3:56 pm , July 31, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খালকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ছোট-বড় ড্রেন ও নালা রয়েছে। যার বেশিরভাগই এখন ভরাট করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি। সিটি করপোরেশনের তদারকির অভাব ও দায়িত্বহীনতাকেই এজন্য দায়ী করছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গঠন নিয়ে এই মুহূর্তে নগরবাসীর সাথে একটা খেলা চলছে। সরেজমিনে ৩১ জুলাই নগরী ঘুরে দেখা গেছে, ২৩ নং ওয়ার্ড সাগরদি খালের দুপাশে অবৈধভাবে ক্লাবঘর ও সাবেক কাউন্সিলর অফিস দাঁড়িয়ে আছে খাল দখল করে। রয়েছে বেশকিছু বাড়ির রান্নাঘর ও টয়লেট। ১৩ নং ওয়ার্ড আমতলা মোড়ে মডেল মসজিদ সংলগ্ন দেয়াল ঘেঁষে বহমান ড্রেন বন্ধ করে নার্সারি ও আওয়ামী লীগ অফিস এবং নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডে জব্বার মিয়ার গলিতে রীতিমতো ড্রেনের উপর দেয়াল তুলে বাড়ি নির্মাণের জোর প্রতিযোগিতা চলতে দেখা গেছে। নদী গবেষক ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা রফিকুল আলম বলেন, সর্বশেষ ২০১০ সালেও ১৩টি খাল জীবিত ছিলো। এখন সাতটি খাল পুনরুদ্ধারের জোর প্রতিশ্রুতি শুনছি, তবে কোনো কার্যক্রম চোখে পরেনি আজও। ১০ নং ওয়ার্ডের একটি খাল ছিলো যা এখন ড্রেন বলে জানান তিনি।
সামাজিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, জিলাস্কুলের সামনেই একটি খাল ছিলো যা এখন ড্রেন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই ড্রেনের উপর কতগুলো ঘর নির্মাণ হয়েছে। তা কি সিটি করপোরেশন দেখেনা? এভাবেই খাল ও ড্রেন দখল হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় নগরীতে।
বরিশাল জিলাস্কুলের প্রধান ফটকের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া এজটি সরু গলির পুরোটাই ড্রেন। আর এই ড্রেনের উপরেই দিব্বি দোতলা ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে সিটি করপোরেশনেরই একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। এদিকে ১০ নং ওয়ার্ডের জব্বার মিয়ার গলিতে সিটি করপোরেশনের ড্রেনের উপর নতুন ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা বাহাউদ্দীন স্বপন।
এলাকাবাসী কয়েকজন জানান, এটি একটি খাল ছিলো, বেশ বড় পরিধি ছিলো। ২০০৩-৪ সালের দিকে মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার এটিকে সংস্কার করে ৭-৮ ফিট ড্রেন তৈরি করে দুপাশে ঢালাই করে দেন। বাহাউদ্দীন স্বপন এর প্রতিবেশী খান শাহীনুল হক বলেন, এই এলাকার প্রায় ১০০ পরিবারের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এই ড্রেন নির্ভর। এটি পুলিশ লাইন খাল ও ডিসি খালের সাথে গিয়ে মিশেছে।
তিনি বলেন, এই বাড়ির কাজ সম্পন্ন হলে এই ড্রেনের আর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তার দেখানো পথে ড্রেনটির কাছে গেলে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই প্রায় ভরাট হবার উপক্রম ড্রেনটি। বাহাউদ্দীন স্বপন এর বাড়িটির দেয়াল ড্রেনের উপরে গাঁথা হয়েছে। নীচে ড্রেনের জন্য সামান্য ফাঁকা রাখা হলেও উপরে ভবনের কার্ণিশ ড্রেনের সীমানা অতিক্রম করেছে। খুব শীঘ্রই যে এই ড্রেনটি অস্তিত্বহীন হবে এবং সংকটে পড়বে এলাকাবাসী তা নিশ্চিত বলা যায়।
এ বিষয়ে ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবীর বলেন, বিষয়টি শুনেছি, অভিযোগও পেয়েছি। আসলে সিটি করপোরেশনের রোড ইন্সপেক্টর এর দেখার কথা। আমি অভিযোগ পাওয়া মাত্র বাড়ির মালিক বাহাউদ্দীন স্বপনকে ডেকে সতর্ক করেছি। তিনি বলেছেন, ড্রেনের কোনো ক্ষতি হবেনা।
বাড়ির মালিক বাহাউদ্দীন স্বপন বলেন, সিটি করপোরেশনের ড্রেন হলেও এটি আমার রেকর্ডিও সম্পত্তির অংশ। আমরাই ড্রেনের জন্য জায়গা দিয়েছি। তারপরও ড্রেনের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেভাবেই বাড়ি নির্মানের কাজ হবে বলে জানান তিনি।
যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
এ বিষয়ে কথা বলা বা নকশা দেখার জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের আরআই এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসকে মুঠোফোনে করা হলে তারা কেউই রিসিভ ধরেননি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন বলেন, এখনই আরআই পাঠিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।