বরিশাল অঞ্চলে ‘গরীবের খাদ্য’ মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টন বরিশাল অঞ্চলে ‘গরীবের খাদ্য’ মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টন - ajkerparibartan.com
বরিশাল অঞ্চলে ‘গরীবের খাদ্য’ মিষ্টি আলুর উৎপাদন পৌনে ৩ লাখ টন

4:08 pm , July 22, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার অধিক ক্যালরি উৎপন্নকারী ‘গরীবের খাদ্য’ মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় পৌনে ৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। অনগ্রসর মানুষের স্বল্প ব্যয়ে পুষ্টির ভাল যোগানদাতা এ খাবার সাধারনের জন্য সারাদিনের পুষ্টির যোগানদাতা। কৃষি এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙ্গিন শাঁসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরণে সক্ষম। যা শিশুদের রাতকানা রোগ সহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টিশক্তি স্বল্পতার আশংকা থেকেও নিরাপদ রাখতে সহায়ক।
বিগত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে পৌনে ৩ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রেজানা গেছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার থেকে ৬৫ হাজার হেক্টরে সাড়ে ৮-১০ লাখ টন  মিষ্টি আলু উৎপাদন হচ্ছে। যার প্রায় একÑতৃতীয়াংশই বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে বলে ডিএই’র হিসেবে বলা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল বীজ সহ মাঠ পর্যায়ে উন্নত আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুনে উন্নীত করা সম্ভব বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা।
বরিশাল কৃষি অঞ্চলের চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট বারি’র বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উচ্চফনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুন। এমনকি এসব মিষ্টি আলু থেকে জেলি, জ্যাম, মিষ্টি, চিপস, হালুয়া ছাড়াও পুষ্টি সমৃদ্ধ ও উন্নত মানের  শস তৈরী করা সম্ভব।
মিষ্টি আলুর দেশী জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত উৎপাদন সম্ভব হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টিআলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টিআলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টিআলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টিআলু-৫, বারি মিষ্টিআলু-৬, বারি মিষ্টিআলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০-৪০ টন পর্যন্ত। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার হেক্টর প্রতি ২০.২৩ টন মিষ্টি আলুর উৎপাদন হয়েছে বলে জনিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান এখন প্রায় চতুর্থ। তবে সুদূর অতীতকালের জনপ্রিয় এ খাদ্যফসলের বহুমুখী ব্যবহার এখনো সম্প্রসারণ ঘটেনি। এমনকি উৎপাদন এলাকার বাইরেও এ ফসলের তেমন প্রচলন নেই। এমনকি ‘বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ কৃষক পর্যায়ে পরিপূর্ণভাবে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি ‘বারি’ উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ সহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে ডিএই’র মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে পরিমান জমিতে সনাতন জাতের মিষ্টি আলুর আবাদ হচ্ছে, সেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে এ অঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
অথচ ‘বারি’ ফিলিপাইন থেকে ১৯৮১ সালে ‘টিনিরিনিং’ নামের একটি লাইন সংগ্রহ করে অন্যান্য জার্মপ্লাজামের সাথে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে গবেষনা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি)’ নামে অনুমোদন প্রদান করে মাঠ পর্যায়ে আবাদের জন্য ছাড় করে। এ জাতের মিষ্টি আলুর কান্ড ২শ’ থেকে আড়াইশ গ্রাম। তবে কোন কোন সময়ে একটি মূল দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এ আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আই ইউ ভিটামিন এ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত।
তাইওয়ানের এশীয় সবজি গবেষনা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১৯৮০ সালে একটি লাইন সংগ্রহ করে জার্ম প্লাজামের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-২’ নামের জাতটি অনুমোদনের মাধ্যমে আবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ মিষ্টি আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে সাড়ে ৭ হাজার আই ইউ ভিটামিন-এ রয়েছে। এসব উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু আবাদের ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
দোআঁশ ও বেলে মাটি মিষ্টি আলু আবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পরিমিত পরিমাণ গোবর সার ছাড়াও টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যন্ত ভাল ফলন পাওয়া যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চরাঞ্চলের বেলে দোআঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের অনুকুল। তবে চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত এ আলুর আবাদ সম্ভব ।
বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫’এ প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটামিন-এ’র একটি ভাল উৎস। এসব জাতের মিষ্টি আলু দিয়ে অতি সহজেই শস পর্যন্ত তৈরী করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বারি’র বিজ্ঞানীরা। যা গ্রামের মেয়েদের ঘরে বসে একটি বিকল্প আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে।
এবারো মার্চের শেষ থেকেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করে মে -জুন পেরিয়ে বরিশালের বাজারে এখনো বিক্রী হচ্ছে। মৌসুমে প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে মিষ্টি আলু বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা গড়ে ১৫ টাকার বেশী দাম পায়নি। গোল আলুর চেয়ে মিষ্টি আলুতে কৃষকরা কিছুটা ভাল দাম পেলেও এখনো লতা-বীজ সংকটই দক্ষিণাঞ্চলে এ অর্থকরি ফসল আবাদে প্রধান অন্তরায়। চলতি রবি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা প্রতি কেজি গোল আলু বিক্রি করেছেন মাত্র ৭-১০ টাকা কেজি দরে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT