3:56 pm , July 28, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ একদিকে সড়কের পাশে গঁজিয়ে ওঠা দোকানপাট, অন্যদিকে ভাঙাচুরা ও খানাখন্দভরা সড়কে অহরহ দর্ঘটনার শিকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এরউপর রয়েছে রাত আটটা পার হলেই সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। এমনকি একটি রিকশাও চলেনা সড়কে। অসুস্থ রোগী বা গর্ভবতী মায়েদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা শহরে যাবার কোনো উপায় নেই। ভাঙাচুরা সড়কে হাতেপায়ে ধরেও কোনো ইজিবাইক বা আলফা, অটোরিকশা চালককে রাজী করানো যায়না। আর চালকদের অনেকে বলেন, দিনের আলোতেই ভাঙা সড়কে তীব্র ঝাঁকুনিতে দফারফা হবার জোগাড় যাত্রীদের। এরপর রয়েছে রাতে ছিনতাই আতঙ্ক। তাই রাত আটটার পর এই সড়কে আর যানবাহন চলাচল করে না। তবে যাত্রীদের বড় একটা অংশের দাবী, ২০১৭ সালে সড়ক এর চেয়েও খারাপ ছিলো। সেই সড়কে বাস চলাচল করেছে। সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় মারাত্মক একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এ সড়কে। সেই থেকে বাস চলাচল বন্ধ আছে। এ সড়কটি প্রশস্ত করে দ্রুত বাস সার্ভিস চালুর দাবী এ অঞ্চলের মানুষের। কেননা, ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র অধিক ভাড়ার পাশাপাশি অধিক যাত্রী নিয়ে ঝুকিপূর্ণ চলাচল করে।
বৃহস্পতিবার সরজমিনে এ অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। বরিশালের নতুনবাজার মড়কখোলা মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে বাবুগঞ্জগামী আলফা বা মাহেন্দ্র নামের তিনচাকার যানবাহনগুলোকে তিনজনের আসনে চাপাচাপি করে চারজন বসিয়ে চলতে দেখা যায়।
সবমিলিয়ে সড়কেই সর্বনাশ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। একজন সরকারি গাড়ি চালক মাহবুব হোসেন চাঁদপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের ভাঙা ও জমে থাকা পানি দেখিয়ে বলেন, এখান থেকে মীরগঞ্জ ফেরীঘাট পর্যন্ত যেতে হবে। ওপারে মুলাদি উপজেলা। পশ্চিম পাশের একটি সড়ক চলে গেছে দেহেরগতি ও কেদারপুরে। এ অংশের প্রতিটি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সাধারণত সন্ধ্যার পর এ অঞ্চলে রাতের নিরবতা নেমে আসে। ছিনতাই আর ডাকাতির ভয়ে ভারী যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক কারণেই ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ থাকে তখন।
এসময় বাবুগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী আহমদুল্লাহ বলেন, আমাদের চেয়েও বড় কষ্ট মুলাদি ও হিজলা মেহেন্দিগঞ্জের মানুষের। ফেরী সন্ধ্যার আগেই বন্ধ হয়ে গেলে পুরো রাত তারা অনেকটা নদীবন্দী জীবনযাপন করেন। এসময় তারা মরে গেলেও বরিশালের কেউ জানতেও পারবে না বলে জানান তিনি । বাবুগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের একটি মাধবপাশা বাদে বাকী পাঁচটি জাহাঙ্গীরনগর, কেদারপুর, দেহেরগতি চাঁদপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষের জেলা শহর বরিশালে যেতে এই ভোগান্তি প্রতিদিনের। কোথাও কোথাও এখনও সড়কই তৈরি হয়নি এ অঞ্চলে। বিশেষ করে জাহাঙ্গীর নগর, কেদারপুর ও দেহেরগতি এলাকার বেশিরভাগ গ্রাম এখনো উন্নয়নের মুখ দেখেনি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুকে নির্বাচনের পর আর কোনোদিন দেখেননি বলেও অভিযোগ তাদের। উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল এবং ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা ওহাব এলাকায় থেকেও সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্কহীন তারা। শুধু মাত্র নিজ দলীয় লোকজনের সাথেই তাদের সম্পর্ক। উন্নয়ন যেটুকু হয় তা ওই নিজ দলীয় লোকদের বাড়ি ঘরের বলে অভিযোগ এখানে। এলাকাবাসীর উন্নয়নে তাদের কোনো ভূমিকা নেই বলে জানান রহমতপুরের কয়েকজন বাসিন্দা। এখানে রহমতপুর এয়ারপোর্ট সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে অবৈধ দোকানপাট তোলার হিড়িক বসিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা তাদের সমর্থকরা। ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে বলে দাবী রহমতপুর ইউনিয়নবাসীর।
রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান (মিলন মৃধা) রহমতপুর – এয়ারপোর্ট সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ঝুকিপূর্ণ স্বীকার করে বলেন, এটা সরানো আমার দ্বারা সম্ভব নয়। সাবেক জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার এটা একবার উচ্ছেদ করিয়েছিলেন। এরপর প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার সুযোগে আবারও এগুলো গড়ে উঠেছে। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা। কিছু করলে তাদেরই করতে হবে। তিনি আরো বলেন, গড়িয়ারপাড় থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত যে যানজট সৃষ্টি হয়, তা এড়াতে অনেক ছোট গণপরিবহন রহমতপুর থেকে বাবুগঞ্জ হয়ে লাকুটিয়া সড়ক দিয়ে বরিশালে প্রবেশ করে। এসড়কটি প্রশস্ত ও সংস্কার করা হলে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কমবে। তিনি দ্রুত বিকল্প সড়ক হিসেবে বাবুগঞ্জ বরিশাল লাকুটিয়া সড়ক সংস্কারের দাবী জানান।
এখানে চাঁদপাশা গ্রামের সন্তান বরিশালে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বরিশাল থেকে বাবুগঞ্জ সড়কটির বর্তমান নাম লাকুটিয়া সড়ক। এ সড়কটি শুধু যে বাবুগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ ব্যবহার করে তা কিন্তু নয়। সড়কটিতে স্কুল কলেজ সহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মুলাদি ও মেহেন্দিগঞ্জের মানুষের সড়ক যাতায়াত এই পথে।
প্রকৌশলী তাপস আরো বলেন, এছাড়াও পদ্মা সেতুর কারণে বরিশাল ভাঙা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ এতটাই বেড়েছে যে বেশিরভাগ সময় যানজটে আটকে থাকে এই মহাসড়ক। বিশেষ করে বরিশাল সীমানার গড়িয়ারপাড় থেকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যানজটের কারণে দিশেহারা হয়ে শহরের নিকটতম বাসিন্দারা তখন বিকল্প পথে শহরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। আর এজন্য লাকুটিয়া সড়কটি আরেকটু প্রশস্ত করে বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী হলে এ অঞ্চলের মানুষের খুবই উপকার হবে বলে জানান সাবেক এই মেয়র প্রার্থী।
এ বিষয়ে চাঁদপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই অংশে সড়কের অবস্থা গত দেড়বছর ধরে। সাবেক যে প্রকৌশলী ছিলেন আমি তার কাছে সড়ক প্রশস্ত ও সংস্কারের জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছিলাম। আমার এলাকার মানুষও সেজন্য জমি দিতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি কোনো পদক্ষেপই নেননি। পরবর্তীতে তিনি চলে যাওয়ার মূহুর্তে সড়কটি সংস্কারের জন্য বলে গেছেন। তবে এখনও টেন্ডার হয়নি বলে জানান চেয়ারম্যান। বাবুগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাব বলেন, এই সড়ক এলজিইডির। তাদের কাজের মান এতটাই খারাপ যে এক বছরও টেকেনা কোনো সড়ক। এক বছর আগে এই সড়ক তারা করে দিয়েছেন। অথচ এখনি তা ব্যবহার অনুপযোগী। এ নিয়ে বহুবার মিটিং এ আলোচনা হয়েছে, সমাধান কিছুই হয়নি। ফারজানা আরো বলেন, আমি দলীয় লোকজনের উপকার করি এটা সত্যি। সে উপকারের ফল কিন্তু দলমত নির্বিশেষে সবাই পায়। কারণ আমিতো মনে করি আমার উপজেলার প্রতিটি মানুষই আমার দলীয় লোক। আওয়ামী লীগের আদর্শের বাইরে যারা তারাই শুধু এ অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা রহমান জানান, তিনি এখানে নতুন। এখনও সড়কটিতে তার যাতায়াত হয়নি। কোনো অভিযোগও