মানব পাচার প্রতিরোধে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক সেমিনার মানব পাচার প্রতিরোধে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক সেমিনার - ajkerparibartan.com
মানব পাচার প্রতিরোধে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক সেমিনার

4:44 pm , July 20, 2023

খবর বিজ্ঞপ্তি ॥ গত মঙ্গলবার বরিশাল নগরীর একটি হোটেলের সভাকক্ষে মানবপাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মোঃ মনজুরুল হক এর উপস্থিতিতে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফয়েজউল্লাহ ফয়েজের সভাপতিত্বে মানব পাচার প্রতিরোধে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেএে প্রতিবন্ধকতা ও করনীয় বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা বরিশাল সদর উপজেলার সভাপতি মোঃ জহিরুল ইসলাম জাফর এর পরিচালনায় সেমিনারে ইউ এস আই ডির প্রশিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম ফ্যাসিলেলেটর ও এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আযাদ তিন মাসের বিভিন্ন মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, মানব পাচার একটি গুরুতর অপরাধ। মানব পাচারের পেছনে দারিদ্র্যতা, কর্ম সংস্থানের সুযোগের অভাব, স্বল্প শিক্ষা, ভঙ্গুর পরিবার, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, অভিবাসন নীতিমালাসহ বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়।  মানব পাচারের সঙ্গে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি জড়িত। পাচারের শিকার মানুষগুলো যেমন দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে, তেমনি দেশে তাদের স্বজনদের জন্য বয়ে আনছে আসছে বেদনা, হতাশা ও অনিশ্চয়তা। দেশের ভেতরেই কর্মসংস্থান এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে পাচারকারী চক্র বেকারদের প্রলুব্ধ করার সুযোগ না পায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রবৃদ্ধিমুখী উন্নয়নকে কর্মসংস্থানমুখী করতে হবে এবং নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তবে মানব পাচার রোধে সবচেয়ে জরুরী যে কাজ সেটি হলো পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা। যারা মানব পাচারে সহায়তা করবেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে সরকার সোচ্চার রয়েছে।
মানব পাচার টাইব্যুনাল না থাকার কারনে মামলার জট লেগেই ছিল। বিভিন্ন সংস্থা ও দাতা গোষ্ঠির এডভোকেসির কারনে সরকার ইতিমধ্যে ৭ টি বিভাগীয় শহরে মানব পাচার ট্রোইব্যুনাল গঠন করেছে। ট্রাইব্যুনালগুলো স্বাধীনভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মানব পাচারের দালাল ও এজেন্সির বিরুদ্ধেও সরকার আপোষহীন। এই আইনের ফলে ২০০০ সালে পাশকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৫ ও ৬ ধারা এবং একই সাথে অনৈতিক পাচার প্রতিরোধ এ্যাক্ট, ১৯৩৩ নামে আইনটি অকার্যকর করা হয়। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ২১(২) ধারা অনুযায়ী, অপরাধ সমূহ বিচারের জন্য দায়রা জজ কিংবা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদ মর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়নি। ফলে এখনো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলাগুলোর বিচার চলছে। এক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ সূত্রিতা। ফলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনটির পরিপূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে পুলিশ প্রসিকিউটর কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালাগুলোতে জেলা আদালতে মানব পাচার আইনে দায়েরকৃত মামলার তথ্য উপস্থাপনা করা হয়েছিল। সে সেব তথ্য পুনরায় অনুসন্ধান ও কর্মশালার সুপারিশ সমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বর্তমান অবস্থা এ কর্মশালায় উপস্থাপন করা হলো : বরিশাল জেলায় ২০২০ সাল থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২৫ টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ের মধ্যে ৫ টি মামলা নিস্পত্তি এবং ১ টি মামলায় এক জন আসামীকে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। বরিশাল জেলার মানব পাচার মামলার পরিসংখ্যান (২০২০- মার্চ ২০২২) এর তথ্য ও বর্তমান অবস্থা
পূর্ববর্তী বছরের কেস ৮। ২৩ টি চলমান মামলার মধ্যে সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে ২০ টি। যা মানব পাচার মামলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্ববহ। আমরা আশা করি খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলাগুলির সমাধান হবে। মামলা পর্যালোচনা : মানব পাচার বিষয়ক মামলাগুলো বিশ্লেষন করে দেখা যায় (গড় হিসেবে), তদন্তের সময় লেগেছে ১৮ মাস (১ বছর ৬ মাস)। মামলাটির চার্জ শুনানী/ চার্জ গঠনের জন্য সময় অতিবাহিত হয়েছে প্রায় ৩ মাস এবং বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। অনেক মামলায় সাক্ষীরা সঠিক সময়ে সাক্ষ্য প্রদান করতে না আসায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সময় বাড়াতে হচ্ছে। পর্যবেক্ষণঃ আসামীদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া (তদন্ত প্রতিবেদনে কালক্ষেপন, চার্জ শুনানী/ চার্জ গঠনে দীর্ঘ সময় লাগা, দীর্ঘদিন পর সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তারিখ প্রদান ও সাক্ষ্য প্রদান সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় নেওয়া, সাক্ষীদের আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করতে না আসা)
আদালতে মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রিতা, সাক্ষীদের বক্তব্য পরিবর্তন ইত্যাদির কারনেও মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বর্তমানে মামলাগুলির ধারা প্রকৃতি বিশ্লেষন, বিভিন্ন কর্মশালা থেকে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মানব পাচার প্রতিরোধে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণ উপস্থাপন করছে।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজী মিরাজ, বরিশাল বারের সাবেক সভাপতি এ্যাড. লস্কর নুরুল হক, সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার মুন্সি, পিপি কাউয়ুম খান কায়সার, জেলা তথ্য কর্মকর্তা ………….. এনজিও ফোরামের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, আভাস পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল, বিডিএস পরিচালক প্রেমানন্দ বিশ্বাস, এপিপি রাসেদ জোমাদ্দার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক, শামস তাবরিজ, তুহিন মোল্লা, ব্লাষ্ট পরিচালক সাহিদা তালুকদার প্রমুখ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT