৪ বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি ॥ খুনের মাস্টার মাইন্ড স্ত্রী লিজা ॥ সাথে ছিলো চার সহযোগী ৪ বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি ॥ খুনের মাস্টার মাইন্ড স্ত্রী লিজা ॥ সাথে ছিলো চার সহযোগী - ajkerparibartan.com
৪ বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি ॥ খুনের মাস্টার মাইন্ড স্ত্রী লিজা ॥ সাথে ছিলো চার সহযোগী

4:05 pm , July 6, 2023

চাঞ্চল্যকর দলিল লেখক রিয়াজ হত্যা

হেলাল উদ্দিন ॥ দীর্ঘ ৪ বছর পর নিজ ঘরে খুন হওয়া দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ (৪৫) খুনের কুল কিনারা খুজে পেয়েছে তদন্ত কারী সংস্থা সিআইডি। এই খুনের সাথে রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা জড়িত রয়েছে।
বাদীসহ সবার এমন সন্দেহ থাকলেও থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ তদন্তে বারবার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। লিজাকে বাদ দিয়ে চার্জশীট দিয়েছে ওই দুটি তদন্তকারী সংস্থা। ৪ বছরে থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের বছরের পর বছর ধরে তদন্ত এবং পৃথক পৃথক চার্জশীট, ঘটনার নানা মেরুকরন, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়াসহ নানা ঘটনার দৃশ্যায়িত হয়েছে এই হত্যা কান্ডের তদন্ত নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ নম্বর তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে বরিশাল সিআইডি ঘটনার অভ্যন্তরে গিয়ে প্রায় ধামাচাপা পড়ে যাওয়া আসল ঘটনা উদঘাটন করেছে। দক্ষ ও পেশাদারিত্বের প্রমান রেখে সংস্থাটির তদন্তকারী দল এই খুনের সাথে স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজার সম্পৃক্ততা পেয়েছে। যে কারনে তিনিসহ মোট ৫ জন কে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নাসির উদ্দিন মল্লিক। তিনি চলতি বছরের ২২ মে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত ২ তে চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে বলা হয়েছে নিহত দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা আদালতে মিথ্যা জবানবন্দী প্রদান করে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। যা দন্ড বিধি ২০১ ধারার অপরাধ সংগঠন করেছে। চার্জশীটে আরো উল্লেখ করা হয়েছে আমিনা আক্তার লিজার বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে সত্য প্রমানিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪৫৭,৩৮০,৩০২,২০১,৪১১ এবং ৩৪ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করিলাম।
মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী এ্যাড, কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন আমিনা আক্তার লিজার সাথে শাকিল,জলিল সিকদার,রায়হান,নাইম হোসেন চৌকিদারকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন সত্যি বলতে মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘটন করা একটু জটিল ছিলো। কারন আমাদের আগেও দুটি সংস্থা এ মামলার তদন্ত করেছে। তিনি বলেন মামলা সিআইডিতে তদন্তভার দেওয়ার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় ঝালকাঠি সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ এহসানুল হক কে। তিনি তদন্ত চলাকালীন সময়ে অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার পর চলতি মাসের মে মাসে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় তাকে। এরপর তদন্তের বাকি কাজ সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জশীট দাখিল করি।
পুলিশি তদন্তে হত্যাকান্ডের বিবরনঃ স্ত্রীর পরকীয়ায় বাধা হওয়ার কারণে দলিল লেখক রিয়াজ কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকা-ে স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা (৩০) ও রিয়াজেরই সহযোগী মাসুমসহ আরও বেশ কয়েকজন অংশ নেয়।
পুলিশ জানায়, মাসুম ও রিয়াজের স্ত্রী লিজার সঙ্গে হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক ছিল। পুলিশের হাতে আটক লিজাও আদালতে এমনই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ১৮ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর রাজধর গ্রামের নিজ ঘরে খুন হন দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ। পুলিশ জানায়, হত্যাকা-ের পর রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় রিয়াজের দ্বিতীয় এবং লিজার তৃতীয় বিয়ে ছিল এটি।
আগের দুই স্বামীর কাছ থেকে জমি এবং অর্থ হাতিয়ে লিজা তাদের তালাক দেয়। দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দিয়ে চার বছর আগে লিজা রিয়াজকে বিয়ে করে। চার বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় তাদের সংসার জীবনে অশান্তি লেগে ছিল। একপর্যায়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসে এই হত্যাকা-ের সব তথ্য। পুলিশ জানায়, হত্যাকান্ডের মাস তিনেক আগে রিয়াজের সহকারী মাসুমের সঙ্গে লিজার পরিচয় হয়। রিয়াজের কাছে দলিল লিখন কাজে প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে যাওয়া-আসা করত মাসুম। এই যাওয়া-আসাকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে লিজার সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু সম্প্রতি এই সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলেন রিয়াজ। এ নিয়ে লিজাকে গালাগাল করেন রিয়াজ।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিজা পরকীয়া প্রেমিক মাসুমের সঙ্গে যুক্তি করে স্বামীকে হত্যার পাশাপাশি বরিশাল নগরীর পলাশপুরে রিয়াজের মালিকানাধীন ১৭ শতাংশ জমি আত্মসাতের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুসারে ১৮ এপ্রিল ঘটনার রাতে লিজা দুধের সঙ্গে দুটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে স্বামীকে খাওয়ায়। এতে রিয়াজ অচেতন হয়ে পড়লে রাত আড়াইটার দিকে লিজা, মাসুম ও তাদের সহযোগী হালিম ওরফে হাইল্যা ধারালো অস্ত্র ও ছুরি দিয়ে গলাকেটে এবং কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে ডাকাতির নাটক সাজাতে লিজা ঘরের মাটির ভিটিতে সিঁধ কাটে।
স্ত্রীর মুখে স্বামীকে হত্যার এই লোমহর্ষক বর্ণনা বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকেও হতবাক করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও গ্রহণ করে। এই হত্যাকা-ের ঘটনায় ১৯ এপ্রিল নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ১৮ই এপ্রিল দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাইয়ে নিজ ঘরে খুন হন দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT