অবৈধদের হল ছাড়ার নির্দেশ ॥ আহত ১০ জন অবৈধদের হল ছাড়ার নির্দেশ ॥ আহত ১০ জন - ajkerparibartan.com
অবৈধদের হল ছাড়ার নির্দেশ ॥ আহত ১০ জন

4:15 pm , August 6, 2023

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলমেট ও মাস্ক পরিহিতদের হামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত অবস্থায় একটি বাহিনী পিটিয়ে ও কুপিয়ে ১০ শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত করেছে। শিক্ষার্থীদের আহত করার ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। রোববার ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরই-বাংলা ও বঙ্গবন্ধু হলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ অপর পক্ষকে হটিয়ে দিতে শনিবার দিনগত রাতে হেলমেট ও মাস্ক পড়ে হামলা করে। ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলায় হলের নিয়ন্ত্রনে রাখা এক পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের একটি পক্ষের নেতা অমিত হাসান রক্তিম। হামলাকারীরা শেরই বাংলা হলের সামনে একটি মোটর সাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে বঙ্গবন্ধু ও শেরই বাংলা হলে বহিরাগতদের রোববারের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রভোষ্টদ্বয়। হামলার শিকারদের সন্ত্রাসী দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনও করা হয়েছে।
আহত হয়ে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় বঙ্গবন্ধু হলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মুয়ীদুর রহমান বাকি (২৮) ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সাইমুন ইসলাম (২৬) এবং শের ই বাংলা হলের মার্কেটিং বিভাগের সালাউদ্দিন (২৫), মো. আয়াত (২৪), পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের মিথুন সিকদার ও শান্ত (২৪)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম বলেন, শনিবার দিনগত রাতের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান ড. হারুন অর রশিদকে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রক্টর আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে চেষ্টা করেছি। এ জন্য প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। জড়িতরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়, তাহলের একাডেমিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি মামলা করা হয় তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) সুপ্রভাত হালদার বলেন, তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সময় বাড়ানো হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কমিটির অপর চার সদস্য হলেন- দুই হল টিউটর রাকিবুল ইসলাম ও তানভীর কায়ছার, সহকারী প্রক্টর সাদিকুর রহমান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের রাহাত হোসাইন ফয়সাল।
বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোষ্ট মো. আরিফ হোসেন বলেন হলের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অবৈধ ছাত্রদের অনতিবিলম্বে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের হল ত্যাগ করতে হবে। একই কথা জানিয়ে শেরই বাংলা হলের প্রভোষ্ট মো. জাফর মিয়া বলেন, রোববার রাতের মধ্যে হল ছাড়তে হবে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। হামলার শিকার ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের নেতা অমিত হাসান রক্তিম জানান, রাত ১১টার দিকে শান্ত-শরীফ গ্রুপের নেতা মুবাশ্বির রিদম, রিয়াজ মোল্লা তমালসহ ৪০/৫০ জন হেলমেট ও মাস্ক পড়ে হামলা করে। হামলায় আমরা অন্তত ১০ জন আহত হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর এই পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন রক্তিম। আহত মুয়ীদুর রহমান বাকি বলেন, আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের অধিকাংশই বিগত দিনে নানা অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। কিন্তু তারপরও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এভাবে হামলা চালানোর সাহস পেয়েছে তারা। শিক্ষাথীরা জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও একাধিক পক্ষ ক্যাম্পাসে সক্রিয় আছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব পক্ষ প্রায়ই সংঘাতে জড়াচ্ছে। তারা আরো বলছেন, শনিবার রাতে যে পক্ষটি হামলা চালাতে হলে প্রবেশ করেছিলো তারা বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ সময় সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা ক্যাম্পাসের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জিতে যাওয়ায় তারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে। রাত ১১টার দিকে ৪০ থেকে ৪৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী প্রথমে শের-ই-বাংলা হলে প্রবেশ করেন। তাদের মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট ছিল। তারা হলে ঢুকে প্রধান ফটক আটকে দেন। পরে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলোর সিটকিনি লাগিয়ে দেন। যাতে তারা বাইরে বের হতে না পারেন। এরপর হলের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করেন। তারপর শের-ই-বাংলা হল থেকে বেরিয়ে সরাসরি বঙ্গবন্ধু হলের চতুর্থ তলায় যান তাঁরা। সেখানে জাহিদ ফারুকপন্থী পক্ষটির কয়েক সমর্থককে পিটিয়ে আহত করেন তাঁরা। এরপর তাঁরা দুটি হলেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। অপর গ্রুপের ফাতাহুর রাফি বলেন, শনিবার রাতে রক্তিম ও বাকীর নেতৃত্বে বহিরাগতরা একটি পিকআপে (যার নং পটুয়াখালী ন ১১০০২৮) অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। তখন তাদের প্রথমে পুলিশ বাঁধা দেয়। পরে সাধারন শিক্ষার্থীরা এসে তাদের মারধর করেছে। রাফি দাবি, রক্তিমের ছাত্রত্ব নেই। বাকী প্রশ্ন ফাঁস করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন। রক্তিমের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেট তৈরি, ড্রেজার ও দোকান থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড করে। তাদের এসব অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে সাধার শিক্ষার্থীরা পরিত্রান চায়। তাই সাধারন শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে। এখন তারা হুমকি দিচ্ছে বহিরাগত নিয়ে তারা আবারো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে। রক্তিম-বাকী গ্রুপের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সন্ত্রাস বিরোধী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে জানিয়ে রাফি বলেন, বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের চারদিক প্রদক্ষিণ করে। সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা। মহানগর পুলিশের বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হরিদাস নাগ বলেন, কোন পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। তবে সাধারন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT