4:02 pm , July 5, 2023
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পুরো মৌসুম জুড়েই কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে ইতোমধ্যে কিছুটা সংশয় দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলও পরিস্থিতির প্রতি নিবিড় নজরদারীর কথা জানিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। দেশে বোরো প্রধান একক বৃহত্তম খাদ্য ফসল হলেও প্রায় ১১ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এখনো আমন প্রধান দানাদার ফসল।
কিন্তু বৃষ্টির আভাবে মৌসুমের শুরুতে বরিশাল অঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকাতেই বীজতলা তৈরিই শুরু করা যায়নি। আমনের বীজ অপেক্ষাকৃত লম্বা এবং বোরো ধানের চেয়ে দীর্ঘ সময়ে পরিপক্ক হবার পরে তা উত্তোলন ও রোপন করতে হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বীজতলা তৈরীতে বিলম্ব আমনের আবাদকেই বেশ কিছুটা বিলম্বিত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বরিশাল কৃষি অঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকার কৃষকরা। ফলে উৎপাদনও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে প্রায় ৫৬ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের আমন আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৮ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ৮ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ টন আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। ডিএই’র মতে, গত বছর দেশে ৫৬ লাখ ৫২ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৪ লাখ টন আমন চাল ঘরে তোলেন কৃষি যোদ্ধারা। যারমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষকরা ৮ লাখ ৬২ হাজার ৭৬৮ হেক্টর জমি থেকে প্রায় ২২ লাখ টন আমন চাল ঘরে তোলেন।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা গত অর্থ বছরের খরিপ-১,খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে বিগত বর্ষা মৌসুমেও বছর জুড়ে বৃষ্টির অভাবের পরে মৌসুমের শেষভাগে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে প্রধান খাদ্য ফসল আমন ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়লেও সব দুর্যোগ অতিক্রম করে এ অঞ্চলে প্রায় ২২ লাখ টন আমন চাল ঘরে তুলেছিলেন কৃষিযোদ্ধারা।
গত ৪ মাসে বরিশাল অঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। তবে বৃষ্টিবিহীন জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারীর পরে মার্চে স্বাভাবিক ৫৩ মিলিমিটারের স্থলে বরিশালে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এপ্রিলে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটারের স্থলে মাত্র ১০.৪ মিলি বৃষ্টি হয়েছে বরিশালে। মে মাসে বরিশালে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে বাস্তবে ৪২% কম, ১৫১ মিলি বৃষ্টি হয়েছে। আর সদ্য সমাপ্ত জুনে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে ৩৫.৮% কম, ৩১০ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। এমনকি চলতি জুলাই মাসেও বরিশাল সহ সারা দেশেই স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে। চলতি মাসে স্বাভাবিক ২২ দিনে বরিশাল অঞ্চলে ৫১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার কথা আবহাওয়া বিভাগের হিসেবে। মূলত বরিশাল অঞ্চলে আমন ফসল এখনো প্রায় পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর। যদিও ‘ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি’ ইতোমধ্যে বন্যা ও খড়া সহিষ্ণু কয়েকটি উন্নত মানের আমন ধান-এর বীজ উদ্ভাবন করেছে। কিন্তু সেসব ধানের বীজ এখনো এ অঞ্চলের কৃষকদের দোঁড় গোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়নি। এসব ধানের বীজ যেমন দুস্প্রাপ্য, তেমনি এর আবাদ কৌশলও বেশীরভাগ কৃষিযোদ্ধাদের কাছে এখনো অনেকটাই অজ্ঞাত।