3:49 pm , July 23, 2023
এখনও থামছেনা স্বজনদের আহাজারী
তরিকুল ইসলাম, ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি ॥ ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ৮ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতদের পরিবারে দেখা দিয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের অন্য সদস্যরা। মর্মান্তিকএ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এসব পরিবার দায়ী করছে বাস চালকের খামখেয়ালীকে। দায়ী চালকের শাস্তির দাবীও জানিয়েছেন তারা। শনিবার ঝালকাঠিতে বাস দুর্ঘটনার নিহত ১৭ জনের মধ্যে এর মধ্যে ৮ জনই ভান্ডারিয়া উপজেলার বাসিন্দ।
এরা হলেন : দক্ষিণ ভান্ডারিয়ার পান্না বেপারীর ছেলে তারেক বেপারী (৪২), উত্তর পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের ছালাম মোল্লা (৬৫) ও তার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), পশারী বুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদার এর মেয়ে সুমাইয়া (৬), পূর্ব ধাওয়া এলাকার রহিমা বেগম (৭০) ও ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার (৫০) , উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭৫) ও তেলিখালী গ্রামের রাসেল সিকদার এর স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৪)। এরা সবাই বরিশালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন। নিহত অন্যরা হলেন : রাজাপুরের খাদিজা বেগম (৪৩), খুশবু আক্তার (১৭), নয়ন (১৬) বাকের গঞ্জের আব্দুল্লাহ (৮), মেহেন্দিগঞ্জের আইরিন আক্তার ও মেয়ে রিপা মনি (২),কাঠালিয়ার সালমা আক্তার মিতা (৪২) ।
নিহত সালাম মোল্লার ছোট ছেলে রাসেল মোল্লা জানান, তার বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাবার চিকিৎসার জন্য বরিশালে যাচ্ছিলেন। চালকের পেছনের ছিটেই বসা ছিল সে। বাস ছাড়ার পর থেকে বাসের চালক বাড়তি যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসের সুপার ভাইজারের সাথে কথা বলছিল। গাড়ি চালাতে সে অমনোযোগি ছিল । গাড়ীটি ছত্রকান্দা বাসষ্ট্যান্ড পার হওয়ার পরই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে উল্টে গিয়ে বেশীরভাগ যাত্রী পানিতে ডুবে মারা যায়। আল্লাহর রহমতে আমি বাসের জানালা থেকে বের হয়ে জীবনে বেঁচে যাই কিন্তু আমার বাবা ও বড় ভাই ট্রাক ড্রাইভার শাহীন ঘটনা স্থলেই মারা যান। নিহতদের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় তাদের স্বজনদের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে তার মা মাহিনুর বেগম ও অন্তসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা আক্তার বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। ভান্ডারিয়া বাজারের নিহত ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক বেপারীর বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে শোকে তার স্ত্রী কেয়া অচেতন হয়ে পড়ে আছে। তার শ্বশুর কামাল হোসেন জানান, শিশু পুত্র মাহাদি (৭) কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিল তারেক। শিশুটি বেঁেচ গেলেও তার বাবা ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত শিশু পুত্র মাহাদি জানায় বাসটি যখন পুকুরে পরে ডুবে যাচ্ছিল কে যেন তাকে জানালা দিয়ে টেনে বের করে আনে। দুর্ঘটনায় তার ডান হাতটি ভেঙে গেছে।
নিহত ৬ বছরের শিশু কন্যা সুমাইয়ার মা পিয়ারা বেগম জানান, মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। পথে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে মেয়েটি মারা যায় আমি কোন রকমে জানালা থেকে মাথা বের করে মেয়েটির হাতের কাছে পেয়ে তাকে নিয়ে বের হই। ততক্ষণে দেখি সে মৃত। তার আর চিকিৎসার প্রয়োজন হলোনা।
পূর্ব ধাওয়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ জানান, পশারিবুনিয়া জামে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম হাওলাদার তার মা রহিমা বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় দুজনেই মারা যান। আবুল কালামই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। নিহতের ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র মোঃ রুবেল জানান, আমার বাবা মারা যাওয়ায় সংসার চালানোর মত কেউ রইল না। এখন আমাদের কিভাবে চলবে সংসার। ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সীমা রানী ধর জানান, নিহত প্রতিটি পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে ১০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। আহত শামীম মোল্লা জানান, বাস চালক ও হেলপারের খামখেয়ালির জন্য এ দুর্ঘটনা। বাস ছাড়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে যাত্রী উঠায় তারা। বাসে বসার জায়গা না থাকায় যাত্রী উঠাতে নিষেধ করে বাসে থাকা লোকজন। এ নিয়ে তাদের সাথে ঝগড়া শুরু করে বাসের চালক। বাসের চালক পিছনের দিকে তাকিয়ে ঝগড়া করার এক পর্যায় বাস নামিয়ে দেয় রাস্তার বাইরে। তিনি কোনমতে জীবন বাঁচাতে পারলেও তার বাবা ও বড় ভাই মারা যায়।পিতা এবং পুত্রের এ করুন মৃত্যুতে এলাকায় বইছে শোকের ছায়া।এদিকে ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মিরাজুল ইসলাম ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম নিহত পরিবারে সকলের লাশ পৌঁছানোর জন্য এ্যাম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন। নিহত প্রতি ব্যক্তির ঘরে ঘরে রাতেই ৫০হাজার টাকা করে অনুদান পৌঁছে দিয়েছেন।