4:51 pm , July 21, 2023

মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি বাতিলের দাবীতে সড়ক অবরোধ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে দুই দল শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত দফায় দফায় সড়ক অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছে। এদের মধ্যে নগরীর ৩০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সৈয়দ নজুরুল ইসলাম, বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মো. হানিফ, সদস্য রাব্বি আলমকে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক নুরে আলম ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাদৎ হোসেন লিটন বলেন, বেলা সকাল ১১টার দিকে বাসটার্মিনালে সংগঠনের কার্যালয় বসে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকার কাজ করছিলেন। হঠাত কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন মোল্লার নেতৃত্বে রায়হান, রিয়াজ, মনু মোল্লা, রিয়াদ হোসেনসহ অজ্ঞাত আরো ১০ থেকে ১২ জন হামলা করে। তাদের আহত করে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে লাঠি চার্জ করে সকলকে ছত্র ভঙ্গ করে দেয়। তিনি জানান, হামলাকারীরা মালিক সমিতিকে গিয়েও হামলা করেছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহানগর শ্রমিক লীগের সদ্য ঘোষিত অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবীতে নথুল্লাবাদ এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন আফতাব হোসেনের নেতৃত্বে শ্রমিকরা। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসুচী পালন করেন তারা। জনগণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে ১৫ মিনিট পরে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত পন্থী এই নেতা। কর্মসূচি শেষ করে মালিক সমিতি কার্যালয় অবস্থান কালে এই হামলাকারীরা সেখানে হামলা চালায়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পুলিশ লাঠিচার্য করে দুই পক্ষেকে সরিয়ে নিয়েছে। পরে লিটন মোল্লার পক্ষের শ্রমিকরা পুনরায় সড়ক অবরোধ করে। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দুই দিকে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। যদিও কিছু সময় পরে লিটন মোল্লা অনুসারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে টার্মিনালের ভেতের একপাশে মালিক সমিতির আফতাব হোসেনের লোকজন এবং অপর পাশে লিটন মোল্লার লোকজন অবস্থান নেয়। মাঝখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে, হঠাৎ করেই লিটন মোল্লার অনুসারীরা অপর পক্ষের শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে লাঠিচার্জ করলে লিটন মোল্লাসহ তার অনুসারীরা টার্মিনাল এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।উভয় পক্ষের শ্রমিকদের দাবি, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের।যদিও মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটির নামে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন মহানগর শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের দিয়ে মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা ওই কমিটির বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং তা সুষ্ঠুভাবেই করা হচ্ছিলো। ওইসময় বিনা উস্কানিতে আমাদের ডিষ্টার্ব করার জন্য কিছু লোক সেখানে আসে। যাদের হামলায় আমাদের ১০-১২ জন লোক আহত হয়। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যা দেখাতে চেয়েছে আমরাও তার পাল্টা জবাব দিতে পারি কিন্তু আমরা সন্ত্রাসী না।তিনি বলেন, শ্রমিকরা তাদের সংগঠনে নির্বাচন চান, এটা তাদের ব্যাপার। আমরা সেটি নিয়ে তো কিছু বলিনি। শ্রমিকদের কমিটির অবৈধ সেক্রেটারি টাকা পয়সা নিয়ে কিছু লোক তাদের সংগঠনের ঢুকিয়েছে, যেসকল লোক কোন বাস মালিকের কর্মচারী নয়। এখন তাদের নিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বাস টার্মিনালে।
কামাল হোসেন লিটন মোল্লা বলেন, আফতাবের নেতৃত্বে বাস শ্রমিক ইউনিয়নের পকেট কমিটি বানানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। শ্রমিকরা তার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন বানচাল করতে এবং বাসস্ট্যান্ডের দখল নিতে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশের অনুরোধে ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তা তুলে নেওয়া হয়।
এদিকে বেলা ১ টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার দক্ষিন মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা, বিপিএম (বার) ও উপ-কমিশনার উত্তর বি.এম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। তবে বর্তমানে বাস টার্মিনাল এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, বাসসহ যানবাহন চলাচল করছে। উভয় পক্ষ পরবর্তীতে বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলেছেন জানিয়ে তারা বলেন, আশাকরি আর কোন ঝামেলা হবে না। উভয় পক্ষের কেউ যদি অভিযোগ দেয় তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরবর্তীতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাস টার্মিনাল এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে। এদিকে এ ঘটনার পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, হুমায়ুন কবির, সুলতান মাহমুদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন, সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ভিপি মঈন তুষারসহ নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান এবং মালিক-শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তারা শ্রমিকদের কারো প্রতারণা কিংবা উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বসে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানান। আর সেই সময় পর্যন্ত সবাই শান্ত থাকার আহবান জানান।