3:56 pm , July 2, 2023
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ এভাবেই প্রকাশ্যে এক তরুণীকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে নির্যাতন করছে বেশ কয়েকজন যুবক। এদের মধ্যে দুই যুবক তরুণীকে সজোরে লাথি মারছে। তিনজন নারী সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করা হয়। দূর থেকে এই হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। একজন নারীর উপর এই ধরণের নির্যাতনের ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর পরিচয় মিলেছে। তার নাম জান্নাতুল মাহি লাভনী। নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘিয়া এলাকার বাসীন্দা লাল মিয়ার মেয়ে জান্নাতুল আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আইন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত ২৬ জুন বিকেল ৪টায় নিজ বাসার সামনেই নির্যাতনের শিকার হন লাভনী। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই ধরণের একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটার পরেও পুলিশ কোন গুরুত্ব দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছড়িয়ে পড়া ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে লাভনীসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন মহিলার সাথে তর্কে জড়ান কতিপয় যুবক। এক পর্যায় জান্নাতুল মাহি ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে মোবাইল ছিনিয়ে নেয় সাদা গেঞ্জি পরিহিত এক ব্যক্তি। মোবাইল ফেরত পেতে ওই ব্যক্তির গেঞ্জি ধরে টানাহেছড়া শুরু করেণ লাভনী। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে অন্য যুবকরা এসে তাকে টেনে নিয়ে মাটিতে ফেলে নির্যাতন শুরু করে। এ সময় জান্নাতুলের মাসহ অন্য দুই নারী সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
নির্যাতনের শিকার জান্নাতুল বলেন, আমাদের বাসার সামনেই সিটি কর্পোরেশনের ম্যাপভুক্ত চলাচলের রাস্তা রয়েছে। যুগ যুগ ধরেই এলাকার মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে আসছে। সোমবার বিকেলে আমাদেরই প্রতিবেশী সাবেক সার্ভেয়ার মোতালেব হাওলাদার তার লোকজন নিয়ে এসে চলাচলের সেই পথে দেয়াল দিচ্ছিলেন। কী কারণে হঠাৎ দেয়াল দিচ্ছেন তা জানতে ঘর থেকে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করি। এ সময় মোতালেব ও তার সহযোগী শাওন, সজল, মানিকের নেতৃত্বে ১৭-১৮ জনের একটি দল এসে গালিগালাজ করতে করতে প্রথমে আমার হাতের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এরপরই লাথি মেরে আমাকে মাটিতে ফেলে নির্যাতন শুরু করে।
তিনি বলেন, আমার শরীরে থাকা জামা-কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে। শরীরের বিভিন্নস্থানে অশ্লীলভাবে হাত দেয়। মারধরে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে হামলাকারীরা আমাকে মাটিতে ফেলে রাখে। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে মোতালেব সার্ভেয়ারের সন্ত্রাসীরা গাড়ি আটকে দেয়। আমাকে যেন হাসপাতালে নিয়ে কোনো চিকিৎসা না দেওয়া হয় সেজন্য তারা গাড়ি আটকে দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িটি ছাড়িয়ে দেয়। সোমবার বিকেলে হাসপাতালে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে গেছে সার্ভেয়ারের লোকজন। বলে গেছে, এলাকায় থাকতে হলে তাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো কথা না বলি।
নির্যাতনের শিকার লাভনীর মা রুনু বেগম বলেন, আমার মেয়েকে মারধর করতে করতে অজ্ঞান করে মাটিতে ফেলে রাখে মোতালেব সার্ভেয়ারের লোকজন। আমাকেও তারা মারধর করে। পুলিশ এসে হামলার সকল প্রমাণাদি পায়। কিন্তু তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আমি সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করি। তখন থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, মারধরের ভিডিও থাকলে তার কাছে নিয়ে যেতে। তিনি তা দেখে তারপরে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন। পরে মঙ্গলবার মামলা গ্রহণ করলেও আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। রুনু বেগমের অভিযোগ তার সামনেই মেয়েকে নির্যাতন করেছে সন্ত্রাসীরা। তাদের সামনে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন।
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানার ওসি হেলাল উদ্দীন বলেন ‘ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। সঠিকভাবে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, চাকরিচ্যুত সার্ভেয়ার মোতালেব হাওলাদারের বিরুদ্ধে অপরের জমি দখলের পুরনো অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে কয়েকবার দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, এলাকাভিত্তিক বাহিনী গঠন করে তিনি অন্যের জমি দখল করেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিয়েও লাভ হয়না।