4:15 pm , August 3, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চলতি বছর এসএসসিতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বরিশাল জিলাস্কুল। পাশের হার শতকরা ৯৯ ভাগ বলে জানা গেছে। এছাড়াও স্কুলের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী সবাই পড়াশুনাসহ স্কুলের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে অভিভাবকদের কয়েকজন কোচিং ফি ও স্কুল সময়ে কোচিং করানো নিয়ে অভিযোগ তোলেন।
গত ১ আগষ্ট বরিশালের কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইনে বরিশাল জিলাস্কুল ও প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামকে নিয়ে সংবাদ প্রচারের সত্যতা খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে চরম মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের ঘ্রাণ। কোনো একটি মহল উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে প্রধান শিক্ষককে জড়িয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করছে বলে জানালেন স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিচয় গোপন রেখে সরেজমিনে বরিশাল জিলাস্কুলে গেলে উঠে আসে এসব তথ্য। প্রথমেই স্কুলের প্রবেশপথে তৃতীয় শ্রেণির দুজন কর্মচারী জানান, গত এক সপ্তাহের মধ্যে এই স্কুলে কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসেননি। স্কুলের মধ্যে কর্মচারী ও শিক্ষকদের কোনো বৈঠকও হয়নি। তবে গত বুধবার শিক্ষকদের একটা বৈঠক হয়েছে। তারা আরো বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্যার খুবই সহজ সরল এবং নামাজি মানুষ। তিনি পথে দেখা হলে তখন আমাদেরও ডেকে তার পাশে রিকশায় বসিয়ে সাথে নিয়ে আসেন।
এসব অভিযোগ ও অনিয়ম কতটা সত্যি আর কতটা ভিত্তিহীন তা অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে বলে জানান বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মনদীপ ঘরাই। তিনি বলেন, একজন শিক্ষক যদি কোনোভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হন তাহলে সমগ্র জাতি দুর্নীতিগ্রস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। আমাদের শিক্ষকদের অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। আমরা এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।
স্কুলের চতুর্থ ও সপ্তম শ্রেণীর ক্লাসরুমে প্রবেশ করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সকলের সামনে নাস্তার জন্য একটি করে রোলরুটি রাখা আছে। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কখনো ছমুচা, সিঙারা আবার কখনো বনরুটি তাদের টিফিনে দেয়া হয়। বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থাও রয়েছে। তারা বলেন, আমাদের টিচাররা অনেক ভালো। আমরা যারা কম বুঝি তাদের জন্য পৃথক ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন আমাদের প্রধান শিক্ষক স্যারতো খুবই ভালো।
ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক সুভাষিশ চন্দ্র দে এর কাছে প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনিতো নামাজে গেছেন, এরপর খেতে যাবেন, কখন আসবে ঠিক বলা যায় না। তবে তিনিও স্বীকার করেন গত দু-তিন মাসের মধ্যে জিলাস্কুলে প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ হওয়ার কোনো ঘটনা বা তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। সহকারী প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার মধ্যেই প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম চলে আসলে তিনি (সহকারী প্রধান শিক্ষক) কিছুটা লজ্জিত হন।
প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম তার সম্পর্কে বিভিন্ন পত্রিকার অভিযোগগুলো দেখান। যেখানে একটি পত্রিকার শিরোনাম – বরিশাল জিলাস্কুলে প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মুখোমুখি, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।
ভিতরে কোচিং ও নিজের পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে কোচিং করানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের অক্টোবরে বরিশাল জিলাস্কুলে যোগদান করেছেন। এরআগে তিনি মাদারীপুর ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার জন্মস্থান বরিশাল জেলার মুলাদি উপজেলার নাজিপুর এলাকায়। প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, কোচিং আমরা কখনো করাইনা। সরকারি বিধিমালা মেনে কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস করানো হয়। সরকারি ভাবে ৩০০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও আমরা ২০০ টাকা করে নিচ্ছি। যা প্রতি সাবজেক্টে মাসে ১০০০/১২০০ টাকা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম আরো বলেন, আমি আসার পর বরিশাল জিলাস্কুলের অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াও পড়াশুনায় ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। চলতি বছর এসএসসিতে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে জিলাস্কুল। এ বছর পাসের হার ৯৯ ভাগ। কিছু অভিভাবক কোচিং নিয়ে অভিযোগ করলেও বেশিরভাগ অভিভাবকই জানালেন, অতিরিক্ত ক্লাস বা কোচিং করিয়েছেন বলেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ভালো হচ্ছে। তবে একসাথে ২০-২৫ জন কখনো আরো বেশি শিক্ষার্থীদের কোচিং করার অভিযোগ তাদেরও। প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম আসার পরই বরিশাল জিলাস্কুলের খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম ভবন ও ডিজিটাল ল্যাব তৈরি হয়েছে এবং অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে।