4:29 pm , July 8, 2023
আশীষ দাসগুপ্ত ॥ বাংলাদেশের শতাধিক শিক্ষকের সংকল্পবদ্ধ বজ্রকণ্ঠের সাহসী বক্তব্য গতকাল ৭ জুলাই আমার মনকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। স্বাধীনতার পরে খুব সম্ভব এটাই প্রথম বাংলাদেশের শতাধিক শিক্ষক ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলেছে। আমার মত সারা দেশের অসংখ্য মেধাবী মানুষ দেশ সেবার এই মহান ব্রত গ্রহণ করে। দেশপ্রেমের আদর্শমন্ত্রে দিক্ষিত একজন অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পঁচাত্তর বৎসর জীবনের প্রায় পঞ্চাশ বছর নিদারুণ আর্থিক দুঃখ কষ্টের মধ্যে থেকেও শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলা করিনি। দেশপ্রেমের মহান ভাবনা নিয়ে শিক্ষার সেবায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উৎসর্গ করে দারিদ্র্যের অন্তর্দহনে দগ্ধ হয়েও প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় কিছু পরিবর্তনের স্বপ্ন। ছিল শিক্ষকদের জীবনমান উন্নতির স্বপ্ন। স্বাধীনতার এত বছরেও জাতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রতিটি সরকারের নিদারুণ অন্যায় ,অবিচার, উপেক্ষা, চরম বৈষম্যের দু:সহ যাতনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দ্বিধা করিনি। কুন্ঠাবোধ করিনি শিক্ষকতার দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে শিক্ষকদের লড়াইয়ের মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে । অবসর জীবনে দু:খ কষ্ট সঙ্গি করেও আজো শিক্ষকদের জীবনমান উন্নতির স্বপ্ন মুছে ফেলতে পারিনি। হৃদয়ের দমিত ব্যথা চেপে রাখতে পারিনা যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের পৌনে আট লক্ষ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় বাজেটে শিক্ষার জন্য গতানুগতিক বাজেট বরাদ্দ। সত্যিকারভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার আসল ক্ষেত্রে ফাঁকি দিয়ে স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট দেশ গড়ার স্বপ্ন অলীক স্বপ্নবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়। বৈষম্যের গোড়ায় গলদ রেখে টেকসই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষের পুরাতন সংগঠনের বর্তমান নেতৃবৃন্দ দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ও বৈষম্য দূর করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। শিক্ষক সমিতি বর্তমান নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এই জন্য যে তারা ফেইসবুকে শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ না থেকে সত্যিকারভাবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন এবং টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের মধ্যে প্রবল ও শক্তিশালী কম্পন তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত হয়ে নেতৃবৃন্দের কন্ঠস্বরে জাতীয়করণ ও বৈষম্য অবসানের সেই ক্ষুব্ধ প্রতিধ্বনিই শুনতে পেলাম। বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে অধ্যক্ষ বজলুর রহমান মিয়া ও শেখ কাওসার আহমেদ সহ বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের প্রতিনিধিগন ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি সফল করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। আমি শিক্ষকদের আন্দোলনের সাফল্য কামনা করছি। সুশৃঙ্খল শক্তিশালী শিক্ষক আন্দোলন শিক্ষক সমাজের বড় শক্তি, বড় হাতিয়ার। শিক্ষকদের মধ্যে নতুন জাগরণ সৃষ্টির সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য কেন্দ্র ,অঞ্চল ও জেলা নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন। আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক। সরকারের প্রতি আহ্বান শিক্ষকদের দাবির প্রতি মনোযোগী হোন। আলোচনায় ডাকুন। সন্তোষজনক ফয়সালায় আসুন । আন্দোলন নিয়ে কটুক্তি করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুষ্প শোভিত, সৌরভ মুখরিত সৃজন কারখানা।