পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম দরপতনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক  পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম দরপতনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক  - ajkerparibartan.com
পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম দরপতনে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক 

4:26 pm , August 16, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও আকস্মিক দর পতনে কৃষকের মাথায় হাত। কর্তন শুরু হবার পরে এ অঞ্চলের মোকামগুলোতে প্রতিমন পাট ৩ হাজার টাকার ওপরে বিক্রী হলেও গত সপ্তাহ থেকে দর পতন শুরু হয়। সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে প্রতিমণ পাট আড়াই হাজার থেকে ২৭শ টাকায় বিক্রী হচ্ছিল। অথচ এখনো অন্তত ৩০ ভাগ জমির পাট কর্তন বাকি রয়েছে। সামনে দাম আরো কমার শংকা প্রকাশ করেছেন আড়তদাররা। ফলে আগামীতে পাট আবাদে কৃষকরা নিরুৎসাহিত হতে পারেন বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। ২০২০ সালে পশ্চিম জোনের সবগুলো সরকারী পাটকল বন্ধ করে দেয়ার পরে পাটের বাজার আর স্থিতিশীল হয়নি। সরকারী-বেসরকারী অংশিদারিত্ব-পিপিপি পদ্ধতিতে বন্ধ পাটকল চালুর অনেক আশার বাণী শোনা গেলেও একটিও চালু হয়নি গত ৩ বছরেরও বেশী সময়ে। বরিশাল অঞ্চলে যে ২০টির মত ছোট ও মাঝারী পাটকল রয়েছে তারও প্রায় অর্ধেক বন্ধ। বেসকারী পাটকলগুলোর বেশীর ভাগই বন্ধ পুরনো মেশিনারী সহ পূঁজির অভাবে। অথচ চলতি মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে দেশে প্রায় ৮ লাখ হেক্টরের কিছু বেশী জমিতে পাট আবাদ হলেও তার প্রায় ৩০%-ই হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। প্রতিমণ পাট উৎপাদন ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার টাকার কাছে হলেও সাড়ে ৪ মাসের সাধনার এ কৃষিপণ্য আবাদ ও উৎপাদন থেকে বিক্রী পর্যন্ত মুনাফা তুলে আনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।  এবারো পাট আবাদ ও উৎপাদনের বড় অন্তরায় হচ্ছে কর্তনকালীন  সময়ে বৃষ্টির অভাব। মূলত চলতি বছর গত জুলাই পর্যন্ত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বৃষ্টির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়েছে। গত মাসেও স্বাভাবিকের ৫৮% কম বৃষ্টি হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে স্বাভাবিকের অনেক বেশী বৃষ্টির ফলে উঠতি আউশ ও আমন বীজতলা ডুবিয়ে দিলে পাট জাগ দেয়ার অনিশ্চয়তা কেটে গেলেও তার আগেই তিন-চতুর্থাংশ পাট কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। বেশীরভাগ চাষীকেই মাঠ থেকে অনেক দূরে খাল ও নদীতে নিয়ে পাট জাগ দিতে গিয়ে কৃষি শ্রমিকের জন্য অতিরিক্ত মজুরী গুনতে গিয়ে লোকসানের বোঝা ভারী হয়েছে এবার। এদিকে পাট গবেষনা ইনষ্টিটিউট ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ উপযোগী নোনা পানি সহিষ্ণু পাটের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। ইনষ্টিটিউট ইতোমধ্যে আমদানীকৃত বীজের চেয়ে উন্নতমানের ও উচ্চ ফলনশীল নাবী জাতের পাটবীজ উদ্ভাবন করেছে। আগামীতে এ পাট বীজই দেশের মোট আবাদকৃত এলাকার চাহিদা মেটাবে বলেও পাট গবেষনা ইনষ্টিটিউট এর দায়িত্বশীল মহল আশাবাদী। আমন ও বোরো ধানের পরে পাট দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি অর্থনীতির বড় যোগানদার হয়ে উঠেলেও এ অঞ্চলে কোন সরকারী পাটকল না থাকার মধ্যেই বেসরকারী খাতের ছোট-বড় ২৪টি পাটকলেরও দ্-ুতৃতীয়াংশই বন্ধ। চলতি মূলধন আর আধুনিক মেশিনারির অভাবের সাথে ব্যাংকের দেনায় বন্ধ বেশীরভাগ পাটকল ভবিষ্যতে চালুর কোন সম্ভাবনার বিষয়টি জানা নেই কারো। অথচ বেসরকারী খাতে দেশের অন্যতম বৃহৎ করিম জুট মিল ও পারটেক্স গ্রুপের পাটকলও দক্ষিণাঞ্চলেই। দেশের বিভিন্ন এলাকার বেসরকারী পাটকলগুলো এ অঞ্চলের মোকামগুলো থেকে সীমিত কিছু পাট কিনলেও তাদের ফড়িয়াদের বেঁধে দেয়া দরের ওপরও সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে পাট চাষীদের। অপরদিকে পরিবেশবীদদের মতে, পাট আবাদের ওপরই অনেক এলাকার জ¦ালানি চাহিদার বড় অংশ মিটে থাকে। পাট আবাদ এলাকার বড় জনগোষ্ঠী জ¦ালানী হিসেবে পাটকাঠি ব্যবহার করে আসছে। ফলে জ¦ালানী হিসেবে গাছপালা কাটার প্রবনতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রনে থাকছে। এছাড়া পাটখড়ি থেকে ‘পারটেক্স বোডর্’ সহ গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানি পণ্য ‘চারকল’ উৎপাদিত হচ্ছে। যা রপ্তানী খাতকেও কিছুটা সমৃদ্ধ করছে। জ¦ালানি সংকট মোকাবেলা সহ দেশী পাটকল সচল রাখার সাথে রপ্তানী খাতকে সজিব রাখতে পাট আবাদের ধারা অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবীদ ও পরিবেশবীদরা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেশে পাট চাষির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হলেও এখাতের ওপর নির্ভিরশীল প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। আর জিডিপি’তে পাটের অবদান ০.২৬% হলেও কৃষি সেক্টরে একক অবদান ১.১৪%। দেশে উৎপাদিত পাটের ৫১% এখনো স্থানীয় পাটকলে ব্যবহৃত হলেও ৪৪% কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে দেশ প্রতিবছর আয় করছে প্রায় ৯০ থেকে ১শ কোটি ডলার। এ আয়ের সিংহভাগই এসেছে পাট সূতা বা জুট ইয়ার্ন থেকে। কাঁচাপাট রপ্তানিতে আয় ১ কোটি ডলার। পাটের বস্তা ও চট রপ্তানি করেও আয় হচ্ছে ১০ কোটি ডলারের মত। এছাড়া বিভিন্ন পাটজাত পণ্য রপ্তানিতেও আয় প্রায় ২০ কোটি ডালারের মত। তবে গত তিনটি অর্থ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানীতে তেমন কোন প্রবৃদ্ধি ছিল না। দীর্ঘদিন পরে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পাটজাত পণ্য রপ্তানি চামড়াজাত পণ্যকে ছাড়িয়ে গেলেও ২০২০Ñ২১ অর্থ বছর থেকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। অপদিকে পাটখড়ির ছাই ‘চারকল’ চীন সহ বিশে^র কয়েকটি দেশে ভাল বাজার তৈরী করেছে। তবে গত বছর চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে অগ্নিকান্ডের পরে শিপিং কোম্পানীগুলো এ রপ্তানী পণ্য জাহাজী করনে কিছুটা অনিহা প্রকাশ করে আসছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০ কোটি ডলারের চারকল রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT