4:37 pm , July 19, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর-খুলনা সড়কটি জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা লাভ করলো। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সড়ক পরিবহন উইং সম্প্রতি এ সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এরফলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুটি বিভাগীয় সদরের মধ্যে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আগামীতে আরো উন্নত হবার পাশাপাশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথেও এদুটি বিভাগের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হবে। ফলে আগামীতে দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর ছাড়াও প্রধান দুটি স্থলবন্দর সহ গোটা উপকূলভাগে একটি টেকসই ও উন্নত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হবে বলে আশা করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
ইতোপূর্বে বরিশাল বিভাগীয় সদর থেকে ঝালকাঠী-পিরোজপুর ও বাগেরহাট হয়ে খুলনার ১০৫ কিলোমিটার সড়কটি জেলা সংযোগ সড়কের মর্যাদায় ছিলো। ফলে সড়কটির উন্নয়ন সহ রক্ষনাবেক্ষনে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ছিল যথেষ্ট অবহেলিত। অথচ এ সড়কটির ওপর শুধু বরিশাল ও খুলনা বিভাগই নয়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথেও লক্ষ্মীপুর-ভোলা হয়ে মোংলা এবং খুলনা ছাড়াও বেনাপোল ও ভোমড়া বন্দরের সড়ক পরিবহন নির্ভরশীল। বরিশাল ও খুলনার মধ্যে মাত্র ১০৫ কিলোমিটারের এ সড়কে ৫টি নদীতে ফেরির সাহায্যে যানবাহন পারাপার করতে হত। ২০০০ সালের পর থেকে এসব নদীতেই সেতু নির্মানের ফলে সেই বিড়ম্বনা দূর হলেও এ সড়কটি জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা লাভ না করায় অর্থ বরাদ্দ থেকে শুরু করে কাঙ্খিত উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। অথচ এ সড়কটির ওপরই সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল হয়ে মোংলা,খুলনা,ভোমড়া ও বেনাপোলের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল। ইতোপূর্বে এ সড়কের গাবখানে চীনা অনুদানে ‘বাংলাদেশ-চীন ৫ম মৈত্রী সেতু’,পিরোজপুরের দেশীয় নিজস্ব তহবিলে ‘বলেশ^র সেত’ু, বাগেরহাটের ‘দড়াটানা সেত’ু এবং জাপানী ঋনে খুলনার ‘হজরত খান জাহান আলী (রঃ) সেতু’ নির্মানের পরে সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে পিরোজপুরের কঁচা নদীর ওপর চীনা অনুদানে নির্মিত ‘বাংলাদেশ-চীন ৮ম মৈত্রী সেতু’ চালুর ফলে দুটি বিভাগের মধ্যে ফেরিবিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এতদিন জেলা সংযোগ সড়ক হিসেবে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত থাকায় মূল সড়কের কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। তবে সদ্য জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা লাভকারী বরিশাল-খুলনা মহাসড়কটির পিরোজপুর বাইপাস ও ঝালকাঠীর ‘বেইলি সেতুটি পরিবর্তন জরুরী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও মহাসড়কটির রাজাপুর-বেকুটিয়া অংশে বেশ কয়েকটি সরু বেইলি সেতুও নিরাপদ সড়ক পরিবহনে বড় অন্তরায়। এ ব্যাপারে সড়ক অধিদপ্তরের বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম আজাদ রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বরিশালÑখুলনা সড়কটি জাতীয় মহাসড়কের মর্যাদা লাভ করায় এর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এখন তরান্বিত হবে। পাশাপাশি রাজাপুর-বেকুটিয়া অংশের সরু বেইলি সেতু পরিবর্তনের কাজও শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি পিরোজপুর বাইপাস সড়কের বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ লক্ষে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পেস করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরদিকে মহাসড়কটির অপর বেইলি সেতুটি পরিবর্তে সেখানে পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মানের লক্ষ্যে একটি একক প্রকল্পের আওতায় নকশা প্রনয়ন কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি। ভবিষতে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কটি একটি মানসম্পন্ন সড়ক যোগাযোগ মাধ্যমে উন্নীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কটির মান উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলেছে। প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশস্তকরণ সহ টেকসই ও মানসম্পন্ন মহাসড়কে রূপান্তর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর ও তিনটি উপকূলীয় বিভাগের মধ্যে একটি টেকসই ও সংক্ষিপ্ত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত হতে যাচ্ছে বলে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি চট্টগ্রাম-বরিশাল মহাসড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চাপ অনেকটাই হ্রাস করবে। বরিশাল-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নির্বিঘœ হলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে বরিশাল বিভাগ ছাড়াও খুলনা,মোংলা, বেনাপোল ও ভোমড়া’র দূরত্ব প্রায় অর্ধেক হ্রাস করবে। এদিকে পরিকল্পনা কমিশন একই সাথে বরিশালের বাকেরগঞ্জ-পাদ্রীশিবপুর-কাঠালতলী-সুবিদখালী-বরগুনা জেলা সংযোগ সড়ক এবং বরিশাল থেকে চরখালী হয়ে তুষখালী-মঠবাড়ীয়া-পাথরঘাটা জেলা সড়ক দুটিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করেছে। এসব আঞ্চলিক মহাসড়ক বরিশাল সহ নদ-নদী বহুল দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আগামীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।