ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে কাঁদলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ॥ পূর্বের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলেন প্রকৌশলী ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে কাঁদলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ॥ পূর্বের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলেন প্রকৌশলী - ajkerparibartan.com
ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে কাঁদলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ॥ পূর্বের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলেন প্রকৌশলী

3:43 pm , July 4, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কোরবানীর ঈদের কয়েক দিন আগে বরিশালসহ সারাদেশে আলোচিত একজন উপজেলা প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা। কথা উঠেছিলো এই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিলে জোড় পূর্বক উপজেলা প্রকৌশলীর কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। যতক্ষন স্বাক্ষর দিচ্ছিলো না ততক্ষন পর্যন্ত উপজেলা প্রকৌশলীকে একটি ব্যাংকে আটকে রাখা হয়েছিলো। এমনকি সরকারী কাজে বাধা দেওয়ার কারনে গ্রেফতারেরও হুমকি দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত ফাতিমা। উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ শহিদুল ইসলাম তখন গণমাধ্যমের কাছে দাবী করেছিলেন ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাবুগঞ্জে প্রায় ২ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ আসে। যে টাকা ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিলে আত্মসাৎ করার জন্য তাকে বাদ দিয়ে যৌথ একাউন্ট করেছে।
ঘটনার দুদিন পরই  ঈদের ছুটি হয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষ কারো কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ঈদের ছুটির পর  গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবী ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান অবিচার করেছেন। অপরদিকে উপজেলা প্রকৌশলীর মিথ্যাচার ও নেপথ্যে কোন মহলের ইন্ধন ও ষড়যন্ত্র আছে বলে ধারণা করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এমন দাবী করে সাংবাদিকদের সামনে তিনি অঝোরে কেঁদেছেন।
গতকাল সকালে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদে সাংবাদিকদের সামনে তার পূর্বের দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করেন উপজেলা প্রকৌশলী। তিনি বলেন, তখন উত্তেজিত অবস্থায় হিসেব নিকেশ না করে ২ কোটি টাকার কথা বলেছিলেন। আসলে সেটা সঠিক নয়। প্রকৃত পক্ষে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বিশেষ বরাদ্ধ আসে ৫০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় জুনের শেষ সময়ে ৫০ লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করে। আমাদের হাতে সময় ছিলো ২৬ জুন পর্যন্ত। কাজ করে বিল উত্তোলনের জন্য যথেষ্ট সময় ছিলো না এটি। তাই আমার প্রস্তাব ছিলো ইউএনও,উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আমি মিলে যৌথ একাউন্ট করে টাকাটা রেখে দিব। যাতে করে টাকাটা ফেরত না যায়। পরে আমরা প্রকল্প করে কাজ করিয়ে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করব। কিন্তু আমার এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান যৌথ একাউন্ট করার পরিকল্পনা করেন। যা আমার কাছে টাকাটা খরচের জন্য নিরাপদ মনে হয়নি।  তিনি বলেন, ঘটনার দিন এক গণমাধ্যম কর্মী ব্যাংক থেকে আমাকে ফোন করেন তার বিজ্ঞাপনের একটি বিলে সমস্যা হয়েছে। তাই আমি ব্যাংকে গিয়েছিলাম। এর কিছুক্ষন পরেই দেখি ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যাংকে প্রবেশ করেছেন। পরে তারা আমাকে সরকারী কাজে বাধাসহ নানা অভিযোগ তুলে এক পর্যায়ে গ্রেফতারেরও হুমকি দেন। তিনি বলেন,  আমার ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান শতভাগ সৎ লোক। এটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু ব্যাংক একাউন্টে আমাকে না রাখাটাই যত বিরোধের কারন। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি আমাকে বদলী করে দেওয়ার জন্য। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমাকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে রাখেনি তাই এই টাকা খরচ ও বিল প্রদানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক দুলাল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী উপজেলার আয়-ব্যয় কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও। তারপরও যেহেতু উপজেলা প্রকৌশলী ব্যাংক হিসাবে থাকতে চেয়েছে আমি রাজি হয়েছি। এমনকি আমি তার দেওয়া ব্যাংক হিসেব বইতে স্বাক্ষরও দিয়ে দিয়েছি। ঘটনার দিন ছিলো টাকা ফেরত যাওয়ার আগের দিন। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিলো ওই ব্যাংক হিসাব খুলে টাকাটা রেখে দিব। কিন্তু দুপুর পার হতে চললেও হিসাব খোলার জন্য ফোন করেও উপজেলা প্রকৌশলীকে পাচ্ছিলাম না। পরে খবর পাই যে তিনি ব্যাংকে আছেন। খবর পেয়ে আমি এবং ইউএনও ব্যাংকে যাই। তখন তাকে ব্যাংকে অবস্থানের কারন জানতে চাইলে উভয়েই একটু উত্তেজিত হই। কিন্তু বিষয়টি ব্যাংকে বসেই সমাধান হয়ে যায়। পরে মিডিয়ায় দেখতে পাই উপজেলা প্রকৌশলী  আমি এবং ইউএনও সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। যা আমাদের ব্যথিত করেছে। এসময় কেঁদে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে এই বিশেষ বরাদ্দ এনেছি। আর এই টাকা  ফেরত যাক তা কোনভাবেই আমরা চাইনি। তাই শেষ সময়ে একটু তাড়াহুড়ো হয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী ঘটনাটি অন্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, বিশেষ বরাদ্দ এসেছে ৫০ লাখ অথচ প্রকৌশলী তখন বলেছেন ২ কোটি। এখন আবার আপনাদের কাছে হিসেব না দিতে পেরে নিজের আগের দেওয়া বক্তব্য থেকে সরে আসলেন। এটা কি ছেলে খেলা। তার বক্তব্যের কারনে সারা দেশের মানুষের কাছে আমি ও উপজেলার মানুষ হেয় হয়েছি। মিডিয়া ট্রয়াল হয়েছে। এই মিথ্যা বক্তব্যের দায়ভার তাকেই নিতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন,  আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি উপজেলা প্রকৌশলী একজন মানষিক রোগী। তাকে আমি বলেছি আমার সাথে ভারত গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। ইমদাদুল হক বলেন, আমার সন্দেহ হয়েছিলো উপজেলা প্রকৌশলী জুনের শেষ দিকে গিয়ে প্রকল্পগুলো নিয়ে একটি ঝামেলা করবেন। তাই জুনের ৭ তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম তরান্বিত করার জন্য ও সার্বিক ঘটনার বর্ননা দিয়ে একটি আবেদন করেছিলাম। আর ঘটনাটি ঘটে ২০ তারিখের পরে। আমার ধারনাই সত্যি হলো। শেষ পর্যন্ত উনি ঝামেলাই সৃষ্টি করলেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT