প্রবল বর্ষণে নগরীর রাস্তাঘাট পানির নিচে ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত প্রবল বর্ষণে নগরীর রাস্তাঘাট পানির নিচে ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত - ajkerparibartan.com
প্রবল বর্ষণে নগরীর রাস্তাঘাট পানির নিচে ॥ জনজীবন বিপর্যস্ত

4:13 pm , August 6, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দুদিনের টানা বৃষ্টিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ আশেপাশের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নগরীর উল্লেখযোগ্য অধিকাংশ সড়কেই জমেছে পানি। কমেছে যানবাহন চলাচল। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গতকাল সারাদিনের প্রবল বর্ষনে নগরীর নবগ্রাম রোড, বটতলা, অক্সফোর্ড মিশন রোড, মুন্সিগ্যারেজ, গোরস্থান, হালিমা খাতুন স্কুল সংলগ্ন গলি, সাগরদী হাউজিং, বিএম স্কুল রোড, কালিবাড়ী রোড, ব্রাউন্ড কম্পাউন্ডসহ নগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বছরের প্রথম ৭ মাস বৃষ্টির ব্যাপক ঘাটতির পরে শ্রাবনের মধ্যভাগ পেরিয়ে বরিশাল অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত। ফুসে ওঠা সাগর উজানের পানি গ্রহন না করা সহ লাগাতর বর্ষনে গত ৫দিন ধরে এ অঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদীর পানিই বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ৪৮ ঘন্টায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও রোববার দুপুর পর্যন্ত বেশীরভাগ স্থানেই তা বিপৎসীমার ওপরে ছিল। ফলে মাঠে থাকা প্রায় পৌনে ২ লাখ হেক্টরের উঠতি আউশ ধান ছাড়াও অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজ তলার বেশীরভাগই মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-১ ও চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আউশ ও আমন থেকে প্রায় ২৩ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। গত কয়েকদিনের মাঝারী বর্ষণে খোদ বরিশাল মহানগরীর অনেক এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমুহ পানির তলায় রয়েছে।
রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসে সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলে পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। রোববার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৯০ মিলিমিটার এবং সাগরপাড়ের খেপুপাড়াতে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহে খেপুপাড়াতে ৩৫৪ মিলিমিটার এবং বরিশালে প্রায় ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। খেপুপাড়াতে রোববার সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টয়ই ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অথচ সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসেও বরিশালে স্বাভাবিক ৫২১ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ২১৯ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮% কম। এ হিসেব আবহাওয়া বিভাগের।
গত কয়েকদিনের মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণের সাথে উজানের ঢল ও ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে উপকূলভাগ সহ বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ও চরাঞ্চল ২-৩ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। রোববার সকাল থেকে প্রবল বর্ষণে এসব এলাকা ছাড়াও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। আবহাওয়া বিভাগ থেকে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তি ৪৮ ঘন্টায় বরিশাল সহ উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া সহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির সম্ভবনার কথা জানিয়ে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। তবে সোমবার সকাল ৬টার পরবর্তি ৪৮ ঘন্টায় বর্তমান পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তনের সম্ভবনার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
গত বছর ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এর বয়ে আনা প্রবল বর্ষণে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল সয়লাব হবার পরে টানা সাড়ে ৪ মাস বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। তবে গত মার্চে স্বাভাবিক ৫৩ মিলিমিটারের স্থলে বরিশাল অঞ্চলে ৭৫ মিলি বৃষ্টি হয়েছিল। যা স্বাভাবিকের ৪১% বেশী হলেও মে মাসে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ৪১% কম, ১৫১ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। জুন মাসেও স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশালে ৪৫০ থেকে ৫১০ মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিলেও বাস্তবে ৩৫.৮% কম, ৩১০ মিলি বৃষ্টি হয়েছিল। জুলাই মাসেও পরিস্থিতি ছিল আরো খারাপ। এ মাসে স্বাভাবিক ৫২১ মিলিমিটারের স্থলে ২২১ মিলি, ৫৮% কম বৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আশ্চর্জজনক ভাবেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপে ভর করে ১ আগষ্ট থেকে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। যার প্রভাবে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন এখনো অনেকটাই বিপর্যস্ত।
পাশাপাশি সদ্য বিদায়ী শ্রাবনের পূর্ণিমার ভরা কোটালে ভর করে গত কয়েকদিন ধরে ফুসে ওঠা সাগর উজানের ঢলের পানি গ্রহন না করার পাশাপাশি লাগাতর বৃষ্টিপাতে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপৎ সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। পূর্ণিমার ভরা কোটাল কেটে যাবার সাথে মৌসুমী লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট নি¤œচাপ দূর্বল হয়ে স্থল নি¤œচাপে পরিনত হয়েছে। ফলে গত ৩ দিন উত্তাল সাগর কিছুটা স্তিমিত হলেও গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা উপকূল অতিক্রম করে দক্ষিনাঞ্চল যুড়ে মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টিতে সয়লাব করে দিচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে সোমবার সকালের পরবর্তি ৪৮ ঘন্টায় বর্তমান পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। তবে আবাহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে মৌসুমী বায়ুর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকার কথা জানিয়ে তা বরিশাল অঞ্চলে সক্রিয় এবং সাগর উপকূলে প্রবল অবস্থায় রয়েছে বলে জানানর হয়েছে।
আবহাওয়া বিাভাগ থেকে চলতি আগষ্টে বরিশাল অঞ্চলে ৩৫০ থেকে ৩৯০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT