4:23 pm , July 8, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। শনিবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১১০ জন ডেঙ্গু রোগী নতুন করে ভর্তি হয়েছে। এনিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় সোয়া ৪শ ডেঙ্গু রোগী বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে বলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জনা গেছে। শনিবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ভর্তিকৃত ১১০ জন রোগীর মধ্যে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রায় ৫০ জন এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ৯জন রয়েছেন। এছাড়া পটুয়াখালীতে ২৩, ভোলাতে ৮, পিরোজপুরে ১০ এবং বরগুনাতে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও ঝালকাঠীতে নতুন কোন ডেঙ্গু রোগী ছিলনা।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্যমতে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বরিশাল ও পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে প্রায় ২শ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত বছর বরিশাল সহ সন্নিহিত এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ যথেষ্ট কম থাকলেও ২০১৯ ও ২০২১ সালে এ অঞ্চলে তার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। আবার চলতি বছর এ পর্যন্ত মশাবাহী এ রোগের প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। গত ১ জানুয়ারী থেকে ৮ জুলাই সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তিকৃত প্রায় হাজার খানেক ডেঙ্গু রেগীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর একমাত্র ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
দক্ষিনাঞ্চলে গত ৬ মাসে যে প্রায় হাজার খানেক রোগী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তার ৪৭৮ জনই বরিশালে। এরমধ্যে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩শ। এছাড়া জেলার অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতেও প্রায় দেড়শ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ অন্যান্য সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১৮৩, ভোলাতে ৭০, পিরোজপুরে ৮০ ও বরগুনাতে ৮৭ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। তবে অবিশ^াস্যভাবে বরিশাল মহানগরীর পাশের ঝালকাঠী জেলায় চলতি বছর কোন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি।
বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায়ই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। পাশাপাশি বিগত ঈদ উল আজহার সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডেঙ্গুর জীবানু নিয়ে ঈদ করতে বাড়ীতে এসে অনেক মানুষই জ¦র সহ নানা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে একারণেই গত এক সপ্তাহে বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি উত্তরনে বরিশাল সিটি করপোরেশন সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো পৌরসভাকে অবিলম্বে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও মশক নিধন সহ এর বংশ বিস্তার প্রতিরোধে যা কিছু করণীয় অবিলম্বে তা অনুসরন ও বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই বলে জানান হয়েছে। সামনে বৃষ্টি বাড়বে। সুতরাং বৃষ্টির হাত ধরে মশার বংশ বিস্তারও ঘটবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একবার কোন এলাকায় এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন কষ্টকর হয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকরা। বরিশাল মহানগরীতে মশা নিয়ন্ত্রন ও নির্মূল কার্যক্রম নিয়ে হতাশা রয়েছে নগরবাসীর মাঝেও। প্রায় ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এ মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য যে মাত্র ১২টি ফগার মেশিন রয়েছে তা দিয়ে শুধুমাত্র কিছু ভিআইপি এলাকা ও নগরীর কেন্দ্রস্থল ছাড়া কোথাও মশক নিধন হচ্ছেনা। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিছু হ্যান্ড-স্প্রেয়ার থাকলেও তার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সুপারভাইজারদের নিজম্ব মর্জির ওপর নির্ভরশীল বলেও অভিযোগ রয়েছে।