পদ্মা ও কীর্তনখোলায় নদী শাসন সফলভাবে সম্পন্ন করল খুলনা শিপইয়ার্ড পদ্মা ও কীর্তনখোলায় নদী শাসন সফলভাবে সম্পন্ন করল খুলনা শিপইয়ার্ড - ajkerparibartan.com
পদ্মা ও কীর্তনখোলায় নদী শাসন সফলভাবে সম্পন্ন করল খুলনা শিপইয়ার্ড

4:25 pm , August 2, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশের সর্ববৃহৎ নদী ভাঙন রোধ প্রকল্প সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়ন করল বাংলাদেশ নৌ বাহিনী নিয়ন্ত্রিত খুলনা শিপইয়ার্ড। দেশীয় তহবিলে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে মহানগরী সংলগ্ন চরবাড়িয়া এলাকার ভাঙন রোধ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের ফলে বিশাল জনপদ খর¯্রােতা দুটি নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পেল। নিরাপদ হচ্ছে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন অবকাঠামো সহ নানা স্থাপনা ও বিপুল ফসলি জমি। এরফলে বরিশাল মহানগর সন্নিহিত একাধিক ডকইয়ার্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ফেরিঘাট ছাড়াও সিটি করপোরেশনের পানি শোধনাগার সহ বিপুল স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ক্রয় নীতিমালার ‘ডিপিএম’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশে নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড শরিয়তপুরের নড়িয়াতে প্রায় ১০ কিলিামিটার দীর্ঘ বৃহৎ এ নদী তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে। দেশে পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদী শাসনের পরে শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া এলাকার প্রকল্পটিই অপর একক বৃহৎ প্রকল্প। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলের ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার এ প্রকল্পটির পাশাপাশি প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল মহানগরীর পাশে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধ প্রকল্পটিও ইতোমধ্য সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। বরিশালের প্রকল্পটির আওতায় কীর্তনখোলার ভাঙন থেকে মহানগরের পানি শোধনাগার সহ বেলতলা ফেরিঘাট ও চরবাড়ীয়ার ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন হয়েছে ।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে খুলনা শিপইয়ার্ডের চুক্তির আওতায় শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মার ভাঙন রোধে প্রথমে প্রায় ১১শ কোটি টাকার চুক্তি সম্পাদন হয়। পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ৩২৬ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় ড্রেজিং এর মাধ্যমে ৩ কোটি ৮ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন করে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙন কবলিত শরিয়তপুরের ঠাকুর বাজার, বাঁশতলা, কুন্ডের চর সংলগ্ন প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৪০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার ২১ লাখ সিসি ব্লক, ৪৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ৪.৮৫ লাখ এবং ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার প্রায় ১৬ লাখ সিসি ব্লক দিয়ে পদ্মা নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন কবলিত এলাকার নদী তীরে প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রায় ৬২ লাখ জিও ব্যাগ ফেলার পরে তার ওপর বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৬২ লাখ সিসি ব্লক সন্নিবেশ করে ভয়াল পদ্মার ভাঙন থেকে ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত প্রায় ৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে পদ্মার ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মুখে ইতোমধ্যে হাসি ফুটে উঠছে। ভাঙন প্রতিরোধ এলাকায় ইতোমধ্যে পর্যটক আকর্ষনেও নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিদিন আশপাশের এলাকা ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ পদ্মা পাড়ে বেড়াতে আসছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান সিরাজ জানান, ‘দেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ নদী শাসন প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। পদ্মার মত ভয়াল ও খর¯্রােতা নদীর ভাঙন রোধ ছিল অনেক কষ্টসাধ্য  বিষয়। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের রহমতে আমরা এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন এলাকায় নতুন করে কোন বিপত্তি সৃষ্টি হয়নি বলেও জানান প্রধান প্রকৌশলী ।
বরিশাল মহানগরীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে উত্তর ও উত্তরÑপূর্ব দিকে চরবাড়ীয়া হয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে ২০৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি ক্রয় নীতিমালার ‘ডিটিএম’ পদ্ধতির আওতায় খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় পৌনে ৫ লাখ জিও ব্যাগ সন্নিবেশ করে তার ওপরে ১২ লাখ ২০ হাজার সিসি ব্লক ফেরে নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পাশাপাশি ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে কীর্তনখোলা নদীর প্রবাহ নিরাপদ এলাকায় ঘুরিয়ে দিতে ড্রেজিং-এর মাধ্যমে ২৫ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারন ছাড়াও সিটি করপোরেশনের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার ‘শীট পাইলিং’ কাজও  সম্পন্ন করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। এতে করে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল মহানগরী ছাড়াও সদর উপজেলার চরবাড়ীয়ার বিশাল জনপদ এবং বিভিন্ন স্থাপনা সহ ফসলী জমি ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এছাড়া আরো ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্যাকেজে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়ের চরকাউয়া থেকে উত্তরে সাহেবের হাট চ্যানেলের মোহনা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মোট ৮টি প্যাকেজের দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বরিশাল বন্দরের অপর পাড় সহ মহানগরীর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তে কীর্তনখোলার ভয়াবহ ভাঙন প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT