চরম মানবিক বিপর্যয়ে নগরবাসী চরম মানবিক বিপর্যয়ে নগরবাসী - ajkerparibartan.com
চরম মানবিক বিপর্যয়ে নগরবাসী

4:33 pm , August 9, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শ্রাবণের মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণে আবারো ডুবলো বরিশাল মহানগরী। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টার পূর্ববর্তী ৩৬ ঘন্টায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের বরিশাল মহানগরীর পুরোটাই পানির তলায় চলে যায়। ফলে ৫ লক্ষাধিক নগরবাসীর শুধু দুর্ভোগই নয়, অনেক এলাকায় চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এমনকি এ সময় কীর্তনখোলার পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে বরিশাল অঞ্চলে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। টানা এক সপ্তাহ পরে বুধবার সকাল ৯টা ৭ মিনিটে বরিশাল মহানগরীতে সূর্যের হাসি ছড়ালেও দুপুর ১২টার পরে অবার বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। দুপুর ৩টা পর্যন্ত নগরীতে আরো ২১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
ফলে নগরীর অনেক রাস্তাঘাট সহ বিশাল জনপদ এখনো  পানির তলায়। গত রবি ও সোমবারের বর্ষণে নিমজ্জিত বরিশাল মহানগরীর রাস্তায় জাল ফেলে মাছ শিকার করেছেন অনেকে। নবগ্রাম রোড সংলগ্ন অক্সফোর্ড মিশন রোডে আড়াই কেজি ওজনের বোয়াল মাছও ধরা পড়েছে । শুধু বৃষ্টিপাতই নয় গত কয়েক বছর ধরে নগরীর পাশে প্রবাহমান কীর্তনখোলার জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলও নগরীর ড্রেনের পানি রাস্তায় গড়াচ্ছে।
নগরীর  কাঁচা-পাকা প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার না করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নগরবাসী অনেক চিৎকার করলেও তা শোনার মত কেউ নেই। নগরীর ভঙ্গুর নিস্কাশন ব্যবস্থা সহ বরিশাল নদী বন্দরের নাব্যতা রক্ষার নামে গত প্রায় দুই দশক ধরে বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিংকৃত পলি নদীতেই অপসারণ করায় কীর্তনখোলায় সংযুক্ত খালগুলোর মোহনা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এ নগরীর নিস্কাশন ব্যবস্থা আরো রুদ্ধ হলেও তা নিয়ে নগর ভবনের কোন মাথা ব্যথা নেই।
নগরীর ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার না করার অভিযোগ এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য।  চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসের মধ্যে ৬ মাসেই বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের নিচে। এমনকি সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮% কম বৃষ্টি হলেও নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজারের পশ্চিম পাশ থেকে করিম কুটির পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার ড্রেনটি সব সময়ই রাস্তা ছুঁই ছুঁই করছিল। কোন মাঝারী বর্ষণ বা ভারী বৃষ্টিপাত ছাড়াই অনেক সময় ড্রেনের পানি রাস্তায় গড়াতে দেখা যায় বছর জুড়েই।
গত জুলাই মাসে বরিশালে ৫৮% বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরে ১ আগষ্ট সকাল থেকে ৭ আগষ্ট রাত পর্যন্ত প্রায় ৫শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে নবগ্রাম রোড সহ পুরো নগরজুড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। সচেতন নাগরিকদের মতে, গত কয়েক বছর ধরে উদাসীন নগর ভবনের দায়িত্বশীলরা নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন দূরে থাক, যথাযথ সংরক্ষনেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। ফলে এর দুর্ভোগ বহন করতে হচ্ছে ৫ লক্ষাধিক নগরবাসীকে। সাথে নগরীর রাস্তাঘাট বার বার জলাবদ্ধতার কবলে থাকায় তা দ্রুত বিনষ্ট হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে গত বছর ২৫ আগষ্ট সকাল ৯টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বরিশাল মহানগরীতে ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সময় পাশ^বর্তী কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ ৭ আগষ্ট সকাল ৯টার পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সময় ভরা জোয়ারেও কীর্তনখোলার পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হলেও গোটা নগরীর জলাবদ্ধতা ছিল আগের পর্যায়ে।
পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নগরভবন থেকে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আগের নগর পরিষদ নগরীর কিছু খাল খনন ও পুনরুদ্ধারের প্রায় সোয়া ২শ কোটি টাকার একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তবনা-ডিপিপি’ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে দৌঁড়ঝাপ করলেও তা অনুমোদন লাভ করেনি। বর্তমান নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহন করে প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি টাকার ডিপিপি দাখিল করলেও মন্ত্রণালয় থেকে পরমার্শকের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে  পূণর্গঠনের দিক নির্দেশনা দিয়ে ফেরত পাঠায়।
পরবর্তীতে পরামর্শকের সমীক্ষা সহ প্রায় ২২শ কোটি টাকার একটি উচ্চাবিলাসী ডিপিপি দাখিল করা হলেও মন্ত্রণালয় তা পরিকল্পনা কমিশনে না পাঠিয়ে ফেরত দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ‘এ সংক্রান্ত একটি ডিপিপি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনাধীন’ বলে জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড স্ব-প্রনোদিত হয়ে মহানগরীর ৭টি খাল সংস্কার ও উন্নয়নে ১০.৭৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করলেও নগর ভবন থেকে এ লক্ষে তাদের ‘দাখিলকৃত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়’ বলে জানিয়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ করে। বোর্ডের প্রকল্পটির আওতায় নগরীর পলাশপুর খাল, আমানতগঞ্জ খাল, জেল খাল, ভাটার খাল, চাঁদমারী খাল, সাগরদী খাল ও রূপাতলী খালগুলোর প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের লক্ষ্যে দু দফায় দর প্রস্তাব গ্রহন করে মূল্যায়নও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এসব খালের দুই ধারে ওয়ার্কওয়ে নির্মান সহ বসার জন্য কিছু অবকাঠামো নির্মান করা হবে বলে জানা গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পটিতে নগরীর পশ্চিম অংশের নবগ্রাম রোড খালটি সংস্কার ও উন্নয়নে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭ খাল খনন ও সংস্কার প্রকল্প সম্পর্কে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা কার্যাদেশ প্রদান করবো। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটির মূল কাজ সম্পন্ন করার কথাও জনান তিনি। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমেই বরিশাল মহানগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT