এশিয়ার সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগানে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত এশিয়ার সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগানে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত - ajkerparibartan.com
এশিয়ার সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগানে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত

4:25 pm , August 2, 2023

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ছোট ছোট ডিঙি নাও ভর্তি পেয়ারা, গায়ে গা লাগানো ডিঙি নাওয়ের ঢেউয়ের দোলায় দুলতে থাকা পেয়ারা কিনতে পাইকারি ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ভীড়। তিনটি খালের মিলনকেন্দ্রের মনোরম দৃশ্য। যেকোনো একটি খাল ধরে ভিতরে প্রবেশ করলে খালের দুপাশে সবুজের সমারোহ। চোখ জুড়ানো পেয়ারা বাগান  ও ফসলের ক্ষেত। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই পেয়ারা বাগান ও ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো। এই পেয়ারা বাগান ও বাজার ঘুরে দেখে এখানে পর্যাপ্ত শিল্পায়নের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে  ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীদের এখানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করবেন বলে জানালেন রাষ্ট্রদূত। এসময় তার সাথে সফরসঙ্গী ছিলেন মিসেস সিনতা একা ওয়াতি সুবোলো। তিনি এগ্রিকালচার নিয়ে পড়াশুনা করেছেন বলে জানান সফরসঙ্গী থার্ড সেক্রেটারি ফিতরি  নুরুল ইসলামি। তিনি বলেন, মূলত মিসেস সুবোলো এর উৎসাহেই আমাদের এই ভ্রমণ। আমরা এই পেয়ারা নিয়ে গবেষণা ও এখানে চাষীদের উপকারের জন্য কিছু করতে আগ্রহী।
তাদের এই সফরে আরো উপস্থিত ছিলেন নোভো গ্রুপের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান এর সহধর্মিণী সৈয়দা নাসরীন রহমান, নোভো গ্রুপের ব্যবস্থাপক এস এম মহিউদ্দিন বাদশা এবং পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল্লাহ মজুমদারসহ লোকাল পুলিশের একটি অংশ রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব পালন করেন।
রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো মঙ্গলবার রাতে বরিশালে আসেন এবং স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। বুধবার সকালে তিনি তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বরিশাল থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরত্বে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি যাত্রা করেন। সেখানে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল্লাহ মজুমদার এবং নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রদূত সুবোলো ও তার সফরসঙ্গীরা জলযান ভাড়া করে প্রথমে তিনটি খালের মোহনায় ভীমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার পরিদর্শন করেন। এখানে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর তিনমাস পেয়ারার মৌসুম বলে জানান ভাসমান বাজারের পেয়ারা বিক্রেতারা। বাজারের ভীড়ে ছোট ছোট ডিঙি নাও ভর্তি পেয়ারা দেখতে রাষ্ট্রদূত ছাড়াও আরো অনেক দর্শনার্থীরা এসেছেন। চাষীরা জানান, প্রতিদিন গড়ে শত শত দর্শনার্থী আসা-যাওয়া করেন এই ভীমরুলি ও আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারার রাজ্যে।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও তার সফরসঙ্গীরা উপরে উঠে ভীমরুলি বাজারও ঘুরে দেখেন। এসময় বিলাতি গাব, ডাব, পেপে ও কলাসহ বিভিন্ন ফলের সমারোহ দেখে তারা মুগ্ধ হন এবং তা ক্রয় করেন। এরপর রাষ্ট্রদূতসহ অতিথিরা আটঘর কুড়িয়ানার এশিয়ার সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগানের ভিতর প্রবেশ করেন। তাদের সফরসঙ্গীদের মধ্যে বরিশালের বহুল আলোচিত দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রুবেলের ক্যামেরায় তখন ধারন করা হয় অসাধারণ কিছু ছবি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী জলাবাড়ি ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২৫টি পেয়ারার বাগান রয়েছে। শত বছর ধরে গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে এই পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু পেয়ারা পচনশীল ফল। অল্পসময় এটির সংরক্ষণ আয়ু। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সংরক্ষণের অভাবে এই পেয়ারা চাষীদের জীবনের কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং ক্রমশ পেয়ারা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা।
তবে আশার কথা শোনালেন অনেক চাষী। তারা পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করছেন এবং সরাসরি গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে ইদানীং ঢাকায় পাঠাতে পারছেন বলে জানান। ইদানীং দর্শনার্থী সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে জানান চাষীরা। তবে এখানে কোন আবাসিক ব্যবস্থা নেই নেই কোন শৌচাগার যে কারণে রাশি সমস্যায় পড়েন দর্শনার্থীরা।তবে এই সমস্যার শীঘ্রই সমাধান হবে জানিয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো তার পরিবার ও সহকর্মীদের নিয়ে পেয়ারা বাগান ও ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণ করেছেন।  আমরা এখানে তার ভ্রমণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার সর্বাধিক চেষ্টা করেছি। তাদের সাথে যতটুকু আলাপ হয়েছে তাতে এটা বলা যায় যে, তারা খুবই উপভোগ করেছেন ও এখানে বিনিয়োগ বিষয়েও উৎসাহ দেখিয়েছেন বলে জানান ইউএনও।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT