বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে হুমকির মুখে উঠতি আউশ ॥ আমন রোপনেও অনিশ্চয়তা বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে হুমকির মুখে উঠতি আউশ ॥ আমন রোপনেও অনিশ্চয়তা - ajkerparibartan.com
বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে হুমকির মুখে উঠতি আউশ ॥ আমন রোপনেও অনিশ্চয়তা

4:14 pm , August 3, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ শ্রাবনের পূর্ণিমার ভরা কোটালে ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারের সাথে গত কয়েক দিনের মাঝারী থেকে ক্ষনস্থায়ী ভারী বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এমনকি বরিশাল মহানগরীর অনেক এলাকা গত দুদিন ধরে বৃষ্টি আর কীর্তনখোলার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভঙ্গুর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে নগরীর অনেক রাস্তাঘাটই গত তিনদিন ধরে প্লাবিত। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় পৌনে ২ লাখ হেক্টরের উঠতি আউশ এবং অর্ধ লক্ষাধিক হেক্টরের আমন বীজতলা ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন সবজি মারাত্মক হুমকীর মুখে। এ দুটি দানাদার ফসল থেকে প্রায় ২৩ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য রয়েছে এবার।
সমাপ্ত প্রায় খরিপ-১ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে আউশ আবাদ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭৭ ভাগ অর্জিত হওয়ায় প্রায় ৫.৮৮ লাখ টন আউশ চাল পাবার লক্ষ্য অর্জনে চরম অনিশ্চয়তাকে বিরুপ আবহাওয়া আরো তরান্বিত করছে। ইতোমধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার উঠতি আউশ ও আমন বীজতলা জোয়ার এবং বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর  তার মাঠ কর্মীদের ক্ষয়ক্ষতির বিবরন তুলে ধরার পাশাপাশি  এসময়ে করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে।
গত ৩ দিনে বরিশাল অঞ্চলের প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি ১০-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজী বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলে তার ২৩টি গেজ স্টেশন থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মির্জাগঞ্জে পায়রা ও বুড়িশ^র নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার, আমতলীতে ১০ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালী নদীর পানি ৩৭ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটায় বিষখালী নদীর পানি ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এছাড়া বুধবার রাতে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার, বেতাগীতে বিষখালীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার, দৌতখানে মেঘনা ও সুরমার পানি দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার, তজুমদ্দিনে ১.২ সেন্টিমিটার, হিজলায় ধর্মগঞ্জ নদীর পানি দশমিক ৩৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
সদ্য সমাপ্ত খরিপ-১ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টরে আউশ ধান কর্তনের সময় ঘনিয়ে এলেও তা এখনো মাঠে। আর এসময়ে শ্রাবনের পূর্ণিমায় ভর করে ফুসে ওঠা সাগরের পানির সাথে গত ৩ দিনের মাঝারী বর্ষণ পরিস্থিতির অবনতি তরান্বিত করছে। চলতি বছর আউশ ধান থেকে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে যে ৫ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রণালয় তার পুরোটাই এখনো মাঠে।
কিন্তু জুলাই মাসজুড়ে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে রেকর্ড ৫৮% কম বষ্টি হলেও মঙ্গলবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ৩৬ মিলিমিটার, বুধবার সকালে ২৪ মিলিমিটারের পরে বৃহস্পতিবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বরিশালে ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তবে এসময়ে খেপুপাড়াতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
এদিকে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদ নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা তৈরী করেছে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি সহ গত ৩ দিনের বর্ষণ। চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে রোপা আমন আবাদের লক্ষে ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরে বীজতলা তৈরী হলেও কৃষকরা বীজ রোপন করছে না বৈরী আবহাওয়ার আশংকায়। গত তিন বছর ধরেই ভাদ্র মাসের বড় অমাবশ্যার সময় প্রবল বর্ষণের সাথে উজানের ঢল ও ফুসে ওঠা সাগর ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী করে আসছে। ফলে চলতি মৌসুমের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় পেরিয়ে গেলেও বরিশাল কৃষি অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১% জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে বলে ডিএই জানিয়েছে। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের আমন থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কিন্তু সামনে ভাদ্রের অমাবশ্যার ভরা কোটাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেই বেশীরভাগ কৃষক আমন রোপনে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখলেও তার আগের পূর্ণিমার প্লাবনও এ অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলের জন্য ইতোমধ্যে হুমকী সৃষ্টি করেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, সাগর কিছুটা শান্ত হয়ে শুক্রবার থেকে বরিশাল অঞ্চলের ভাটিমুখী  প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে নদ-নদীর পানির উচ্চতা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস শুক্রবার সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবনতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে বরিশাল অঞ্চলে মাঝারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের কথাও বলেছে আবহাওয়া  বিভাগ। বরিশাল অঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত ছাড়াও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT