4:40 pm , August 1, 2023

ডাক্তারের অবহেলার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিষয়টিকে ডাক্তারদের অবহেলা নাকি শিশু তানজিম এর দুর্ভাগ্য কোনটা বলা যায় তা পরিষ্কার নয়, তবে খেলতে খেলতে অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে পরা শিশুটির নিতম্বের মাংস থেকে একটি সুই বের করার পর মৃত অবস্থায় বের হলো শিশুটিকে। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুরের পর বরিশালের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন ডা. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি (ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম ইতিপূর্বে ঘাড়ের অপারেশন করতে নিয়ে পেটে করে বহুল আলোচিত হয়েছেন। তবে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের তালিকায় তার কোনো নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে বিকাল চারটায় বরিশালের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের চতুর্থ তলার অপারেশন বিভাগে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধা দেন কর্তব্যরত সেবিকা ও দারোয়ান। মাত্র ৬ মাস বয়সের শিশু তানজিম অপারেশন টেবিলে মারা যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করে তারা ভিতরে প্রবেশে বাধা দেন ও বলেন, ভিতরে প্রবেশ করতে হলে আমাদের এমডির অনুমতি নিয়ে আসুন। ইতিমধ্যে আরো সাংবাদিক ও কোতোয়ালি থানা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর চলে আসেন। তাদের সাথে ভিতরে প্রবেশ করে পাশের একটি কেবিনে আর্তচিৎকার ও কান্নাকাটি শোনা যায়। কেবিনটিতে প্রবেশ করলে ২৫-২৮ বয়সের এক যুবককে আহাজারি করতে শোনা যায়। সে চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে- আহারে আল্লারে। আমি কেন এই কসাই ডাক্তারের কথা শুনলাম। এই কসাই আমরা জলজ্যান্ত পোলাডা মাইরা ফেললো। পাশেই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে শিশু তানজিম এর মা শিরিন আক্তার।
এরা কেউই কথা বলার অবস্থায় নেই। পাশেই পাওয়া গেল শিশুটির মামা রাকিব হোসেনকে। রাকিব জানালেন, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থেকে গত সোমবার তারা প্রথমে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) এ আসেন। সেখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার ভয়ে তারা মিড টাউন এ যান। পটুয়াখালী থেকে ডাঃ নাজিমুদ্দিন তাদের ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম এর কাছে রেফার করছেন। ওখানে ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম এর পরামর্শ মঙ্গলবার সকালে অপারেশন করাতে রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এসে ভর্তি হন তারা। অপারেশন টেবিলে যাওয়ার দুমিনিট আগেও বাবার বুকে খেলা করছে শিশু রাহাত।
এসময় বাবা ফিরোজ খান চিৎকার করে বলেন, ডা. তৌহিদুল ইসলাম নিজে বলেছেন শিশুটির নিতম্বে একটি সুই ঢুকেছে। এটা মেশিনে অপারেশন হবে। এটা কোনো বিষয়ই নয়। ২০ হাজার টাকা জমা দেন বলেই আবার কান্না মিশ্রিত চিৎকারে ভেঙ্গে পড়েন বাবা ফিরোজ।
মামা রাকিব তাকে শান্ত করে বলেন, শিশু তানজিমের নিতম্বের একপাশে কিভাবে যেন সুই ঢুকে গেছে। পটুয়াখালী ও পরে বরিশালে কয়েকবার এক্সরে করে সুইয়ের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েই এই অপারেশন করা হয়। ডাক্তার তৌহিদুল ইসলাম মেশিনে অপারেশন করার কথা বলে হাতে অপারেশন করেছেন এবং অজ্ঞান শিশুকে কোনো অক্সিজেন বা কাটা স্থান সেলাই করেননি। আমি ভিতরে ছিলাম। তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কয়েকজন তখন ওটি রুমে হাসি ঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নীচে আমার পরিচিত ফার্মেসীর একজনকে ডাকতে যাই। তাকে নিয়ে ফিরে আসলে আমাকে আর প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। কিছু পরেই আমি ভিতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগ্নেকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ তোলেন রাকিব হোসেন। ঘটনাস্থলে এসে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ফজলুল হক বলেন, আমরা ৯৯৯ এ সংবাদ পেয়ে এখানে ছুটে এসেছি। মৃত শিশু তানজিমের অপারেশন হয়েছিল। বাবা-মা এর সাথে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি এ সময় ঘাড়ের অপারেশন পেটে করার ঘটনা নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, ঐ ঘটনায় শেবাচিম ও আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দেন উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল হক।