ ছাটাই করে পিজিসিবি’র লোডডেসপাস সেন্টার। ঘাটতি মোকাবেলায় বরিশাল মহানগরীর ৫টি ৩৩/১১ সাব স্টেশন থেকে মহানগরী সহ সমগ্র জেলা এবং ঝালকাঠীর বিশাল এলাকা ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র বিদ্যুৎ ছাটাই শুরু হয়। ফলে সকাল ১০টায় বেশীরভাগ কেন্দ্রেই আধো আলো অন্ধকারে পরীক্ষা শুরু করতে হয়েছে। সাড়ে ১০টার দিকে কিছু কেন্দ্রে আলো ফিরলেও পৌনে ১২টা থেকে পুনরায় লোডশেডের আওতায় আসে ওইসব পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো। ফলে বেশীরভাগ কেন্দ্রের ছাত্র-ছাত্রীকেই দুঃসহ গরমে আধো আলো অন্ধকারে পরীক্ষা শেষ করতে হয়েছে। বেশীরভাগ পরীক্ষার্থীই ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের গরমে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। একই সাথে লাগাতার লোডেশেডে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার আগেই দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে প্রায় ৪শ মেগাওয়াট চাহিদার ৪০ ভাগেরও বেশী বিদ্যুৎ ছাটাই শুরু হয়। নগরীর প্রধান বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র, রূপাতলী ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশনটিতে ডে-পিক আওয়ারে প্রায় ৮৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে জনজীবনে দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও মুখ থুবড়ে পড়ে। দুপুর আড়াইটায় পর্যন্ত নগরীর দপদপিয়া, পলাশপুর, কাশিপুর ও চাঁদমারী ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশনগুলোতেই একইভাবে বিদ্যুৎ রেশনিং চলছিল। দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলার পরিস্থিতিই ভয়াবহ।
পাওয়ার গ্রীড কোম্পানীর একটি সূত্রের মতে, শুধু বরিশালই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি ১৩২/৩৩ কেভি সব স্টেশন থেকে ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশনের মাধ্যমে ৬টি জেলায় যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, সবগুলোতেই চাহিদার প্রায় ৪৫ ভাগ পর্যন্ত ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে।
পিডিবি’র একটি সূত্রের মতে, বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে স্থাপিত সবগুলো পাওয়ার স্টেশনই এখন পূর্ণ উৎপাদনে রয়েছে। ফলে এ অঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ এখন জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হলেও জাতীয় গ্রীড থেকে হিস্যা মাফিক বিদ্যুৎ দক্ষিণাঞ্চলে না দেয়ায় চাহিদার প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ পর্যন্ত রেশনিং করতে হচ্ছে। চরম ভোগান্তিতে এ অঞ্চলের প্রায় ১ কোটি মানুষ।
সূত্রটির মতে, বরিশাল সামিট পাওয়ারের ১১০ মেগাওয়াট, ভোলাতে পিডিবির ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড পাওয়ার স্টেশন থেকে ১৯০ মেগাওয়াট ছাড়াও একটি বেসরকারী পাওয়ার স্টেশনের ২২৫ মেগাওয়াট এবং পটুয়াখালীতে ইউনাইটেড পাওয়ারের ১৫৫ মেগাওয়াট এবং পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থেকে ১,৩২০ মেগাওয়াট ও তালতলী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়াও ভোলাতে অপর একটি বেসরকারী উৎপাদন কেন্দ্রের প্রায় ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দ্বীপ জেলাটি ছাড়াও পটুয়াখালীর কিছু এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হলেও এ অঞ্চলে অফ পিক আওয়ারে পৌনে ৪শ মেগাওয়াট ও পিক আওয়ারে প্রায় সাড়ে ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছেনা ‘সেন্ট্রাল লোড ডেসপাস সেন্টার-সিএলডিসি’ থেকে।
বিষয়টি নিয়ে ওয়েষ্ট জোনের ‘রেজিওনাল লোড ডেসপাস সেন্টার-আরএলডিসি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি। তবে বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন পিজিসিবি এবং ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র।