চরফ্যাসনের এক প্রতারক প্রেমিকের জন্য এক প্রেমিকার আত্মহত্যা অপর জনের অনশন চরফ্যাসনের এক প্রতারক প্রেমিকের জন্য এক প্রেমিকার আত্মহত্যা অপর জনের অনশন - ajkerparibartan.com
চরফ্যাসনের এক প্রতারক প্রেমিকের জন্য এক প্রেমিকার আত্মহত্যা অপর জনের অনশন

4:53 pm , July 21, 2023

চরফ্যাসন প্রতিবেদক ॥ চরফ্যাসনে প্রেমিক মোর্শেদের প্রতারনায় প্রেমিকা নাভীলা (১৯) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে এওয়াজপুর ইউনিয়নের পৈত্রিকবাড়ির বসতঘরে ফ্যানে ঝুলে তিনি আত্মহত্যা করেন। অপর প্রেমিকা কলেজ ছাত্রী ইয়াসনুর (১৯) বিয়ের দাবীতে বুধবার বিকেল থেকে তিনদিন ধরে প্রেমিক মোর্শেদের বাড়িতে অনশন করছে। এক যুবককে ঘিরে দুই প্রেমিকার এমন কান্ডে এলাকায় তোলপাড় চলছে। পুলিশের চরফ্যাসন সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার গতকাল শুক্রবার বিকেলে দুটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নাভীলা চরফ্যাসনের শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জনৈক বাচ্চু মিয়ার মেয়ে। ইয়াসনুর লালমোহন উপজেলার চর ছকিয়া গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিনের মেয়ে এবং প্রেমিক মোর্শেদ চরফ্যাসনের দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মাওলানা সামসুদ্দিনের ছেলে। নিহত নাভীলার পরিবার, অনশনরত ইয়াসনুর, থানা পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রগুলোর সাথে কথা বলে জানাগেছে, যুবক মোর্শেদ চরফ্যাসনের রহিমা ইসলাম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রেমিক নাভীলা তার সহপাঠী। অপর দিকে ইয়াসনুর লালমোহন উপজেলার করিমুননেছা মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। একই কলেজে পড়ার সুবাধে নাভীলা এবং মোর্শেদ প্রেম প্রণয়ে জড়ায়। পাশাপাশি চর মানিকায় বোনের বাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সময় দুই বছর আগে ইয়াসনুরের সাথে মোর্শেদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে থেকে তারা গোপনে প্রেম-প্রণয় এবং অভিসারে ছিলেন। প্রেমিক মোর্শেদের বাড়িতে অনশনে থাকা ইয়াসনুর জানান, দীর্ঘ ২ বছর সম্পর্ক বজায় রাখলেও মোর্শেদ তাকে বিয়ে করছিল না। সম্প্রতি পারিবারিক ভাবে লালমোহনে এক পাত্রের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। গত ১২ জুলাই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। এই খবর পেয়ে একদিন আগে ১১ জুলাই মোর্শেদ বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ইয়াসনুরকে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে প্ররোচনা দেয়। প্রেমিক মোর্শেদের উপর বিশ্বাস করে ইয়াসনুর নগদ ৬০ হাজার টাকা এবং মায়ের কিছু অলংকার নিয়ে পালিয়ে মোর্শেদের কাছে চলে আসেন। এখানে আসার পর এক সপ্তাহব্যাপী মোর্শেদ ইয়াসনুরকে নিয়ে চরফ্যাসনের বিভিন্ন স্থানে তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ছিল। কিন্ত গত মঙ্গল বার বিকেলে দক্ষিণ আইচা গণস্বাস্থ্যের সমনে ইয়াসনুরকে রেখে মোর্শেদ গা-ঢাকা দেয়। প্রেমিক মোর্শেদকে না পেয়ে পরদিন বুধবার বিকেলে ইয়াসনুর মোর্শেদ এর চর মানিকা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন। এদিকে প্রেমিক মোর্শেদের বাড়িতে বিয়ের দাবীতে প্রেমিকা ইয়াসনুরের অবস্থান এবং অনশনের খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে পাশের থানা শশীভূষণের এওয়াজপুর গ্রামের বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মোর্শেদের সহপাঠী প্রেমিকা নাভীলা। রহিমা ইসলাম কলেজে একই শ্রেণিতে পড়ার সুবাদে মোর্শেদ এবং নাভীলার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কয়েক মাস সম্পর্কের পর সম্প্রতি দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে তাদের বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত বৃহষ্পতিবার দুই পরিবারের অভিভাবকরা মিলিত হয়ে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার কথা ছিল। কিন্ত তার একদিন আগেই বুধবার মোর্শেদের বাড়িতে বিয়ের দাবীতে অপর প্রেমিকা ইয়াসনুরের অবস্থান এবং অনশনের খবরে হতাশ হয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন নাভীলা।বুধবার বিকেল থেকে প্রেমিক মোর্শেদের বাড়িতে প্রেমিকা ইয়াসনুর অবস্থান এবং অনশনে থাকলেও ঘটনাটি তেমন আলোচনায় ছিল না। কিন্ত একদিন পর বৃহষ্পতিবার নাভীলা আত্মহত্যা করলে ইয়াসনুরের অনশন এবং অবস্থানের ঘটনাটি নিয়ে এলাকা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার মোর্শেদ-এর দক্ষিণ আইচা গ্রামের বাড়িতে গেলে ইয়াসনুর অভিযোগ করেন, এই বাড়িতে অবস্থান নেয়ার পর তাকে বের করে দেয়ার জন্য দফায় দফায় মারধর করা হয়েছে। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে ব্যবহারের মোবাইল। দেয়া হয়নি খাবার বা পানিও। থানা পুলিশ এসে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিয়েছে। জানাযায়, মোর্শেদের বাবা মাওলানা সামসুদ্দিন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মোর্শেদ দ্বিতীয় সন্তান। নাভীলার বাবা শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মজীবী। তিন বোনের মধ্যে নাভীলা সবার বড় ছিল। অপরদিকে ইয়াসনুরের বাবা একজন কাঠমিস্ত্রী। দুই বোন এবং এক ভাইয়ের মধ্যে ইয়াসনুর দ্বিতীয়। তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে এবং একমাত্র ভাইটি তার ছোট। শশীভূষণ থানার অফিসার ইন চার্জ ম.এনামুল হক জানান, আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রেমিক তথা হবু বরের বাড়িতে অপর প্রেমিকার অবস্থানের খবর পেয়ে ক্ষোভ-হতাশা থেকে নাভীলা আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের অভিযোগ না থাকায় লাশ অভিভাবকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইন চার্জ শাখাওয়াত হোসেন জানান, মোর্শেদের বাড়িতে প্রেমিকা ইয়াসনুরের অবস্থান এবং অনশনের খবর পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কিন্ত এখানে পুলিশের কিছু করার নেই। ভিক্টিমপক্ষ চাইলে আদালতে যেতে পারেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT