4:38 pm , August 9, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ হেলমেট ও মাস্ক পড়ে মধ্য রাতে দুই হলে প্রবেশ করে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সংবাদ সম্মেললন করে অভিযোগ করেছেন হামলার শিকার দুই শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে করা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী আহত আয়াত উল্লাহ ও সালাহ উদ্দিন। উভয়য়ে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাম্বুলেন্সযোগে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তারা জানান , গত ৫ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে দুর্বৃত্তদের হামলায় সহপাঠীরা আহত হয়েছে খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে যায় তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে পৌঁছালে মাক্স ও হেলমেট পরিহিত ৩০-৩৫ জন তরুণ ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। হামলাকারীদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, গণিত বিভাগের রায়হান ইসলাম ও মোবাশ্বের রিদম এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শরিফুল ইসলামকে তারা চিনেছেন।
আহতরা অভিযোগ করে জানান, হামলার সময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সেদিনের ঘটনার পর থেকে বুধবার পর্যন্ত হামলাকারীরা ক্যাম্পাসের হল দখল করে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করেছে। কিন্তু এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুলিশ সন্ত্রাসীদের আগলে রাখার ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেন।
দ্রুত সকল হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন আহত দুই শিক্ষার্থী।
আহত শিক্ষার্থী আয়াত উল্লাহ বলেন, দুর্বৃত্তরা তার পায়ের রগ কেটে দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রায় ৫ জন সেই রাতে আহত হয়ে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়েও দোষীরা কিভাবে মুক্তভাবে চলাফেরা করছে? এই প্রশ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে রইলো।
হামলার শিকার অমিত হাসান রক্তিম বলেন, হামলার ঘটনায় মুয়ীদুর রহমান বাকী বাদী হয়ে নামধারী ১৫ জন ও অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনকে আসামী করে মহানগর পুলিশের বন্দর থানায় অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিযুক্ত তানজিদ মঞ্জু বলেন, সেই রাতে হামলার ঘটনায় তিনিও আহত হয়েছেন। এখন দেখছি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অভিযোগ আনা হচ্ছে। ঐ রাতে নিজেরা মারামারি করে আহত হবার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বর্শবর্তী হয়ে এখন দোষ চাপানো হচ্ছে আমাদের দিকে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম জানান, হামলা কারা করেছে, তাদের চিহিৃত করতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে মূল কারণ উদঘাটন করে প্রতিবেদন দেবেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও ইখতিয়ার অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। কেউ যদি অভিযোগ করে, তার অন্য কোন উদ্দেশ্যে রয়েছে। যে অভিযোগ করেছে সেটা ভিত্তিহীন।
তবে ফৌজদারী বা অন্যকোন অপরাধে যদি কেউ মামলা করলে সেই ঘটনায় পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। এছাড়া অভিযোগ দায়েরের পর দুই পক্ষ মিমাংসা করে ফেলায় অধিকাংশ অভিযোগকারী অভিযোগপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান মুকুল বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করি। আমরা কোন পক্ষের নই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যতটুকু বলে তা করা হয়। ওসি আরো বলেন, সংবাদ সম্মেলন করার জন্য তাদের সহায়তা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে তাদের নিরাপদে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারা ক্যাম্পাসে থাকবে, আরা থাকবে না। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানে।##